প্রথমেই পাবে নগরের শিক্ষার্থীরা, পরে উপজেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক


নভেম্বর ০৪, ২০২১
০১:১০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ০৪, ২০২১
০১:১০ পূর্বাহ্ন



প্রথমেই পাবে নগরের শিক্ষার্থীরা, পরে উপজেলা

সিলেটে শীঘ্রই শুরু হচ্ছে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম। প্রথমদিকে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় এ টিকা দেওয়া শুরু হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়ার পর টিকা পাবে উপজেলার শিক্ষার্থীরা। 

সিলেটের জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা কমকর্তা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের এক ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে নগরভবনে। 

সভাসূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে আইসিটি বিভাগে তালিকা পাঠানোর পর টিকার সার্ভারে শিক্ষার্থীদের তথ্য আপলোড হবে। পরে শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন করে টিকা নেবে। দ্রæত যাতে সার্ভারে শিক্ষার্থীদের তথ্য আপলোড প্রক্রিয়া শেষ হয় সেজন্য জেলা সিভিল সার্জন ও সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সার্ভারে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন হয়ে গেলেই সিটি করপোরেশন এলাকায় দ্রæত টিকা দেওয়া শুরু হবে।

জানা গেছে, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে। ফাইজারের টিকা দিতে হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে। তবে সিলেটের উপজেলাগুলোর মধ্যে শুধু গোয়াইনঘাট উপজেলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ রয়েছে। এ অবস্থায় সিলেটের জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম বাকি উপজেলাগুলোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের দ্রæত সময়ের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ব্যবস্থা করা অথবা বিকল্প স্থান নির্ধারণের নির্দেশনা দিয়েছেন।

এদিকে, সিলেটে সিটি করপোরেশন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো, পুলিশ লাইনস উচ্চ বিদ্যালয়, রসময় উচ্চ বিদ্যালয় ও আম্বরখানা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সিটি করপোরেশন এলাকার যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ নেই সেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নগর ভবনে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। 

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলা ও মহানগরের ১ লাখ ৯২ হাজার ১৫৯ জন শিক্ষার্থীর তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে। এ সব শিক্ষার্থীর বয়স ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তথ্য প্রেরণকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৬৯ জন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আর ২৯ হাজার ২৯০ জন মাদরাসার শিক্ষার্থী।

জেলা শিক্ষা অফিস আরও জানায়, প্রথম ধাপে সরকারি বিদ্যালয়, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ইআইআইএন  নাম্বার রয়েছে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পাঠানো হয়েছে। পরে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও তথ্যও পাঠানো হবে। এছাড়া যেসব শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধনে জটিলতা রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানকে দ্রæত তা সংশোধন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ধাপে ধাপে তাদের তালিকাও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।  

এ সব বিষয়ে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত সিলেট মিররকে বলেন, ‘ফাইজারের টিকা দিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের প্রয়োজন। তাই প্রথম ধাপে সিটি করপোরেশন এলাকার শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শুরু হবে। পরে উপজেলার শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। এছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকার যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ রয়েছে সেখানে টিকাকেন্দ্র করা হবে। আর যেসব প্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ নেই ওইসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা নগর ভবনে এসে টিকা নেবে।’

কবে থেকে টিকাদান শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানও শুরুর সময় চূড়ান্ত হয়নি। আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত হবে।’

সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ এসএম আবদুল ওয়াদুদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘সভায় কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেহেতু ফাইজারের টিকা দিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের প্রয়োজন তাই সিলেটের উপজেলাগুলোতে কিভাবে টিকাদান হবে সে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে সিলেটের একটি উপজেলা ছাড়া বাকি উপজেলায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ব্যবস্থা নেই। তাই সিলেটের বাকি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ব্যবস্থা করা অথবা বিকল্প স্থান নির্ধারণের নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এ বিষয়ে তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ রয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থী নগরভবনে টিকা গ্রহণ করবে।’

এ অবস্থায় জেলায় প্রথমে সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকা দেওয়া হবে। পরে উপজেলায় দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের তথ্য দ্রুত সার্ভারে আপলোডের ব্যবস্থা করতে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এলাকার কোনো শিক্ষার্থীর তথ্য সার্ভারে আপলোড হয়নি। এ বিষয়ে আমি এমআইএসে যোগাযোগ করেছি। তারা জানিয়েছেন শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে। ফলে এখন বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সার্ভারে শিক্ষার্থীদের তথ্য আপলোডের ব্যবস্থা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সার্ভারে তথ্য আপলোড হলে শিক্ষার্থীদের কাছে একটি কোড আসবে। পরে তারা সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবে।’ নগরে কমপক্ষে দুইশ শিক্ষার্থীর নিবন্ধন সম্পন্ন হলেই টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এনএইচ/আরসি-১০