হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক


নভেম্বর ০৩, ২০২১
০২:৪০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ০৩, ২০২১
০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন



হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন


সিলেট নগরে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট সিটি করপোরশন (সিসিক)। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি মাঠ জরিপ করে ২০ হাজার ৬৩০টি নতুন হোল্ডিং সংযোজন করা হয়েছে। ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়েছে বছরে ২০ শতাংশ। বর্ধিত ট্যাক্স আদায় করা সম্ভব হলে একশ কোটি টাকা বেশি আদায় হবে সিসিকের।

তবে সিসিকের এমন উদ্যোগ নাগরিক জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন নাগরিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। তারা বলছেন, একদিকে করোনাভাইরাসে প্রভাবে মানুষ অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে আছেন। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। নিত্যপণ্যের বাজারও অস্থিতিশীল। এ অবস্থায় হোল্ডিং ট্যাক্স চাপিয়ে দেওয়া হবে অমানবিক।

সিসিক বলছে, বিগত ১২ বছরের মধ্যে নগরে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়নি। অপরদিকে অভ্যন্তরীণ ও উন্নয়ন ব্যয় কয়েকগুণ বেড়েছে। দীর্ঘদিন এসেসমেন্ট না হওয়া এবং রাজস্ব আয় না বাড়ায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সেবা প্রদান ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে না।

সিসিক আরও জানিয়েছে, দি মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন (ট্যাক্সেশন) নিয়ম ১৯৮৬ অনুযায়ী, প্রতি পাঁচবছর পরপর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত সব বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক ভবন, ব্যক্তি মালিকানাধীন বাসাবাড়ি এসেসমেন্ট/রি-এসেসমেন্ট করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু, সিলেটে ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরের পর আর জরিপ হয়নি। সেবা ও উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত করতে ও সুষম রাজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি মাঠ জরিপ করা হয়। 

মাঠ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট সিটি করপোরেশনে ৭৫ হাজার ৪৩০টি হোল্ডিং রয়েছে। জরিপের আগে হোল্ডিং ছিল ৫৪ হাজার ৮০০। নতুন করে ট্যাক্সের আওতায় আসবে ২০ হাজার ৬৩০টি হোল্ডিং। জরিপকৃত সংখ্যা ও পরিমাণের উপর ভিত্তি করে ১১৩ কোটি ২৭ লাখ পাঁচ হাজার ৪৪৫ টাকা ট্যাক্স দাবি প্রস্তুত করা হয়েছে। যা আগে ছিল মাত্র ১৩ কোটি ৯৪ লাখ ১৯ হাজার ৬১৩ টাকা।

সিসিক সূত্র আরও জানায়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের পরিপত্র অনুযায়ী, আদর্শ কর তপশীলে গৃহকর ৭ শতাংশ, করজারভেন্সি ৭ শতাংশ, আলো ও পানি কর ৩ শতাংশ করে এবং স্বাস্থ্য কর ৮ শতাংশ হারে মোট ২৮ শতাংশ কর দেওয়ার কথা। তবে, সিটি করপোরেশন নাগরিকদের সুবিধা বিবেচনায় ২০ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ করেছে।

নাগরিক ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, সিসিক অসময়ে এ উদ্যোগ নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত। এ বিষয়ে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের মো শোয়েব বলেন, ‘মঙ্গলবার (আজ) এ বিষয়ে মেয়রের সঙ্গে মিটিং আছে। আমরা আপত্তি জানাব। ইতোমধ্যে ট্রেড লাইসেন্সের ফি কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে সিলেটের ব্যবসা-বাণিজ্যের বেহাল অবস্থা। এর মধ্যে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর উদ্যোগ যুক্তিযুক্ত নয়। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আমরা তাকে অনুরোধ করব।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন এর সিলেট সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের এমন সিদ্ধান্ত নাগরিক জীবনকে দুর্বিসহ অবস্থায় ফেলবে। যারা নিয়মিত ট্যাক্স দিয়ে যাচ্ছে তাদের কর আবার বাড়ানো কোনোভাবে ঠিক হবে না।’

বকেয়া ট্যাক্স আদায়ে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা দিচ্ছে না তাদের ছাড় দিয়ে একই মানুষের উপর অতিরিক্ত কর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়।’

ফারুক মাহমুদ বলেন,‘বিভিন্ন জায়গায় এরই মধ্যে বাসা ভাড়া বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি মানুষের জীবন নাজেহাল করছে। এতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জীবনে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। সিসিক হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়ে আগুনে ঘি ঢালার চেষ্টা করছে।’ একইসঙ্গে তিনি সিসিকের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে সাধুবাদ জানান এবং মেয়রকে ‘জনবিরোধী’ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।

এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা এমনিতেই অস্বস্তির মধ্যে আছেন। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। নাগরিকসেবা না বাড়িয়ে ট্যাক্স বাড়ানো উচিত হবে না। অর্থনৈতিকভাবে জর্জরিত নাগরিকদের উপর হোল্ডিং ট্যাক্স চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় সিদ্ধান্ত হবে।’

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সিলেট জেলার সমন্বয়ক আবু জাফরও ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে সারাবিশ্ব যখন নাগরিকদের প্রণোদনা দিচ্ছে তখন সিসিক একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সিসিক কেন এটা করছে তা বোধগম্য নয়। এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক এবং জনস্বার্থ পরিপন্থী।’

এর আগে সিসিক পানির বিল বাড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করোনাকালে এ ধরনের উদ্যোগ সঠিক নয়। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় মানুষ তিনবেলা খেতে পারছে না। সিসিককে এ সময় নাগরিকদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে বিল অর্ধেক করা উচিত ছিল। অথচ, তারা নতুন করে কর চাপিয়ে দিচ্ছে। হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হলে বাসা ও দোকানভাড়া বাড়বে। এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত।’

নগরভবনে মতবিনিময় : সোমবার (১ নভেম্বর) হোল্ডিং ট্যাক্স বিষয়ে নগরভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সকাল ১১টায় সিলেট প্রেসক্লাব ও বিকেল ৩টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাব নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।

সভায় সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনায় এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিলেট সিটি করপোরেশন উন্নয়ন সক্ষমতা বাড়াতে সম্প্রতি মাঠ জরিপ সম্পন্ন করেছে। এর আলোকে নাগরিকদের সব স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে সিসিকি।’ তিনি দাবিকৃত গৃহ কর আদায়ে নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন এবং সিসিকের ২৭ ওয়ার্ডে নাগরিক সচেতনা সৃষ্টি ও কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করার কার্যক্রম হাতে নেওয়ার কথা জানান।

সভায় বক্তব্য দেন, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ রেনু, জেলা প্রেসক্লাবের ছামির মাহমুদ প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন, সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব বিধায়ক রায় চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, সচিব ফাহিমা ইয়াসমিন, সম্পত্তি কর্মকর্তা ইয়াসমিন নাহার রুমা, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান খান, প্রধান এসেসর চন্দন দাস, জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ প্রমুখ।

এসএইচ/আরসি-১৩