যে কারণে খুন হলেন কমলগঞ্জের ব্যবসায়ী নাজমুল

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি


নভেম্বর ০৬, ২০২১
০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ০৬, ২০২১
০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন



যে কারণে খুন হলেন কমলগঞ্জের ব্যবসায়ী নাজমুল
# কয়েকমাস নজর রাখা হয় নাজমুলের ওপর # প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার চার

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের চৈত্রঘাট বাজারের ব্যবসায়ী নেতা নাজমুল হাসানকে (৩৬) হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি তফাজ্জুল আলী (৩৫) ও তার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকার কমলাপুর এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।

তফাজ্জুল আলী ও তার সহযোগী খালেদ মিয়া (১৩) দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পাসপোর্ট, এয়ারটিকেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোবাইল ফোন, সিমকার্ড, দেরহাম ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রতিশোধ নিতেই নাজমুল হাসানকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন মামলার প্রধান আসামি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুুপুরে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া। 

তিনি বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম মুজাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে মৌলভীবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল হত্যা মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তফাজ্জুল আলী ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তফাজ্জুল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ব্যবসায়ী নাজমুল গত ২ জুন হামলা চালিয়ে জুয়েল মিয়াকে পঙ্গু করে দিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই ঘটনার পর নাজমুলের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে তারা।  পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তারা ২ থেকে ৩ মাস ধরে নাজমুলের ওপর নজর রাখে। নাজমুল বিষয়টি বুঝতে পেরে কমলগঞ্জ বাজারে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। প্রয়োজন ছাড়া বাজারের বাইরে যেতেন না।’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘আসামিরা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দৈনিক চুক্তিতে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে। ঘটনার দিন ৩১ অক্টোবর চৈত্রঘাট কালী মন্দিরের সামনে গাড়িটি অপেক্ষারত ছিল। ওই দিন বাজার কিছুটা জনশূন্য ছিল। নাজমুল একা থাকায় তফাজ্জুলের নেতৃত্বে হামলা করে আসামিরা দ্রুত পালিয়ে যায়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হামলার পর বিদেশে পালিয়ে যাবার জন্য তারা টিকেট কেটে রেখেছিল।’

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া আরও বলেন, ‘মূলত বাজারে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নাজমুল ও তফাজ্জুলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব ছিল। এর আগেও তাদের মধ্যে কয়েকবার মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বাজারে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। কিন্তু তারপরও একটি হত্যার ঘটনা ঘটে যায়। এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে সারাদেশে আলোড়ন তৈরি হয়। জেলা পুলিশ এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে আইগত ব্যবস্থা নেবে।’

এদিকে, গত সোমবার হত্যাকাণ্ডে ভাড়ায় আনা মাইক্রোবাস জব্দ করে চালক আমির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছিল কমলগঞ্জ থানা পুলিশ। সোমবার রাতে রাজনগর থেকে জুয়েল মিয়া নামে তালিকাভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ব্যবসায়ী নাজমুল সড়কের পাশ দিয়ে হেটে তার বাসার দিকে যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে একটি মাইক্রোবাস থেকে নেমে হামলাকারীরা তাকে ধাওয়া করে। তিনি সড়কে পড়ে গেলে চারজনের অধিক ব্যক্তি দা দিয়ে পায়ে কুপাতে থাকে। এ সময় ভাড়ায় আসা মাইক্রোবাস দ্রæত মৌলভীবাজারের দিকে চলে যায়। চারজন ওই ব্যবসায়ীর পায়ে কুপানোর সময় একজন ব্যবসায়ীর মাথায় ও দেহে লাথি মারতে তাকে। কুপানোর সময় বেশ কয়েক ব্যক্তি এগিয়ে এলেও তাকে কেউ সাহায্য করেননি। নাজমুল অচেতন হয়ে পড়ে থাকেন। হামলাকারীরাও পূর্ব দিকে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে নিরাপদে চলে যায়।

পুলিশ জানায়, ধলাই নদীর বালুঘাট নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত দেড় মাসে এই দুই পক্ষের মাঝে তিনবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। কমলগঞ্জ থানায় মামলাও হয়েছে। তাছাড়া ব্যবসায়ী নাজমুল হামলাকারী চারজনের নাম প্রকাশকালে ভিডিও লাইভে বলেছিলেন আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি রহিমপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন তফাজ্জুল। এ নিয়ে তার সঙ্গে বিরোধ ছিল দীর্ঘদিনের।

এসএইচ/আরসি-০২