তাহিরপুরের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম, আবাসন সংকটে দুর্ভোগ

আবির হাসান-মানিক, তাহিরপুর


নভেম্বর ০৫, ২০২১
১২:০১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ০৫, ২০২১
০২:৩৪ অপরাহ্ন



তাহিরপুরের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম, আবাসন সংকটে দুর্ভোগ
# বিদ্যালয়েই রাত্রিযাপন # শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত

১৩৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮২টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক ও ১৭টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। দপ্তরি কাম প্রহরী নেই শতাধিক বিদ্যালয়ে। বছরের পর বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন অনেক সহকারী শিক্ষক।

আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় অনেককে বিদ্যালয়েই রাত্রিযাপন করতে হয়। ফলে ব্যাহত হচ্ছে সুনামগঞ্জের হাওরবেষ্টিত দুর্গম উপজেলা তাহিরপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে একযোগে জাতীয়করণের পর এ উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৪টিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শূন্যপদ রয়েছে দুর্গম যোগাযোগপ্রবণ শ্রীপুর উত্তর ও শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বিদ্যালয়গুলোতে।

ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্গম এলাকা হওয়ায় এ দুটি ইউনিয়নের বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক বদলি হয়ে আসতে চান না। যারাই রয়েছেন তাদেরকে নানা দুর্ভোগ-ভোগান্তির মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। বর্ষায় নৌকায় আর হেমন্তে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে চলাচল করতে হয়। তাই যাতায়াতে গুণতে হয় বাড়তি টাকাও। অনেককে নিজ বাড়ি থেকে স্কুল দূরবর্তী হওয়ায় খুঁজে নিতে হচ্ছে ‘লজিং’। আবার আবাসন ব্যবস্থা না হওয়ায় কেউ কেউ বিদ্যালয়েই রাত্রিযাপন করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘২০১২ সালে এখানে যোগদানের পর থেকেই শিক্ষক সংকট ছিল। যে কারণে অন্যত্র বদলি হতে পারিনি। স্যানিটেশন ও আবাসন ব্যবস্থা এতই নাজুক যে, প্রথমদিকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। সমস্যা না মেটায় কখনও বিদ্যালয়ে আবার কখনও অন্যের বাড়িতে রাত যাপন করছি।’

রজনীলাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হুমায়ুন আযাদ বলেন, ‘দপ্তরি কাম প্রহরী না থাকায় স্কুলের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজগুলো শিক্ষকদের করতে হচ্ছে।’

জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘১০ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছি। এখানে শিক্ষক সংকটও প্রকট। দুর্গম এলাকা হওয়ায় বদলি হয়ে কেউ আসতেও চায় না। ন্যাশনাল সার্ভিস থেকেও কোনো জনবল আমার স্কুল পায়নি।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আবুল খায়ের সিলেট মিররকে বলেন, উপজেলার দুর্গম বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট নিরসনে স্থানীয় যোগ্যতাসম্পন্ন নির্বাচিত প্রার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদ্যালয়গুলোর মূল্যবান অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দপ্তরি কাম প্রহরী নিয়োগও জরুরি।

ন্যাশনাল সার্ভিস থেকে চাহিদা অনুযায়ী জনবল না পাওয়া প্রসঙ্গে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, হয়ত আশেপাশে নির্বাচিত কাউকে পাওয়া যায়নি। যে কারণে এমনটি হয়েছে। তাছাড়া দূরবর্তী এলাকা হলে যাতায়াত খরচও বেশি পড়ছে। সমস্যা সমাধানে বিষয়গুলো সমন্বয়ের চেষ্ট করছি।

আরসি-০১