কারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল স্কুলছাত্র ইসতিয়াককে?

বড়লেখা প্রতিনিধি


সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২১
১০:৩৩ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২১
১০:৩৩ অপরাহ্ন



কারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল স্কুলছাত্র ইসতিয়াককে?

১ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টা। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার লাইসিয়াম স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্র ইসতিয়াক হাসান (১৪) প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে বারইগ্রাম এলাকায় একটি অটোরিকশায় ওঠে সে। পৌরশহরের পানিধার এলাকায় পৌঁছার পর অটোরিকশাটির চালক তাকে জানায়, অটোরিকশা নষ্ট হয়ে গেছে। পরে ওই অটোরিকশাচালক পানিধার এলাকায় তাকে চার চাকার সবুজ রঙের একটি গাড়িতে (অটোরিকশা) তুলে দেয়। ওই গাড়িতে ওঠার পর সেটিতে বসে থাকা এক নারী ইসতিয়াকের নাম-পরিচয় ও রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে জানতে চান। এ সময় ইসতিয়াক নিজের নাম-পরিচয় ও রক্তের গ্রুপ বলে। পরে সে ঘেমে গেছে বলে ওই নারী তাকে একটি টিস্যু পেপার এগিয়ে দিয়ে ঘাম মুছতে বলেন। ইসতিয়াক টিস্যুটি ভেজা জানালে ওই নারী বলেন, এটি বিদেশি টিস্যু। এরপর ওই টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতেই জ্ঞান হারায় ইসতিয়াক। বেলা সাড়ে ১১টায় জ্ঞান ফিরলে ইসতিয়াক নিজেকে একটি নির্জন টিলায় পাতার উপরে শোয়া অবস্থায় আবিষ্কার করে। এই সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে কী ঘটেছে তার কিছুই মনে নেই ইসতিয়াকের।

ইসতিয়াক বড়লেখা উপজেলার মুছেগুল গ্রামের কয়েছ আহমদের ছেলে। গতকাল শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ইসতিয়াক। কিন্তু এখনও সে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি। অজানা এক আতঙ্ক যেন ঘিরে আছে তাকে।

আজ রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাংবাদিকদের ওই ঘটনাটির বর্ণনা দেয় ইসতিয়াকের পরিবার। ওই ঘটনায় ইসতিয়াকের মা লাইলি আক্তার বড়লেখা থানায় জিডি করেছেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, দিনে-দুপুরে কে বা কারা ইশতিয়াককে তুলে নিয়ে গিয়েছিল? 

ভুক্তভোগী ইসতিয়াক হাসান বলে, জ্ঞান ফেরার পর দেখি একটি টিলার উপরে পাতার উপর শোয়া অবস্থায় রয়েছি। তখন আমার গায়ে কিছুই ছিল না। আমার বইয়ের ব্যাগও দূরে রাখা ছিল। পরে দ্রুত সেখান থেকে নেমে দৌড়াতে থাকি। কিছু পথ এসে একটি পাকা সড়ক পেয়ে দাঁড়াই। এ সময় একটি অটোরিকশা দেখে চালককে সবকিছু খুলে বলি। ঘটনাটা শুনে তিনি আমাকে গাড়িতে তোলেন। আমি গাড়িতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। তাই তিনি কোথায় আমাকে নামিয়ে দিয়েছেন ঠিক মনে নেই। পরে হঠাৎ দেখি আদালত এলাকায় আছি। সেখান থেকে একটি অটোরিকশায় উঠে পানিধার এলাকায় নেমে মাকে কল দিয়ে বিষয়টি জানাই। পরে মা এসে আমাকে বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমাকে হাসপাতাল নেওয়া হয়।

সে জানায়, তার ডান হাতের আঙুলে সূচ জাতীয় কিছুর দাগ রয়েছে। এখনও তার শরীরিক দুর্বলতা কাটেনি। 

ইসতিয়াকের মা লাইলি বেগম রবিবার দুপুরে বলেন, প্রতিদিন সকালে আমার ছেলে বড়লেখায় এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়। ঘটনার দিনও সে প্রাইভেট পড়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু কে বা কারা দিনে-দুপুরে আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তার শরীর এখনও দুর্বল। ডান হাতের আঙুলে সূচের দাগ রয়েছে।

তিনি জানান, কারও সঙ্গে তাদের কোনো শত্রুতা নেই। আর তার ছেলেও শান্ত স্বভাবের। তার ধারণা, হয়তো কোনো চক্র তার ছেলের কিডনি নেওয়ার জন্য তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। রক্তের গ্রুপের সঙ্গে না মেলায় তাকে নির্জন স্থানে ফেলে গেছে।

তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে এক ধরনের ভয় কাজ করছে। আজ আমার ছেলের সঙ্গে এ রকম ঘটনা ঘটেছে। কাল অন্য কারও সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। আমি জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। 

বড়লেখা উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রত্নদ্বীপ বিশ্বাস রবিবার বিকেলে বলেন, ছেলেটি গতকাল (গত শনিবার) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তার শরীরিক অবস্থা ঠিক আছে। ওর বয়স কম। হয়তো খুব ভয় পেয়েছে। কিছুদিন গেলে হয়তো পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে। 

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, বিষয়টি আমার খতিয়ে দেখব।


এজে/আরআর-১৩