বড়লেখায় ঘুমন্ত নারীর গায়ে আগুন, স্বামী ও শাশুড়ি গ্রেপ্তার

এ.জে লাভলু, বড়লেখা


জুলাই ০৪, ২০২১
০৭:০৭ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ০৪, ২০২১
০৭:০৮ অপরাহ্ন



বড়লেখায় ঘুমন্ত নারীর গায়ে আগুন, স্বামী ও শাশুড়ি গ্রেপ্তার

স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের নির্যাতন সইতে না পেরে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন রহিমা বেগম (২০)। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। অভিযোগ উঠেছে, বাবার বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় রহিমার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন তার স্বামী। এতে রহিমার হাত-মুখসহ শরীরের প্রায় ৬৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রোববার (৪ জুলাই) ভোরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশ রহিমার স্বামী অভিযুক্ত শিপন আহমদ ও শাশুড়ি আনুরি বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের রফিক উদ্দিনের মেয়ে রহিমা বেগমের সঙ্গে প্রায় তিন বছর আগে একই ইউনিয়নের আরেঙ্গাবাদ গ্রামের মুকুল মিয়ার ছেলে শিপন আহমদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রহিমার সঙ্গে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের ঝগড়া হতো। এতে স্বামী ও তার স্বজনরা রহিমাকে নির্যাতন করত। বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কয়েকবার সমাধান করে দিলেও কোনো লাভ হয়নি। এরপরও তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকত।

স্বামী ও তার স্বজনদের নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় সাত মাস আগে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি হরিপুর গ্রামে চলে আসেন রহিমা। সন্তানকে দেখার জন্য প্রায়ই শ্বশুরবাড়িতে আসতেন রহিমার স্বামী শিপন আহমদ। গতকাল শনিবার (৩ জুলাই) শিপন সন্তানকে দেখতে শ্বশুরবাড়িতে আসেন। রাতে সেখানে ঘুমান তিনি। কিন্তু রবিবার ভোর ৫টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রী রহিমা বেগমের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন শিপন। ঘটনার পরই তিনি পালিয়ে যান।

রহিমার চিৎকার শুনে স্বজনরা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে অভিযুক্ত শিপনকে গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে পুলিশ। রোববার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার পশ্চিম হাতলিয়া এলাকা থেকে শিপনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে বিকেলে শাশুড়ি আনুরি বেগমকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাহেদুল ইসলাম সুমন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রহিমা বেগমের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন তার স্বামী শিপন আহমদ। মেয়েটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে সিলেটের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রহিমার স্বামী শিপন ও তার পরিবারের লোকজন প্রায়ই রহিমাকে নির্যাতন করতেন। বিষয়টি কয়েকবার বসে আমরা সমাধান করে দিয়েছি। এর পরও তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় সাত মাস আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে চলে আসেন রহিমা। তাদের পরিবারে একটি সন্তান রয়েছে। রহিমার স্বামী শিপন তাকে দেখতে আসত। ঘটনার রাতেও শিপন শ্বশুরবাড়িতে এসে থেকেছে। ভোরবেলা সে স্ত্রী রহিমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। 

বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডা. মো ফয়জুল ইসলাম রবিবার বিকেল ৩টায় বলেন, সকাল ৭টার দিকে রহিমা বেগমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার হাত-মুখসহ শরীরের ৬৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে রহিমাকে তার স্বামী পুড়িয়েছে। ঘটনার পরই পুলিশ অভিযুক্ত শিপন ও তার মাকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় রহিমার ভাই থানায় মামলা করেছেন।  

 

এজে/আরআর-০৩