বড়লেখা প্রতিনিধি
জুন ৩০, ২০২১
১০:২৭ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ৩০, ২০২১
১০:২৭ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় হলি লাইফ স্পেশালাইজড হসপিটালে চিকিৎসকের অবহেলায় সুমা রানী দাস (২১) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে তার স্বামী আদালতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গত ২৮ জুন সুমার স্বামী মোহন দে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগটি (সিআর ১৫৩/২১) দায়ের করেন। অভিযোগে হলি লাইফ স্পেশালাইজড হসপিটালের পরিচালক মৌসুমী কিবরিয়া ও একই হাসপাতালে কর্মরত তার স্বামী চিকিৎসক নূর নবী রাজু ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপক বিপুল কান্তি দাসের নামোল্লেখ করা হয়েছে।
আদালত অভিযোগটি তদন্ত করে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ২০ জুন সকালে সুমা রানী দাস কীটনাশক পান করেন। ওইদিন দুপুরে তাকে হলি লাইফ স্পেশালাইজড হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরদিন ২১ জুন তিনি মারা যান। সুমা বড়লেখা পৌরসভার তেলিগুল এলাকার বাসিন্দা মোহন দে'র স্ত্রী।
অভিযোগে বলা হয়েছে, সুমা রানী দাস মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। গত ২০ জুন সকালে তিনি কীটনাশক পান করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে তার স্বামী মোহন দে ও প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। ৪ নম্বর সাক্ষী অরুনাভ দে রাজুর সঙ্গে বড়লেখা পৌরশহরের হলি লাইফ স্পেশালাইজড হসপিটালের ব্যবস্থাপক বিপুল কান্তি দাসের পূর্বপরিচয় থাকায় তিনি তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এ সময় বিপুল কান্তি দাস জানান, তাদের এখানে ভালো চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি আছে এবং সুমাকে দ্রুত হলি লাইফ হসপিটালে নিয়ে যেতে বলেন। তখন সুমার স্বজনরা তাকে হলি লাইফ স্পেশালাইজড হসপিটালে ভর্তি করেন। এরপর অভিযুক্তরা সুমাকে ভর্তি করে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার স্বামী মোহন দে’কে জানান, তাকে সিলেটে নিয়ে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে পরদিন ২১ জুন তারা (অভিযুক্তরা) সুমাকে সিলেটে নিয়ে যেতে বলেন। এ সময় সুমার স্বামী মোহন দে তাদের (অভিযুক্তদের) কাছে ছাড়পত্র চাইলে তারা তাকে গালিগালাজ করেন এবং হুমকি-ধমকি দেন। পরে মোহন নিরুপায় হয়ে অ্যাম্বুলেন্স এনে সুমাকে সিলেটে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হন। এ সময় সুমার অবস্থার ক্রমেই অবনতি হতে থাকে। পরে সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সুমা রানী দাসের স্বামী মোহন দে আজ বুধবার (৩০ জুন) দুপুরে বলেন, হলি লাইফ স্পেশালাইজড হসপিটালের ডাক্তাররা (অভিযুক্তরা) আমাকে বলেছেন তারা আমার স্ত্রী সুমাকে সুস্থ করে তুলবেন। তাকে সিলেটে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি তাদের ওপর বিশ্বাস করে সুমাকে এখানে (হলি লাইফ হসপিটাল) ভর্তি করি। সিলেট নিয়ে যাইনি। তারা আমার স্ত্রীকে ঠিকমতো চিকিৎসা দেয়নি। অবহেলা করেছে। এজন্য তার অবস্থা খারাপ হয়ে সে মারা গেছে। তা না হলে হয়তো সিলেটে নিয়ে গেলে তাকে বাঁচানো যেত। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে হলি লাইফ স্পেশালাইজড হসপিটালের পরিচালক মৌসুমী কিবরিয়ার স্বামী চিকিৎসক নূর নবী রাজুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনি হাসপাতালের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বললে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
হলি লাইফ স্পেশালাইজড হসপিটালের ম্যানেজার বিপুল দাস হুমকি-ধমকির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ওই নারীর (সুমা) অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমরা মানবিক কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। পরদিন আমরা তাকে সিলেটে নিয়ে যেতে বলি। কোনো হুমকি-ধমকি দেইনি।
এ ব্যাপারে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সহকারী আইন কর্মকর্তা (এপিপি) গোপাল চন্দ্র দত্ত বুধবার দুপুরে বলেন, হলি লাইফ স্পেশালাইজড হসপিটালের চিকিৎসকের অবহেলায় সুমা রানী দাস নামের এক নারী মারা গেছেন মর্মে অভিযোগ এনে তার স্বামী মোহন দে হাসপাতালটির পরিচালকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। আদালত অভিযোগটি তদন্ত করে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এজে/আরআর-০৩