বড়লেখায় স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা, স্বামীর স্বীকারোক্তি

বড়লেখা প্রতিনিধি


জুলাই ০৫, ২০২১
০৯:৪৭ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ০৫, ২০২১
০৯:৪৭ অপরাহ্ন



বড়লেখায় স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা, স্বামীর স্বীকারোক্তি

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ঘুমন্ত অবস্থায় রহিমা বেগমের (২০) গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তার স্বামী শিপন আহমদ। সোমবার (৫ জুলাই) দুপুরে বড়লেখার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হরিদাস কুমারের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।

জবানবন্দিতে শিপন আদালতকে জানিয়েছেন, পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রহিমার সঙ্গে প্রায়ই তার ঝগড়া হতো। এ সময় তিনি স্ত্রীকে মারধর করতেন। এ কারণে ৭ মাস আগে রহিমা একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তার বাবার বাড়ি হরিপুর গ্রামে চলে যান। সন্তানকে দেখতে তিনি (শিপন) প্রায়ই শ্বশুরবাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। গত শনিবার রাতে তিনি তার সন্তানকে দেখতে শ্বশুরবাড়িতে যান। পরে সেখানে রাত্রিযাপন করেন। রবিবার ভোরে ঘুমন্ত অবস্থায় রহিমা বেগমের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তিনি পালিয়ে যান।

জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত শিপনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। 

বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, আদালতে রহিমার স্বামী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি কী কারণে স্ত্রী রহিমার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন, সেসব বর্ণনা দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ তাকে কারাগারে পাঠায়।

এদিকে, অগ্নিদগ্ধ রহিমা বেগমকে রবিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন তার ভাই রাজু আহমদ। তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমার বোনের অবস্থা খুব খারাপ। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন তার হাত-মুখসহ শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় সাত মাস আগে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন রহিমা বেগম। রবিবার ভোররাতে বাবার বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় রহিমার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তার স্বামী শিপন আহমদ। ঘটনার পরই তিনি পালিয়ে যান। আগুনে রহিমার হাত-মুখসহ শরীরের প্রায় ৬৩ শতাংশ পুড়ে যায়। রহিমার চিৎকার শুনে স্বজনরা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্লে কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছেন। রহিমা বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের রফিক উদ্দিনের মেয়ে।

ঘটনার দিন (রবিবার) দুপুরে রহিমার ভাই রাজু আহমদ বাদী হয়ে শিপন আহমদসহ তিনজনের নামোল্লেখ করে বড়লেখা থানায় মামলা করেছেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ওইদিন বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার পশ্চিম হাতলিয়া এলাকা থেকে শিপনকে এবং বিকেলে রহিমার শাশুড়ি আনুরি বেগমকে গ্রেপ্তার করে। শিপন আহমদ উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের আরেঙ্গাবাদ গ্রামের মুকুল মিয়ার ছেলে।


এজে/আরআর-১৩