বড়লেখা প্রতিনিধি
জুলাই ০৭, ২০২১
০৯:০৬ অপরাহ্ন
আপডেট : জুলাই ০৭, ২০২১
০৯:২৭ অপরাহ্ন
কাতার থেকে কয়েকমাস আগে দেশে ছুটিতে এসেছি। আবার সেখানে (কাতারে) ফিরে যাওয়ার সময় গনিয়ে আসছে। কিন্তু করোনার টিকা না দিয়ে সেখানে যেতে পারছি না। কীভাবে করোনার টিকার নিবন্ধন করবো তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এখন সেই দুশ্চিন্তাটা এখন কেটেছে। কারণ আমি এখন অনেকটা সহজে টিকার নিবন্ধন করতে পেরেছি। এতে কোনো ভোগান্তি হয়নি। তা নাহলে আমাকে জেলা সদরে গিয়ে টিকার নিবন্ধন করতে হতো। এজন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ।
বড়লেখা উপজেলার নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রে করোনা টিকার নিবন্ধন করে আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন কাতার প্রবাসী সুহেল আহমদ। তার বাড়ি ওই ইউনিয়নের জামকান্দি গ্রামে।
শুধু সুহেলই নয়, তার মতো অনেক প্রবাসীরা নিজ ইউনিয়নেই কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়াই টিকার নিবন্ধন করতে পারছেন। এতে প্রবাসী অথবা প্রবাসে গমনইচ্ছুক কাউকেই টিকার নিবন্ধনের জন্য যেতে হচ্ছে না জেলা সদরে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উদ্বোধনের পর গত তিনদিনে ৬১৮ জন প্রবাসী করোনার টিকার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। প্রবাসীরা জানিয়েছেন, বড়লেখা উপজেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগে তাদের সময় ও টাকা সাশ্রয়ের পাশাপাশি ভোগান্তি দূর করেছে।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দশটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তারা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টিকার নিবন্ধন করছেন।
এছাড়া একটি ভ্রাম্যমাণ টিকা নিবন্ধন সেবা দল বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রবাসীদের টিকার নিবন্ধন করে দিচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করছেন বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী।
উদ্বোধনের দিন রোববার ৪ জন, পরদিন সোমবার ৪০০ জন ও মঙ্গলবার ২১৪ জন প্রবাসী করোনার টিকার নিবন্ধন করে।
এর মধ্যে বর্ণি ইউনিয়নে ৭৪ জন, দাসেরবাজার ইউনিয়নে ৩৭ জন, নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নে ৮৪ জন, উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নে ৩৭ জন, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নে ৬৭ জন, বড়লেখা সদর ইউনিয়নে ৪১ জন, তালিমপুর ইউনিয়নে ৭২ জন, দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে ৬৭ জন, সুজানগর ইউনিয়নে ৫৫ জন, দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নে ৪৩ জন ও বড়লেখা পৌরসভায় ৪১ জন নিবন্ধন করেছেন।
নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা শরিফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘আমরা প্রান্তিক মানুষের কাছে সরকারের ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছি সব সময়। প্রবাসীদের টিকার নিবন্ধনের কাজটি করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। লকডাউনের সময় জেলা সদরে গিয়ে নিবন্ধন করতে তাদের অনেক কষ্ট হতো। কাজটি তারা নিজ ইউনিয়নে করতে পারছেন। এতে খুশি তারা।’
এই বিষয়ে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বুধবার বিকেলে বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিবন্ধনের জন্য ভ্রাম্যমাণ দল গঠন করে দেওয়ায় প্রবাসীদের খুব উপকার হচ্ছে। সকলে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
লকডাউনের সকল ইউনিয়ন কার্যালয়ের পাশাপাশি তথ্যসেবা কেন্দ্রও বন্ধ। শুধুমাত্র লকডাউনে টিকা নিবন্ধনে প্রবাসীদের কষ্ট দূর করতেই আমরা তথ্যসেবাগুলোকে কাজে লাগিয়েছি।
এছাড়া দূরবর্তী কোনো গ্রাম। যেখান থেকে প্রবাসীর ইউনিয়নে এসে নিবন্ধন করতে কষ্ট হবে সেখানে ভ্রাম্যমাণ গাড়ি যাচ্ছে।
পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ দলটি তথ্যসেবা কেন্দ্রগুলোকে কারিগারি সহায়তা দিচ্ছে। লকডাউন চলাকালে প্রবাসীদের টিকা নিবন্ধনের কার্যক্রম চলবে।’
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সীমান্তবর্তী বড়লেখা উপজেলা থেকে মৌলভীবাজার সদরের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। আসা-যাওয়া মিলিয়ে প্রায় ১৫০ কিলোমিটারের পথ।
লকডাউনের মধ্যে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে করোনার টিকার নিবন্ধন নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন উপজেলায় অবস্থানকারী প্রবাসীরা।
তবে তাদের এই দুশ্চিন্তার নিরসন করেছে উপজেলা প্রশাসন। এই সমস্যা সমাধানের জন্য উপজেলাতেই নিবন্ধন কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেন বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী।
এ লক্ষ্যেই গত শনিবার ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের কয়েক উদ্যোক্তাকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়েছে মৌলভীবাজার জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়।
পাশাপাশি একটি মাইক্রোবাস, তিনজন ডিজিটাল সার্ভিস প্রোভাইডার (সেবা প্রদানকারী), প্রয়োজনীয় ল্যাপটপসহ টিকা নিবন্ধনের একটি ভ্রাম্যমাণ দল গঠন করা হয়। পরদিন রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
এ.জে/বি এন-০৮