কোম্পানীগঞ্জে শিবিরের সম্পাদক নৌকার প্রার্থী

কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি


অক্টোবর ১১, ২০২১
১০:৫৪ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১২, ২০২১
০৫:১২ অপরাহ্ন



কোম্পানীগঞ্জে শিবিরের সম্পাদক নৌকার প্রার্থী

২০০৬-২০০৭ সালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার সময়ে সভাপতি ছিলেন আব্দুস শাকুর। ২০১৬ সাল পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৮ সালের দিকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। আওয়ামী লীগে যোগদানের পর ২০১৯ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্যপদ লাভ করেন। এর ঠিক দুই বছর পরেই পেয়েছেন ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে ইকবাল হোসেন ইমাদকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করার পর থেকেই এসব অভিযোগে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।

অভিযোগ উঠেছে, ইমাদ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের উপজেলা শাখার নেতা ছিলেন। তার নামে ফেসবুক আইডিতে মানবতাবিরোধী অপরাধে বেশ কয়েকজন জামায়াত নেতার পক্ষে স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশটের ছাপা কপি ছড়িয়ে পড়েছে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড রবিবার রাতে ইমাদের নাম ঘোষণা করে। এরপর থেকে ফেসবুকে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।

তবে ইমাদের দাবি, তিনি ১৫ বছর প্রবাসে ছিলেন। কখনও ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তার নামে ওই উপজেলার আরেকজন ছাত্রশিবির করতেন। এখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার দাবি, ইমাদ ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করতেন। সংগঠনটির পদেও ছিলেন। এমনকি ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বেশকিছু স্ট্যাটাসও দিয়েছেন নানা সময়।

তবে জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ইমাদের বিরুদ্ধে ছাত্রশিবির করার অভিযোগ উঠলেও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের কমিটিতে আছেন। এ ছাড়া চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তিনি তৃণমূলের ভোটেও এগিয়ে ছিলেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ইকবাল হোসেন ইমাদ ২০০৬-২০০৭ সালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ছিলেন। তার সময়ে সভাপতি ছিলেন আব্দুস শাকুর। ২০১৬ সাল পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৮ সালের দিকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি।

এরপর ২০১৯ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্যপদ পান। দলে আসার মাত্র দুই বছরের মধ্যে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে গেছেন ইমাদ।

দক্ষিণ রণিখাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজমুল ইসলাম বলেন, ‘ইকবাল হোসেন ইমাদকে যখন আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্য করা হয় তখনও আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। অর্থের প্রভাবে আমার প্রতিবাদ টেকেনি। অর্থের জোরেই এবার তিনি নৌকার প্রার্থী হয়ে গেছেন।’

ফেসবুকে ইকবাল এইচ ইমাদ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত-শিবিরের পক্ষে এবং সরকারের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে পোস্ট দেওয়া হয়।

অ্যাকাউন্টটি নৌকার মনোনয়ন পাওয়া ইকবাল হোসেন ইমাদের বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় সূত্র। তাতে ইমাদের একাধিক ছবিও আছে।

২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট ওই অ্যাকাউন্ট থেকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘ফাঁসির দড়িটা কোথায়? দাও এক্ষুনি গলায় পরিয়ে। সাঙ্গ কর তোমাদের উল্লাস। স্বপ্নচারী নায়ক হেলেদুলে এগিয়ে যাবে সাজানো মঞ্চে। ভিলেন কুল তোমরা খুশি তো? চোখের কোণে চিন্তার রেখা ঢেকে দাও মেকাপের আস্তরে।’

২০১৪ সালের ২৫ অক্টোবর ওই অ্যাকাউন্ট থেকেই জামায়াতের প্রয়াত আমীর যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের ছবি যুক্ত করে লেখা হয়, ‘অধ্যাপক গোলাম আযম একটি নাম, একটি ইতিহাস। তিনি বিশ্বনন্দিত ইসলামি চিন্তাবিদ। ভাষা আন্দোলনের নেতা, ঢাকসুর সাবেক জিএস, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপকার, এদের রাজনৈতিক ইতিহাসের উত্থানপতনের অন্যতম কারিগর।’

ইকবাল হোসেন ইমাদ অবশ্য দাবি করেছেন, যেই আইডি থেকে পোস্টগুলো ভাইরাল হয়েছে, সেটি তার নয়।

তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। আমার নামে আরেকজন আমাদের উপজেলা শিবিরের কমিটিতে ছিল। তার বাবার নাম আব্দুন নুর আর আমার বাবার নাম আব্দুস সালাম। 

ইমাদ আরও বলেন, আমি ১৫ বছর প্রবাসে ছিলাম। দেশে এসে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হই। তখন কেউ কিছু বলেনি। এখন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন চাওয়ার পরই একটি গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে। আমার ছবি ও নাম দিয়ে ফেসবুকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে জামায়াত ও শিবিরের পক্ষে লেখালেখি করে। এসবের সঙ্গে আমি যুক্ত নই।

এ বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলেন, ইমাদের বিরুদ্ধে শিবিরসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ শুনেছি। তবে কোনো প্রমাণ পাইনি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী যে প্রার্থী এমন অভিযোগ তুলেছেন তিনিও বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন। ইমাদ যখন আওয়ামী লীগের কমিটিতে এলেন তখন কোনো অভিযোগ ওঠেনি। এখন অভিযোগ তোলা হলেও কেউ কোনো প্রমাণ দিচ্ছে না। ফেসবুকের কয়েকটি স্ক্রিনশট তো কোনো প্রমাণ হতে পারে না। তাছাড়া প্রার্থী বাছাই নিয়ে বৈঠকে তিনি তৃণমূলের সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও নিশ্চয়ই তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাননি। তাই মনোনয়ন দিয়েছেন।

নাসির আরও জানান, ওই উপজেলায় একসময় আওয়ামী লীগ খুবই দুর্বল ছিল। বিভিন্ন দল থেকে লোকজন এনে সংগঠনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। তাছাড়া প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দলের প্রতি নিবেদনের পাশাপাশি তার জনসম্পৃক্ততার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হয়।

বিএ-০১