চার বছরে ৪৭ কম্পন, বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি

সিলেট মিরর ডেস্ক


অক্টোবর ১৬, ২০২১
০৬:২৮ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১৬, ২০২১
০৬:৩৪ অপরাহ্ন



চার বছরে ৪৭ কম্পন, বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি

বাংলাদেশে গত পৌনে ৪ বছরে অন্তত ৪৭ বার ভূমিকম্প হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি গণমাধ্যম। বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কায় রয়েছে এদেশে। ধারাবাহিকভাবে কম্পনের ফলে আর্থ ফল্ট লাইনগুলো সক্রিয় হওয়ায় এমন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। 

আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি জানায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৭টি ভূমিকম্প হয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে ছোট ও মাঝারি ধরনের ২০টি কম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের অভ্যন্তরে, বাকি ২৭টি সীমান্তসহ আশপাশের দেশে। 

গত তিন বছরে ধারাবাহিকভাবে ভূমিকম্প বেড়ে চলছে এদেশে, যার মধ্যে চলতি বছরেই সবচেয়ে বেশি কম্পন অনুভ‚ত হয়েছে। গত ৯ মাসে ২১ বার কেঁপে উঠেছে বাংলাদেশ, যার সবশেষটি হয়েছে গত ৭ অক্টোবর রাত ১২টা ২৮ মিনিটে। এটির উৎসস্থল মিয়ানমারের মানওয়ায় হলেও মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৬। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ১০০ বছরে বাংলাদেশে বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্প হয়নি। এই সময়ে ছোট ও মাঝারি ধরনের ভূমিকম্পের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে আগামীতে বড় আকারের ভূমিকম্পের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা ঢাকা থেকে উত্তর-পূর্ব, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। এদিক দিয়ে প্লেট বাউন্ডারি লাইন যাওয়ায় এমনটা ভাবা হচ্ছে। কেননা, এই লাইনগুলোর জন্যই ৮০ শতাংশের বেশি কম্পন অনুভূত হয়ে থাকে। 

গবেষনা বলছে বাংলাদেশের ভেতরে উৎপন্ন ভূমিকম্পগুলোর চেয়ে নেপাল, মিয়ানমার এবং ভারত অঞ্চলের ভূমিকম্পগুলো বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে। 

বাংলাদেশের উত্তর ও পূর্বে দুটি ভূচ্যুতি আছে। সিলেট, সৈয়দপুর, মধুপরে ভূমিকম্প হবার মত চ্যুতি আছে। যেসব স্থানে চ্যুতি আছে সে সব স্থানে প্রতি ১০০ বছর অন্তর বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়ে আসছে। নেপালে অবস্থিত ইন্ডিয়ান প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের মাঝামাঝি। এছাড়াও হিমালয়ের পাদদেশে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়ে থাকে। সাথে মিয়ানমারের আরাকান। এই তিনটি স্থানে যদি ৮-৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয় তাহলে ব্যাপকভাবে অনুভূত হবে বাংলাদেশেও। তখন বাংলাদেশে এর মাত্রা হতে পারে ৭ মাত্র বা তারও বেশি। উপমহাদেশে সবেচেয় বড় ধরনের ভূমিকম্প হয় ১৯১৮ সালে। উৎপত্তি ছিল নেপালেই। যেহেতু প্রতি একশ বছর পর বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়, এখন থেকে যে কোনো সময়ই বড় ধরনের ভূমিকম্প হতেই পারে। 

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারি বলেন, ‘রিখটার স্কেলে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ক্ষয়ক্ষতি হয়। বাংলাদেশের সীমানা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও বাংলাদেশের ক্ষতি হতে পারে। ভূমিকম্প যত কাছে হবে, তত বেশি ক্ষতি হবে। দেশের ভেতরে হলে তো ক্ষতি হবেই।’

তিনি ব্যাখ্যা বলেন, ‘ ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে ভূমিকম্প হলে বাংলাদেশে সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, এই বেল্টের অনেক ক্ষতি হবে। কারণ, এগুলো বড় বড় শহর ও ঘনবসতিপূর্ণ। আবার মিয়ানমারে হলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। ৫-৬ মাত্রার হলে হয়তো সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের মতো সীমান্তবর্তী এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সীমান্তবর্তী এলাকায় ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে তার প্রভাব ঢাকায় চলে আসবে। এতে ঢাকার অনেক ক্ষতি হবে।’ 

এদিকে, সম্ভাব্য ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ভূমিকম্প সহনীয় ভবনসহ পরিকাঠামো নির্মাণে জোর দেওয়া, ভূমিকম্পের বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো, দুর্যোগ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নেওয়া, উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হয়েছে। 

আরসি-১৪