জুড়ীর কমিউনিটি ক্লিনিকে সহস্রাধিক স্বাভাবিক প্রসবের রেকর্ড

সাইফুল্লাহ হাসান, মৌলভীবাজার


আগস্ট ১৩, ২০২১
০৬:১৮ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ১৩, ২০২১
০৯:২৫ অপরাহ্ন



জুড়ীর কমিউনিটি ক্লিনিকে সহস্রাধিক স্বাভাবিক প্রসবের রেকর্ড

মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী জুড়ী উপজেলার ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিক সহস্রাধিক স্বাভাবিক প্রসবের রেকর্ড গড়েছে। সরকারি এ ক্লিনিকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে একের পর এক স্বাভাবিক প্রসব কার্যক্রম চলমান আছে। তবে জনবল সংকট আর পরিবারকল্যাণ সহকর্মী ও রোগীকে রেফার করতে যান্ত্রিক কোনো গাড়ি না থাকায় কিছু দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে।

কমিউনিটি ক্লিনিক সূত্রে জানা যায়, ভোগতেরা গ্রামের বাসিন্দা মইনুল ইসলামের দানকৃত জমিতে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে ক্লিনিকটির যাত্রা শুরু হয়। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি এখানে প্রথম স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে শিশুর জন্ম হয়। গত বুধবার পর্যন্ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকে ৫৪০ জন মেয়ে ও ৪৬৭ জন ছেলে শিশুর জন্ম হয়। এর মধ্যে যমজ শিশু আছে ৭ জোড়া। 

জানা যায়, স্বাভাবিক প্রসবে গ্রামীণ পর্যায়ে অসামান্য অবদান রাখায় এ ক্লিনিকটি ২০১৩ সালের ১৯ জুন নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক পুরস্কার গ্রহণ করে। এছাড়া একই বছরের ১৬ জুলাই জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি ক্লিনিক হিসেবে পুরস্কৃত হয়। 

ক্লিনিক সূত্রে আরও জানা যায়, গত মঙ্গলবার পার্শ্ববর্তী বড়লেখা উপজেলার খাদিজা আক্তার (২৫) প্রসবব্যথা নিয়ে সকাল ৭টায় ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিকে আসেন। এরপর সকাল ৯টা ২০ মিনিটে খাদিজার এক ফুটফুটে ছেলেসন্তান জন্ম নেয়। খাদিজার স্বাভাবিক প্রসবে সহায়তা করেন প্রসবকর্মী লিপি খানম। খাদিজা খানমের সন্তান প্রসবের মাধ্যমে এ ক্লিনিকে সহস্রাধিক স্বাভাবিক প্রসবের রেকর্ড হয়।

ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিকে সহস্রাধিক স্বাভাবিক প্রসবের খবরে গত বুধবার ক্লিনিক পরিদর্শনে আসেন উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মোঈদ ফারুক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা, ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাস, নারী ভাইস চেয়ারম্যান রঞ্জিতা শর্মা, জায়ফরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম রেজা এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সমরজিৎ সিংহ।

কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী (সিএইচসিপি) হানিফুল ইসলাম সিলেট মিররকে জানান, ২০১৩ সালের ২৬ এপ্রিল তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত মুজিবুর রহমান ফকির ক্লিনিকটি পরিদর্শনে আসেন। তিনি এ ক্লিনিককে মিনি (১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু) হাসপাতাল করার আশ্বাস দেন। পরে আর এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। 

গ্রামীণ অসহায় হতদরিদ্র মানুষের কথা বিবেচনা করে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে হানিফুল ইসলাম বলেন, এই মিনি হাসপাতাল যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে এখানকার হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষ যারা সিজার করাতে পারে না, তারা খুব সহজে নরমাল ডেলিভারি করাতে সক্ষম হবে। তাদের জন্য বড় একটি উপকার হবে।

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র এই উপজেলা বা জেলার মানুষই নয়, বাইরের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মানুষ এসে এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে থাকেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমরা এই ক্লিনিকে ৯ বছর যাবৎ বিনা খরচে স্বাভাবিক প্রসব কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আগামীতেও এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

হানিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বড় একটা সমস্যা হচ্ছে জনবল সংকট। যেখানে স্বাস্থ্যসেবাকর্মী থাকার কথা ৩ জন, সেখানে আমাকে একাই সামাল দিতে হচ্ছে। এছাড়া একজন গর্ভবতী নারীকে রেফার করলে যথাসময়ে গাড়ি পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে আমাদের কোনো ধরনের মোটরচালিত গাড়ি থাকলে খুব বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।

মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ সিলেট মিররকে বলেন, সহস্রাধিক স্বাভাবিক শিশুর জন্ম হওয়ায় আমরা আনন্দিত। এটি সারা দেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যারা কর্মরত আছেন সবাইকে অভিনন্দন। অন্যান্য কমিউনিটি ক্লিনিক যাতে এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে একে উদাহরণ হিসেবে নিতে পারে। 

বিভিন্ন সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা যদি আমাকে অফিসিয়ালি এবং লিখিতভাবে এই বিষয়গুলো অবগত করেন, তাহলে আমি বিষয়টি অবশ্যই দেখব।


এসএইচ/আরআর-০২