বড়লেখায় নদীভাঙনের কবলে রাস্তা, নেই মেরামতের উদ্যোগ

এ.জে লাভলু, বড়লেখা


জুলাই ৩০, ২০২১
০৯:১৫ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ৩০, ২০২১
০৯:১৭ অপরাহ্ন



বড়লেখায় নদীভাঙনের কবলে রাস্তা, নেই মেরামতের উদ্যোগ
উদ্যোগী হলেন নিরুপায় এলাকাবাসী

নদীভাঙনের ফলে একটু একটু করে রাস্তাটি ধসে যেতে থাকে। কর্তৃপক্ষ ভাঙনরোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় একসময় রাস্তার প্রায় ৬০ ফুট জায়গা ধসে পড়ে। মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি মেরামতের কোনো উদ্যোগই নেয়নি। এতে চলাচল করতে গিয়ে কয়েকটি গ্রামের মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। তাই সরকারি উদ্যোগের অপেক্ষায় না থেকে এলাকাবাসী বোয়ালী-বিহাইডর-ভট্টশ্রী রাস্তাটি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছেন।

গত রবিবার (২৫ জুলাই) থেকে রাস্তাটির বোয়ালী এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৬০ ফুট জায়গা মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। তবে এতে রাস্তাটি কতদিন টিকবে, তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে সংশয় রয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২ দশমিক ৬৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ বোয়ালী-বিহাইডর-ভট্টশ্রী রাস্তাটি এলজিইডির আওতাধীন। সোনাই নদীর পূর্বপাড় ঘেঁষে যাওয়া রাস্তাটি উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভেতর দিয়ে গেছে। এই রাস্তা দিয়ে বোয়ালী, বিহাইডর, ভবানীপুর, ভট্টশ্রী, উজানিপাড়া, সারোপারসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ চলাচল করেন। প্রায় ৪ বছর ধরে নদীর ভাঙনে বোয়ালী এলাকায় রাস্তাটি একটু একটু করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক বছর আগে রাস্তাটিতে ১ কিলোমিটার পাকাকরণ কাজ শুরু হয়। স্থানীয় উদ্যোগে ভাঙা অংশ মেরামত করার পর পাকাকরণের কাজ সম্পন্ন হয়। তবে পাকা রাস্তাটি বেশিদিন টেকেনি। প্রায় ৬০ ফুট রাস্তা ফের নদীতে ধসে পড়ে। এতে এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চরম দুর্ভোগে পড়েন এলাকার মানুষ।

একসময় স্থানীয়রা গাছের গুড়ি ফেলে ও বাঁশের সাঁকো তৈরি করে কোনোরকনে হেঁটে এপার-ওপার করেছেন। কিন্তু জরুরি প্রয়োজনে কিংবা অসুস্থ মানুষকে আনা-নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে গত ১ মাস ধরে কাছাকাছি আরও একটি অংশে নতুন করে প্রায় ৬০-৭০ ফুট জায়গায় ভাঙন শুরু হয়। এ অবস্থায় চলাচলের দুর্ভোগ কমাতে এলাকাবাসী সরকারি উদ্যোগের অপেক্ষায় না থেকে ভাঙা রাস্তাটি মেরামতের কাজ শুরু করেছেন। তাদের এই উদ্যোগের সঙ্গে শামিল হয়েছেন বিভিন্ন দেশে থাকা এলাকার প্রবাসী, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় সাংসদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।

গত রবিবার থেকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৬০ ফুট রাস্তার মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তার পাশে নদীর ভাঙা অংশে গাছ ও বাঁশের আড়া দিয়ে মেরামতের কাজ চলছে। ভাঙন প্রতিরোধের কাজ শেষ হলে সেখানে ইট ফেলে রাস্তা চলাচলের উপযোগী করা হবে। তবে এতে রাস্তা কতটুকু স্থায়ী হবে তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে।

এলাকার বাসিন্দা কয়ছর আহমদ আহমদ বলেন, রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় গাড়ি চলাচল বন্ধ। হাসপাতালে রোগী নিতে কষ্ট হয়। কেউ মারা গেলে মসজিদে জানাজার জন্য লাশ নিতে হয়। কিন্তু রাস্তা ভাঙা থাকায় কষ্ট করে লাশ নিতে হয়।

রাস্তা মেরামতের কাজ সমন্বয় করছেন এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক তোয়াহিদুর রহমান টিপু। তিনি বলেন, রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাঙায় মানুষ কষ্ট করছেন। এখন দুর্ভোগ কমাতে আমাদের মন্ত্রী, ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রবাসীদের সহযোগিতায় এলাকার সবাই মিলে রাস্তাটিকে ছোট গাড়ি চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। ছয় দিন থেকে কাজ চলছে। আরও কয়েকদিন লাগবে কাজ শেষ হতে। রাস্তা কতটুকু টিকবে বলা যাচ্ছে না। এলাকায় বর্তমান সরকারের সময় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এই ভাঙন উন্নয়নকে ম্লান করে দিচ্ছে। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহমদ জুবায়ের লিটন বলেন, ভাঙন রোধে এলাকাবাসী উদ্যোগে নিয়েছেন। পরিবেশমন্ত্রী, এলাকার প্রবাসীরা এবং আমি নিজেও টাকা দিয়েছি। কোনোমতে চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এটাও টিকবে না। স্থায়ীভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাধ্যমে নদী শাসন করে কাজ না করলে রাস্তা আবারও ভাঙবে।

বড়লেখা উপজেলার প্রকৌশলী মো. সামসুল হক ভূঞা বলেন, রাস্তাটির পাশ দিয়ে একটি নদী প্রবাহিত হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে এর বাঁকে অতিরিক্ত ঘূর্ণনের সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণনের ফলে রাস্তার নিচের মাটি সরে গিয়ে রাস্তা ভেঙে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিশেষজ্ঞ টিম দ্বারা পরামর্শক্রমে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাঁধ নির্মাণ না করা হলে এই রাস্তা রক্ষা করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার কার্যালয়ের পওর শাখা-৪ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সরওয়ার আলম চৌধুরী বলেন, নদীভাঙনে রাস্তাটির দুটি জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি সম্প্রতি জেনেছি। সরেজমিনে ভাঙনস্থলগুলো পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।


এজে/আরআর-০৬