সিলেট নগরে পদে পদে বিড়ম্বনা

নিজস্ব প্রতিবেদক


নভেম্বর ১১, ২০২১
০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ১১, ২০২১
০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন



সিলেট নগরে পদে পদে বিড়ম্বনা

সড়কে ছোট-বড় খানাখন্দ। উন্মুক্ত নালা-নর্দমায় আছে বেখেয়ালে পড়ে যাওয়ার ভয়। নেই পর্যাপ্ত সড়কবাতিও। আছে যানজট আর ফুটপাত বেদখলের ঘটনা। বিশুদ্ধ পানির সংকটও তীব্র। দিন-রাত সমানতালে কামড়ায় মশা। নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পড়ে থাকে ময়লা-আবর্জনা।

\কিছু কিছু এলাকায় আছে জলাবদ্ধতার সমস্যাও। পদে পদে বিড়ম্বনার এই চিত্র সিলেট নগরের। দীর্ঘদিন ধরে এসব সমস্যা জিঁইয়ে থাকলেও এসব সমাধানে নেই কার্যকর উদ্যোগ। ফলে নগরবাসী কেবল সমস্যার আবর্তেই ধুঁকছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের ২৭টি ওয়ার্ডের অন্তত অর্ধশতাধিক এলাকায় উন্মুক্ত নালা-নর্দমা রয়েছে। সন্ধ্যার পর পথচলতি মানুষের এসব নর্দমায় পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। অনেকে এসব নর্দমায় পড়ে আহতও হয়ে থাকেন। অধিকাংশ পাড়া-মহল্লায় পর্যাপ্ত সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর থেকেই এসব স্থান অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকে। এই অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে প্রায়ই ছিনতাই ও অপকর্মের ঘটনা ঘটায় দুবৃত্তরা। যদিও অনেকে হয়রানির ভয়ে থানায় এ নিয়ে অভিযোগও করেন না।

নগরের জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, লামাবাজার, আম্বরখানা, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ ও সোবহানীঘাট এলাকায় প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। এ ছাড়া সন্ধ্যার পর থেকেই বন্দরবাজার, সুরমা মার্কেট ও আম্বরখানা এলাকার ফুটপাত থেকে শুরু করে মূল সড়ক দখল করে ভ্রাম্যমাণ হকারেরা ব্যবসা-বাণিজ্য চালায়। এতে পথচলতি মানুষকে চরম দুর্ভোগে পোহাতে হয়। সোনারপাড়া, সেনপাড়া, ঘাসিটুলাসহ অন্তত ১৫টি এলাকায় রয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট।

নগরের প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই রয়েছে মশার যন্ত্রণা। নগরের কালীঘাট এলাকার ডাস্টবিনের আশপাশে মূল সড়কেই ময়লা-আবর্জনার স্তুপ দিনের বেলাতেই চোখে পড়ে। এ ছাড়া নগর দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীর পাড়ে স্থানীয়রা দেদারসে ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন।

নগরবাসীর অভিযোগ, নাগরিক দুর্ভোগ চরমে পৌঁছলেও এসব সমাধানে সিটি কর্তৃপক্ষ খুব যে আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছে, তা নয়। অথচ একটু আন্তরিক ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিলেই এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান করা সম্ভব।

একাধিক সচেতন নাগরিক জানিয়েছেন, আস্তে আস্তে নগরের বাসিন্দা বাড়ছে। সিটি করপোরেশনের আয়তনও সম্প্রতি প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। তাই আগে থেকেই পরিকল্পনামাফিক এই নগরের বৃদ্ধি নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যতে সিলেট নগর একটা গিঞ্জি শহরে পরিণত হবে। নগরায়ন দ্রুত ঘটলেও রাস্তাঘাট সে অনুযায়ী বড় হয়নি। বাড়েনি সেবার মান। ফলে সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা হয়েও মানুষজন দুর্ভোগের পাল্লায় পড়েছেন।

সিলেট নগরের আম্বরখানা থেকে শাহী ঈদগাহ এবং নাইওরপুল থেকে টিলাগড়মুখী সড়কের আশপাশের এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, বছরের পর বছর ধরে নগরের গুরুত্বপূর্ণ এই দুটো সড়ক ভাঙাচোরা অবস্থায় থাকলেও সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় সড়ক দুটোতে সারক্ষণই ধুলোবালি ওড়াওড়ি করে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তবে এ দুটো সড়কসংস্কারের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বলে সিটি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা জানিয়েছে, নগরে ২৫ শতাংশ সড়ক ভাঙাচোরা অবস্থায় আছে। এসব সড়ক সংস্কারে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে এখন কাজ চলছে। কিছুদিন আগে বৃষ্টিপাত থাকায় ভাঙাচোরা সড়ক থাকলেও সিটি কর্তৃপক্ষ সংস্কারে উদ্যোগ নিতে পারেনি। এখন শুষ্ক মৌসুম থাকায় কাজ শুরু হয়েছে।  

সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সব ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পবাবদ সিটি করপোরেশন প্রায় ২৪৬ কোটি টাকার একাধিক প্রকল্পের কাজ করছে। এসব কাজ শেষ হলে নগরের সিংহভাগ সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। সিটি কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, এরই মধ্যে নগরে জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেকটাই দূর হয়েছে। বাকিটুকু দূর করতে নগরের ছড়া-খাল উদ্ধার করে সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দূর করতে সিটি কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছে। তেমনই সড়কবাতিরও স্থাপন কাজ চলছে। নিয়মিতভাবে নগর পরিচ্ছন্ন রাখতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করছেন। এ ছাড়া মশক নিধন ওষুধও ছিটানো হয় নিয়মিত। উন্মুক্ত নালা-নর্দমায় ঢাকনা বসাতেও কাজ করা হচ্ছে। প্রতি বছরই ঢাকনা বসাতে একাধিক প্রকল্প নেওয়া হয়।

নগরবাসীর দুর্ভোগের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, নাগরিক দুর্ভোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আমরা দেখে থাকি। বিগত সময়ের তুলনায় এখন নগরে সমস্যার পরিমাণ কম। যানজট, জলাবদ্ধতা, বিশুদ্ধ পানির সংকট এবং সড়কবাতির অপ্রতুলতাসহ যাবতীয় সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়েছে। টুকটাক যেসব সমস্যা কিংবা সংকট আছে, সেসবও দ্রæততার সঙ্গে সমাধান করা হবে। 

এএন/আরসি-১৪