সিলেটে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার

নিজস্ব প্রতিবেদক


নভেম্বর ০২, ২০২১
০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ০২, ২০২১
০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন



সিলেটে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার

বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন। অনেক প্রার্থী পথসভা আর উঠোন বৈঠকও করছেন। কাকে ভোট দিলে উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত হবে, ভোটারদের মধ্যেও এ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। সবমিলিয়ে সিলেটের ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে (ইউপি) জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় বিভাগের চার জেলার ৪৫টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ হবে।

নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ৪৫টি ইউপির মধ্যে সিলেট জেলার সদর উপজেলার ৫টি, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৫টি ও বালাগঞ্জ উপজেলার ৬টি; সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ১০টি, দোয়ারাবাজার উপজেলার ৯টি; মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার ৫টি এবং হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ৫টি রয়েছে।

সিলেট বিভাগের চার জেলায় দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ১৯৮ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এরমধ্যে সিলেটে ৬৮ জন, হবিগঞ্জে ১৬ জন, সুনামগঞ্জে ৯৩ জন এবং মৌলভীবাজারে ২১ জন রয়েছেন। বিভাগের চার জেলায় সাধারণ ওয়ার্ডে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন ১ হাজার ৬২০ জন। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ৫২০ জন, হবিগঞ্জ জেলায় ৭২৪ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় ১৭৪ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ২০২ জন রয়েছেন। এছাড়া চার জেলায় সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন ৪৮২ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে সিলেট জেলায় ১৫৭ জন, হবিগঞ্জ জেলায় ৬০ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় ২১৩ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ৫২ জন রয়েছেন। 

একাধিক ভোটার জানিয়েছেন, প্রতিদ্বন্দিতাকারী প্রার্থীরা এখন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোর প্রতিটি গ্রাম চষে বেড়াতে শুরু করেছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে গিয়ে দোয়া ও আশীর্বাদ চাওয়ার পাশাপাশি ভোটও চাইছেন। অনেক প্রার্থী নির্বাচিত হলে কী করবেন, এর ফিরিস্তিও ভোটারদের দিচ্ছেন। উন্নয়নমূলক নানা প্রতিশ্রুতি প্রার্থীরা ভোটারদের দিচ্ছেন। অনেক প্রার্থী বিগত চেয়ারম্যানের দোষ-ত্রুটিও ভোটারদের কাছে উপস্থাপন করছেন। গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারেও চায়ের স্টল, দোকান কিংবা আড্ডায় প্রার্থীদের নিয়ে স্থানীয়রা পক্ষে-বিপক্ষে নিজেদের ভালোলাগা ও মন্দলাগা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন।

সিলেটের একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী সিলেট মিররকে জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হওয়ায় ইউপি নির্বাচনে বিশেষত চেয়ারম্যান পদে তৃণমূলের মানুষজনের সক্রিয় সমর্থন বেশি থাকে। এখানে গোষ্ঠী ও অঞ্চলগত দ্বন্দ -বিভেদও তাই প্রাধান্য পায়। সবকটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি একাধিক ইউপিতে দলটির অনেকে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিয়েছেন। এর পাশাপাশি বিএনপি দলগতভাবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন। ফলে এসব রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকেরা বিভক্ত হয়ে নানা চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে কাজ করছেন। পাশাপাশি নির্দলীয় অনেক প্রার্থীও আছেন। এতে করে প্রতিটি ইউপিতে প্রচারণার শুরুতেই নির্বাচনী উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে।

সরেজমিনে একাধিক ইউপি ঘুরে দেখা গেছে, প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন ঘিরে উৎসাহের শেষ নেই। গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ পুরো ইউপিতে সাঁটানো হয়েছে পোস্টার ও ব্যানার। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। প্রার্থীরা প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি পথসভা, সংক্ষিপ্ত সমাবেশ, মতবিনিময় সভা ও উঠোন বৈঠক করছেন। কোনো কোনো প্রার্থী গ্রামে গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নিজেদের পক্ষে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। গ্রাম, পারিবারিক ও অঞ্চলকেন্দ্রিক রাজনীতিও প্রার্থীদের প্রচারণায় প্রাধান্য পাচ্ছে বলে একাধিক ভোটার নিশ্চিত করেছেন।

সিলেটের একাধিক ইউনিয়নের ভোটার জানিয়েছেন, প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই চেয়ারম্যান পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। অনেক স্থানে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী শক্ত অবস্থানে আছেন। এসব ইউপিতে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা। নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর কয়েকদিন হতে না হতেই কিছু ইউপিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে। ফলে স্থানীয় মানুষ সার্বক্ষণিক ভোটের হিসাব-নিকাশ কষছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট সদর উপজেলার ইউনিয়নের এক ভোটার বলেন, এটা জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়। স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন হওয়ার ফলে প্রতীকের চেয়ে অনেক সময় ব্যক্তি ও তাঁর কর্মকাণ্ডই প্রাধান্য পায় বেশি। স্থানীয় নির্বাচন হওয়ার কারণে এখানে তৃণমূলের ভোটারদের কাছেও বিষয়টি আলাদা এক আমাজে হাজির হয়েছে। ভোটের মাঠে তাই ব্যক্তি সম্পর্ক, সামাজিক ও পারিবারিক ঘনিষ্ঠতা এবং কথার মন্ত্রমুগ্ধতায় আকর্ষিত হয়ে অনেকে ভোট দেন। এ ছাড়া যে প্রার্থী প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয় করতে পারবেন, তিনিই জিতবেন। যাঁর গ্রহণযোগ্যতা বেশি, তিনিই ভোটের মাঠে বেশি সুবিধা পাবেন।

বিএ/আরসি-০৩