সিলেটে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক


নভেম্বর ০৬, ২০২১
০৫:০১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ০৬, ২০২১
০৫:০১ পূর্বাহ্ন



সিলেটে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার শঙ্কা
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। বৃহস্পতিবার থেকেই কার্যকর হয়েছে ডিজেল ও কেরোসিনের নতুন দাম। এক লাফে লিটার প্রতি বেড়েছে ১৫ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে করে পরিবহন ও কৃষি ব্যয় বাড়বে, প্রভাব পড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে।

নতুন ঘোষণায় দেশের বাজারে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য ধরা হয়েছে ৮০ টাকা করে। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে অপরিবর্তিত ছিল জ্বালানি পণ্য দুটির মূল্য। ২০১৬ সালের এক ঘোষণায় জ্বালানি পণ্য দুটির দাম কমিয়ে লিটারপ্রতি ৬৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল সরকার। সে হিসাবে দেশে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১৫ টাকা করে।

জ্বালানি পণ্য দুটির মূল্যবৃদ্ধি দেশের পরিবহন ও কৃষিখাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে একদিকে পরিবহন খাতে ভাড়া বাড়বে, অন্যদিকে উৎপাদন ব্যয় বাড়তে যাচ্ছে কৃষি খাতে। এর প্রভাব পড়বে সিলেটের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে। কারণ সিলেটের বাজারে শাক-সবজি থেকে প্রায় সবকিছুই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসে। তাই পরিবহনের ভাড়া বা উৎপাদনমূল্য বাড়লে সিলেটের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দামও বাড়বে।

সোবহানীঘাট কাঁচাবাজারের রাজু এন্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী সাজু আহমদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পণ্য পরিবহনে এখন বেশি টাকা ব্যয় হবে। তাই বাধ্য হয়েই আমাদেরকে পণ্যমূল্য বাড়াতে হবে। এতে করে খুচরা বাজারে ভোক্তাদের উপর চাপ বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে মরিচের কেজি ছিল ২৫০ টাকা। এখন নেমেছে ১১০ টাকায়। একইভাবে পেঁয়াজসহ অন্যান্য দ্রব্যের দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বাজারে আবারও সবকিছুর দাম বাড়বে।’

এদিকে, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হচ্ছে। এতে করে তাৎক্ষণিকভাবে বাজারে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন নগরের চালিবন্দর এলাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ব্যবসায়ী নন্দন দেব। তিনি বলেন, ‘সিলেটে চাল থেকে শুরু করে সবকিছুই দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ক্রয় করে নিয়ে আসতে হয়। তাই তেলের দাম বাড়লে পণ্যের দাম বাড়বে। আর পরিবহন ধর্মঘট হলে তো তাৎক্ষণিক বাজারে প্রভাব পড়বে। কারণ বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য আসবে না।’

এদিকে, পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, এক লাফে ১৫ টাকা বৃদ্ধিতে তারা বিপাকে পড়েছেন। কারণ জ্বালানি তেলের দাম একলাফে বাড়লেও তারা একলাফে ভাড়া বাড়াতে পারবেন না। এছাড়া ভাড়া বাড়ার কারণে ট্রিপও কমবে।

নগরের ক্বিনব্রিজ স্ট্যান্ডের মিনিট্রাক চালক আব্দুস সাত্তার সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমি ১৪ বছর ধরে ট্রাক চালাই। কিন্তু কখনও একলাফে তেলের দাম ১৫ টাকা বাড়তে দেখিনি। এটা আমাদের উপর পুরোপুরি জুলুম হয়ে যাচ্ছে। কারণ তেলের দাম বাড়লেও আমরা ভাড়া বেশি বাড়াতে পারব না।’

সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শাব্বীর আহমদ ফয়েজ সিলেট মিররকে বলেন, ‘করোনাকালে পরিবহন খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পর আমরা যখন একটু একটু করে আবার দাঁড়াতে চেষ্টা করছি তখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। তাও আবার একলাফে ১৫ টাকা। যা একেবারেই অযৌক্তিক।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিজেলের দাম বাড়ায় আমরা দুই দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হব। প্রথম দিকে ভাড়া নিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে ঝামেলা তৈরি হবে। ট্রিপের সংখ্যাও কমে যাবে।’

কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সিলেট বিভাগীয় সভাপতি জামিল চৌধুরী মনে করেন আলোচনা না করে এভাবে দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘কোনো কিছুর দাম বাড়াতে হলে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। কিন্তু তা না করেই সরকার অযৌক্তিকভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। যার খেসারত দিতে হবে সাধারণ মানুষকে। বিশেষ করে সিলেটের বাজারে সব ধরনের জিনিষিপত্রের দাম বাড়বে। কারণ সিলেটের কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমদানি করতে হয়। সেচ কাজেও ডিজেলেরে ব্যবহার হয়ে থাকে। ফলে বাড়বে কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন ব্যয়ও।’  

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে দেশেও দাম বাড়ানো হয়েছে। কেন এ বিষয়ে সরকার ভুর্তকি দিল না। ভর্তুকি দিলে জনগণের উপর এত বেশি চাপ বাড়ত না। আমরা অবিলম্বে তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চাই।’

এনএইচ/আরসি-০১