কমলগঞ্জে স্ত্রীকে হত্যার পর মাটিতে পুঁতে রাখলেন স্বামী

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি


জুলাই ২৮, ২০২১
০৭:৪৫ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২৮, ২০২১
০৮:২৯ অপরাহ্ন



কমলগঞ্জে স্ত্রীকে হত্যার পর মাটিতে পুঁতে রাখলেন স্বামী
৩৬ দিন পর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার, ঘাতক আটক

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে নিখোঁজের ৩৬ দিন পর সুচিত্রা শব্দকর (৪০) নামের এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (২৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা-বাগানের পশ্চিম লাইন এলাকায় নিজ বাড়ির আঙিনার পাশের মাটি খুঁড়ে অর্ধগলিত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

এই দম্পতির ঘরে এক ছেলে ও সুচিত্রার প্রথম বিয়ের পক্ষের এক মেয়ে রয়েছে। এ ঘটনায় ঘাতক স্বামী সুবাস বাউরী ওরফে নুনুকে (৫০) আটক করেছে কমলগঞ্জ থানার পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, 'স্বামী পরিত্যক্তা' সুচিত্রা শব্দকর (৪০) পাত্রখোলা চা-বাগানের বাজারে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন। সেই সুবাদে পাত্রখোলা চা-বাগানের পশ্চিম লাইন এলাকার মৃত নিতাই বাউরীর ছেলে সুবাস বাউরী ওরফে নুনুর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠলে ১৩ বছর আগে সামাজিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছর সংসার ভালো চললেও পরে দেখা দেয় পারিবারিক কলহ। প্রতিদিনই মদ্যপ স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর ঝগড়া হতো। গত ২২ জুন থেকে সুচিত্রা নিখোঁজ ছিলেন। 

জানা যায়, সুচিত্রার প্রথম তরফের মেয়ে সীমা শব্দকর মাসখানেক থেকে মায়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না হওয়ায় তার সৎ পিতা সুবাসের কাছে ফোন করে মায়ের খবর জানতে চাইলে রহস্যজনক কথাবার্তা বলেন সুবাস। এতে তার সন্দেহ হলে স্বামীর বাড়ি কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের তিলকপুর থেকে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সৎ পিতা সুবাস বাউরীর বাড়ি পাত্রখোলা চা-বাগানের পশ্চিম লাইনে আসেন সীমা। প্রথমদিকে সীমার কথার উত্তর না দিলেও পরদিন বুধবার সকালে সীমার জেরার মুখে সুবাস একপর্যায়ে স্বীকার করেন ১ মাস পূর্বে সুচিত্রার সঙ্গে তার ঝগড়া হয়েছিল এবং তাই তিনি রাগ করে কুঠারের হাতল দিয়ে আঘাত করলে সুচিত্রার মৃত্যু হয়। তিনি ভয়ে লাশ গোপনের জন্য বাড়ির আঙিনার পাশে পুঁতে রেখেছেন। একথা শুনে সীমা চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলে সুবাস পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে পাত্রখোলা জামে মসজিদ এলাকা থেকে ঘাতক সুবাসকে আটক করে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে কমলগঞ্জ থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে মৌলভীবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার এএসপি (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) শহীদুল হক মুন্সির নেতৃত্বে কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান, ওসি (তদন্ত) সোহেল রানাসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। বেলা ২টার দিকে ঘাতক সুবাস বাউরীর তথ্যমতে বাড়ির আঙিনার পাশে পুঁতে রাখা জায়গার মাটি খুঁড়ে সুচিত্রার অর্ধগলিত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক সুবাস বাউরী পারিবারিক কলেহের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানান।

কমলগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মহাদেব বাচাড় জানান, লাশের সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ঘাতক সুবাস বাউরী একজন নেশাখোর। সবসময় মদ্যপানসহ নানা নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করতেন তিনি।

কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহত নারীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ ঘাতক স্বামীকে আটক করেছে। এ ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।


এসডি/আরআর-০৬