জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক


নভেম্বর ১৪, ২০২১
০৩:২৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ১৪, ২০২১
০৩:২৬ পূর্বাহ্ন



জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার
দাম বেড়েছে আটা-ময়দার, সবজিতেও নেই স্বস্তি

নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের উপর জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির স্পষ্টতই  প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি-পেশার মানুষের। চাহিদার তুলনায় কমপণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কেউ কেউ।

ক্রেতাদের মন্তব্য, সরকার তেলের দামও তারা বাড়িয়েছে। আবার একটা নাটুকে ধর্মঘট করে, জনগণকে ভোগান্তি দিয়ে, সিন্ডিকেট করে তারাই আবার ভাড়া বাড়িয়েছে। এখন তো একটাই ইস্যু- জ্বালানি তেলের দাম বাড়তি। এটাকে পুঁজি করে সবজি সহ সব জিনিসের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

নগরের একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এবার অস্থির হয়ে ওঠেছে আটা ও ময়দার বাজার। দুই কেজি আটার প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত।

খোলা আটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩৮ টাকা। এই মানের আটার কেজিপ্রতি দর ছিল ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা।

ময়দার দামও বাড়তি। দুই কেজি ময়দার এক প্যাকেটের দাম এখন ১০৪ টাকা। সাত-আট দিন আগেও এই দর ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকার মধ্যে। গত সপ্তাহে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হওয়া খোলা ময়দার কেজির দাম এখন ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন ও পাইকারি পর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে বলে দাবি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

একাধিক বিক্রেতা জানান, আটা-ময়দা, তেল চিনি এসব পণ্যের দাম আগে থেকেই বাড়তি। এখনও আগের মজুদ পণ্য বিক্রি করছেন তিনি। তবে ডিজেলের দাম বাড়ার পর নতুন করে যেসব পণ্য বাজারে আসবে, সেগুলোতে খরচ বেশি পড়বে। এতে সব পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়বে বলে তার আশঙ্কা।

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তা বারবার বাড়ানো হচ্ছে। গত ৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন পাম তেল বিক্রি হয়েছে এক লাখ চার হাজার ৯৬৬ টাকা। এক সপ্তাহ পর গত মঙ্গলবার সাত হাজার ১০৭ টাকা ৯৪ পয়সা কমে প্রতি টন পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৫৮ টাকায়। কিন্তু দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম কমার পরিবর্তে এই এক সপ্তাহে মণপ্রতি বেড়েছে ৪৫০ টাকা।

গত মঙ্গলবার প্রতি মণ পাম তেল পাইকারি বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার ৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ছিল চার হাজার ৬০০ টাকা।

একইভাবে এক সপ্তাহ আগে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে প্রতি টন এক হাজার ৪০০ ডলার, বর্তমানে তা কমে এক হাজার ১৮০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। এ সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম টনপ্রতি কমেছে ২২০ ডলার।

গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে মণপ্রতি সয়াবিন তেলের বুকিং মূল্য ছিল পাঁচ হাজার ২৭৬ টাকা। এক সপ্তাহ পর ৭৬৫ টাকা কমে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৫১১ টাকায়। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে মণপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৪৬০ টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ সয়াবিন তেল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার ৪৬০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে যা বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার টাকায়।

ব্রয়লারসহ সব ধরনের মুরগির দাম গত সপ্তাহে কেজিতে ১৫ টাকা করে কমলেও চলতি সপ্তাহে তা আবার বেড়ে আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা।

গতকাল শুক্রবার নগরের বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৬৫ টাকা থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে, যা গত সপ্তাহে কমে ১৫০ টাকায় নেমেছিল।

ব্রয়লারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লেয়ার মুরগিও বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৪০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ২৩০ টাকায় নেমেছিল। আর সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, যা একমাস আগে ছিল সাড়ে ৩০০ টাকা। দুই মাস আগে ২২০ থেকে ২৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত এ জাতের মুরগি।

বাজারে এসেছে শীতের সবজি। তবে দামে উত্তাপ। অবশ্য সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির দামে খুব একটা হেরফের হয়নি।

সবজির পাশাপাশি দাম অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দাম। সেইসঙ্গে আলু ও পেঁয়াজের দামও কোনো পরিবর্তন আসেনি। আর ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ১১৫ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের কেজি গত সপ্তাহের মতো ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আগের মতই সব থেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন গাজর ও টমেটো। মানভেদে এক কেজি গাজর ১০০ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজি দুটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

তবে গত সপ্তাহে কিছুটা দাম বাড়লেও এ সপ্তাহে শিমের দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শিম এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আর গত সপ্তাহের মতো ঢেঁড়শের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা।

এছাড়া পটল, বরবটি, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। ফুলকপির পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং বাঁধাকপির পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অপরিবর্তিত থাকার তালিকায় থাকা অন্য সবজির মধ্যে ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া কাঁচকলার হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লাল শাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, মুলা শাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাক বিক্রি হচ্ছে। আর পালন শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।

মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে টাকি মাছ। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। ১ থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি। নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি।

আরসি-১৩