বিদ্যুৎ ভোগান্তিতে মৌলভীবাজারের তিন উপজেলার মানুষ

জিয়াউল হক জিয়া, কুলাউড়া


আগস্ট ০৭, ২০২১
০৫:৪১ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৭, ২০২১
০৫:৪১ অপরাহ্ন



বিদ্যুৎ ভোগান্তিতে মৌলভীবাজারের তিন উপজেলার মানুষ
১০৮ পদের মধ্যে ৬৮টি শূন্য, মনগড়া বিলে অতিষ্ঠ গ্রাহক

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বিদ্যুতের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগে লোকবল সংকটে বিপর্যস্ত কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখার উপজেলার ৪০ সহস্রাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক। কয়েক বছর থেকে এ সকল উপজেলায় বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত থাকেন গ্রাহকরা। বিদ্যুতের আসা-যাওয়া নিয়ে মানুষের ক্ষোভ চরমে। শহর কিংবা গ্রাম, বিদ্যুতের কথা বললেই মানুষ বিতৃষ্ণা প্রকাশ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিদ্যুৎ নিয়ে গালিগালাজ করা হয় জনপ্রতিনিধিদের। সেখানে মানুষের একটাই কথা- বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলার মতো জনপ্রতিনিধি নেই।

ক্ষুব্ধ হয়ে কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি এবং কুলাউড়া পৌরসভার মেয়রের নেতৃত্বে সাংবাদিকরা একাধিকবার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরিস্থিতি উন্নয়নে একাধিক বৈঠক করলেও এ সমস্যার কোনো সুরাহা হচ্ছে না। দূরবস্থার কথা স্বীকার করে এজন্য লোকবল সংকটের কথা জানান নির্বাহী প্রকৌশলী ওসমান গনি।

এমন দূরবস্থার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রকৃত অর্থে লোকবল সংকটের কারণে প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কুলাউড়া জোনাল বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের আওতাধীন কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার ৪০ সহস্রাধিক গ্রাহক।

কুলাউড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের এই জোনাল অফিসে লোকবল থাকার কথা ১০৮ জন। এর মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৪০ জন। অর্থাৎ ১০৮টি পদের মধ্যে ৬৮টি পদই শূন্য। কর্মরত ৪০ জনের মধ্যে আবার দুর্নীতির দায়ে সাসপেন্ড আছেন ৩ জন। ফলে জোনাল এই বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রটি অনেকটাই অচল। সেবা বলতে কোনো বিষয় নেই এখানে। উল্টো প্রতিনিয়ত প্রকট হচ্ছে হয়রানির অভিযোগ।

এই বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের আওতায় ১১ কেভি ৩৫৫ কিলোমিটার এলটি লাইন ও ৩৩ কেভি ৬০ কিলোমিটার এইচটি লাইন রয়েছে। সেই সঙ্গে গ্রাহকদের হাজার হাজার কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন রয়েছে। এসব লাইন সচল রাখার জন্য ৬০ জনের বেশি লাইনম্যান ও লাইন হেলপার থাকার কথা। কিন্তু সেখানে কর্মরত আছেন মাত্র ১২ জন। বর্ষা মৌসুমে বিদ্যুৎ লাইনে প্রতিদিনকার সমস্যা সমাধানে হিমশিম খেতে হয়। ৩টি গ্রুপে ভাগ করেও বিরামহীনভাবে কাজ করে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয় না।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এই বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে ৭টি গাড়ি রয়েছে। কিন্তু এসব গাড়ির জন্য কোনো চালক বরাদ্দ নেই। ফলে গাড়িগুলো ব্যবহারের জন্য ব্যক্তিগত চালক লাগে অথবা লাইনম্যান কেউ গাড়ি চালানো জানলে তার শরণাপন্ন হতে হয়। ফলে জরুরি মেরামত কাজে দ্রুত মাঠে যাওয়া সম্ভব হয় না।

জোনাল অফিসের আওতাধীন ৪০ হাজার গ্রাহকের মিটারের বিপরীতে কোনো মিটার রিডার নেই। মিটার রিডিং ও বিল বিতরণের জন্য চুক্তিভিত্তিক ২০ জন মাঠকর্মী রয়েছেন। তবে তারা কোনোদিন কোনো মিটার দেখেন না। নিজেদের মনগড়া ও অনুমানভিত্তিক বিল দেন। আবার সঠিক সময়ে গ্রাহকের কাছে বিল পৌঁছান না। তাই ভুতুড়ে বিল গ্রাহকদের প্রথম ও প্রধান অভিযোগ। তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ক্ষোভ সবচেয়ে বেশি। এসব ভুতুড়ে বিল সমন্বয়ে অফিসে গেলে গ্রাহকদের হয়রানির শিকার হতে হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের পুঞ্জিভুত ক্ষোভ যে কোনো সময় বিক্ষোভে রূপ নিতে পারে। বিদ্যুতের বিড়ম্বনায় অতিষ্ঠ কুলাউড়া বাজারের ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে ক্ষুব্ধ। ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দ গত ২৯ জুলাই নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে আলোচনা করেন। গত বৃহস্পতিবার কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। উভয় প্রতিনিধি দল বিদ্যুৎ ব্যবস্থার দূরবস্থা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানান। কম লোকবল দিয়েই আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা প্রদানের আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকদের রোষানল থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

কুলাউড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী ওসমান গনি বিদ্যুৎ সরবরাহের দূরবস্থার কথা স্বীকার করে জানান, লোকবল সংকটের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র অচল হওয়ার সম্মুখীন। তিনি লোকবলের চাহিদা জানিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন। তারপরও এই লোকবলে যতটা সম্ভব সেবা দেওয়া যায় সে চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।


জেএইচ/আরআর-০১