প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে নেই বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা

এ.জে লাভলু, বড়লেখা


জুলাই ১০, ২০২১
০১:৫৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১০, ২০২১
০১:৫৩ পূর্বাহ্ন



প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে নেই বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা

মৌলভীবাজারের বড়লেখা সদর ইউনিয়নের সাতকরাকান্দি গ্রাম। এই গ্রামের দুইপাশে উঁচু উঁচু টিলার মাঝখানে নিচু একটি জমিতে প্রথম পর্যায়ে নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর ১০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি পরিবার ঘরে উঠেছে। বাকি ৭টি পরিবার প্রায় ৫ মাসেও ঘরগুলোতে ওঠেনি। কারণ ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ ও পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। 

সেখানে একটি ঘর পেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে উঠেছেন দিনমজুর রফিক উদ্দিন। আলাপকালে তিনি বলেন, আমাদের কোনো জমি ও ঘর ছিল না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের জমি ও ঘর দিয়েছেন। এজন্য তাঁর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু ঘরগুলোতে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি। পানিরও কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের কষ্ট করে অন্যের বাড়ি থেকে পানি এনে খেতে হচ্ছে। খুব কষ্টে আছি। বিদ্যুতের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও বিদ্যুৎ দেওয়া হয়নি। এছাড়া ঘরগুলো নিচু জমিতে তৈরি করা হয়েছে। বৃষ্টি হলেই ঘরের সামনে পানি জমে থাকে। হাঁটা-চলাতেও তখন কষ্ট হয়।

রফিক উদ্দিনের মতো এখানে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের (প্রথম পর্যায়ে) ঘর পেয়েছেন মাতাব উদ্দিনও। তিনিও ঘরে স্ত্রী নিয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, ১০টি ঘরের মধ্যে ৩টি ঘরে আমরা তিন পরিবার উঠেছি। কিন্তু ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ নেই। খাবারের পানিরও ব্যবস্থা (উৎস) নেই। আমরা এলাকার বিভিন্ন বাড়ি থেকে পানি এনে পান করছি। পানি আর বিদ্যুৎ না থাকায় বাকি পরিবারগুলো এখনও ঘরে ওঠেনি। আমরা বিদ্যুতের জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু পাইনি। এছাড়া ঘরগুলো নিচু জমিতে তৈরি করা হয়েছে। তারা (সংশ্লিষ্টরা) মাটি ভরাট করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখনও দেননি।

উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের কাশেমনগর গ্রামে নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ১৫টি গৃহহীন পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঘরগুলোতে ৭টি পরিবার উঠেছে। কাশেমনগর গ্রামে গিয়ে কথা হয় উপকারভোগী মনি বেগম, ফাতির আলী, সুলতানা বেগম, আব্দুল বারেক, নাজমা বেগম, আজমল আলী ও সাদ উদ্দিনের সঙ্গে। এ সময় তারা বলেন, এখানে ১৫টি ঘর আছে। এর মধ্যে আমরা সাত পরিবার ঘরগুলোতে উঠেছি। বাকি পরিবারগুলো এখনও ওঠেনি। কারণ এখানে পানি নেই। বিদ্যুৎ নেই। আমরা পানি অন্যদের বাড়ি থেকে কষ্ট করে এনে পান করছি। পানি আর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিলে আমাদের ভোগান্তি কমবে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের দুর্যোগসহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ (‘ক’ শ্রেণি) পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় বড়লেখা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৫০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বড়লেখা সদর ইউনিয়নে ১০টি, উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নে ১৬টি, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নে ৩টি, দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে ৩টি এবং দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নে ১৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়। একেকটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি উপকারভোগীদের মধ্যে ঘরগুলোর চাবি হস্তান্তর করা হয়। 

জানা গেছে, ৫০টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের চাবি পেয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৬টি পরিবার ঘরগুলোতে উঠেছে। বাকি ৩৪টি পরিবার এখনও ঘরগুলোতে ওঠেনি। কারণ ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। পানিরও কোনো ব্যবস্থা নেই। যে ১৬টি পরিবার ঘরগুলোতে উঠেছে, তারাও পানি আর বিদ্যুৎ না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন। এ অবস্থায় তারা দ্রুত ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি পানির (উৎস) ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এদিকে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিগগির ঘরগুলোতে পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।   

ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমাজ উদ্দিন সরদারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৫০টি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে ইউএনও’র কার্যালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। স্ব স্ব ইউপি চেয়ারম্যানদের ঘরগুলোতে ওয়্যারিং কাজ করানোর কথা। কিন্তু ওয়্যারিং কাজ না করায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায়নি। তবে গতকাল (গত বুধবার) পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড থেকে আমাদের কাছে পত্র এসেছে। ঘরগুলোতে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ নিজ খরচে ওয়্যারিংসহ যাবতীয় কাজ করে দেবে। যে সকল ঘর মেইন লাইন থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে আছে, সেগুলোতে দ্রুত সংযোগ দেওয়া হবে। এছাড়া এর বাইরে ঘরগুলোতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।

নলকূপ স্থাপনের বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলোতে পানির উৎস (গভীর নলকূপ) স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে উত্তর শাহবাজরপুর ইউনিয়নের ভোগা-চাঁনপুরে নির্মিত ঘরগুলোতে গভীর নলকূপ স্থাপন কার্যক্রম চলছে। মূলত বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় নলকূপ স্থাপন কার্যক্রমে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। এ কারণে কিছুটা দেরি হয়েছে। আশা করি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নলকূপ স্থাপন করে উপকারভোগীদের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে। 

এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। যোগদানের পর প্রথম উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় ঘরগুলোতে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমকে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বলা হয়েছিল। পরবর্তীতে ডিজিএমকে চিঠিও দিয়েছি। ডিজিএম জানিয়েছেন, দুই-একদিনের মধ্যে ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু হবে। ১৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শেষ হবে। এছাড়া ঘরগুলোতে গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত তা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ধরনের গাফিলতি গ্রহণযোগ্য নয়। তা সফলভাবে বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।


এজে/আরআর-০৮