নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ২১, ২০২১
০১:৫৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ২১, ২০২১
০১:৫৭ পূর্বাহ্ন
করোনা মহামারিতে একদিকে কাজ হারিয়ে বেকারত্বের অভিশাপ অন্যদিকে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী মূল্যে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জীবন এখন ওষ্ঠাগত। চাল, ডাল, আটা, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যেই দাম বাড়ার কারণে অসহায়, হতদরিদ্র ও কর্মহীন মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সর্বব্যাপী প্রভাব পড়ছে। যানবাহনে ভাড়া বেড়েছে। কৃষির সেচ খরচ থেকে শুরু করে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সবকিছুতেই দেখা দিয়েছে ঊর্ধ্বগতি, শেষ পর্যন্ত যার চাপ পড়ছে ভোক্তাদের ওপরই।
নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতিতে মানুষের পকেটে টান পড়েই আছে, তার ওপরই যোগ হলো কেরোসিন ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি।
বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও অ-খাদ্য সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে মুদ্রাস্ফীতির একটি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে মুদ্রাস্ফীতির চাপ আরও বেড়েছে। কারণ এই মূল্যবৃদ্ধিতে যাত্রীদের ভ্রমণ খরচ এবং পণ্য পরিবহন খরচ বেড়েছে। শেষপর্যন্ত এসব চাপের বোঝা পড়েছে ভোক্তাদের ওপর।
ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাস, ট্রাক, কভার্ডভ্যানের ভাড়ায়। লঞ্চসহ নৌযানের ভাড়াও বেড়েছে। আর এর পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে বহু খাতে। ট্রাক কিংবা নৌযানের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় শাক-সবজি থেকে শুরু করে যে সব পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বাজারে আসে, তার সবেরই দাম বেড়েছে। ফলে দেশের সব পরিবারেরই মাসিক খরচের হিসাব নতুন করে সাজাতে হচ্ছে।
বেশ কিছু দিন থেকে বাজারের চিত্রটা অনেকটা এরকমই। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে আসার পর ক্রেতার নাভিশ্বাস আরও দীর্ঘ হচ্ছে। তেমনি পণ্যমূল্যের অস্থিরতায় বিক্রেতারাও জানাচ্ছেন অস্বস্তির কথা।
বাজারগুলোতে প্রায় সব ধরনের আটা-ময়দা ও চালের দাম বেড়েছে। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় মূলত এই দাম বেড়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়িরা ।
বিক্রেতারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন খরচও বেড়েছে। তাই আটা-ময়দা ও চালের দাম বেড়েছে। কেজিতে আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা।
অন্য দিকে বাজারে মিনিকেট, নাজির এবং আটাশ চালের দাম বস্তা প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
নগরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভোজ্য তেলের লিটার ১৬০ টাকার ওপরে। চিনি ৮৫ টাকা, আটা ৩৫-৩৮ টাকা, পেয়াঁজের কেজি এখনো ৫০ টাকা। ‘গরিবের খাদ্য ডাল’ এর দামও আকাশচুম্বি। ইন্ডিয়ান ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ এবং দেশি ডাল ১১০-১২০ টাকায়।
শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, রসুনের কেজি ৮০ থেকে ১৩০ টাকা, দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। চায়না আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। হলুদের কেজি ১৬০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় বানিজ্য সংস্থা-টিসিবি পণ্য মূল্য বাড়িয়ে অতি সিমিত আকারে চিনি, ডাল, সয়াবিন তেল ও পেয়াঁজ বিক্রি করলেও তা সিন্ধুতে এক ফোঁটা বিন্দু মতই।
বাজারে অপরিবর্তিত আছে ডিমের দাম। লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজনে দাম বেড়েছে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। সোনালি (কক) মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।
ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৫০ টাকা। ২৬০ টাকা কেজি। বেড়েছে লেয়ার মুরগি ২০ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়।
নগরের কাঁচাবাজারগুলোতে শীতের সবজি উঠতে শুরু করলেও দাম বেশি; বিশেষ করে বিদেশ থেকে আসা সবজির দর একটু বেশিই চড়া।
আগের চেয়ে সরবরাহ বাড়তে শুরু করলেও পেঁপে ছাড়া কোনো সবজির দাম ৫০ টাকার নিচে নেই। ভারতীয় নতুন আলু খুচরায় কেজিপ্রতি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এছাড়া আমদানি করা টমেটো ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা এবং চীনের গাজর ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একশ টাকার ওপর দেশি সবজির মধ্যে কাঁচামরিচ ১০০ থেকে ১৪০ টাকা এবং গোল বেগুনি রঙয়ের বেগুন ৬০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
নতুন আলু গত দুই/তিন দিন ধরে বাজারে উঠেছে। আর গত এক সপ্তাহ ধরে টমেটো, গাজর ও কাঁচামরিচের দামে কোনো পরিবর্তন নেই বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে করলার কেজি ৮০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, মূলা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ছোট আকারের প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মাঝারি আকারের লাউ ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
তবে সপ্তাহ খানেক আগে ১০০ টাকার বেশি দরে বিক্রি হওয়া শিমের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রতিকেজি শীতকালীন এ সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছও। অন্যদিকে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ মাছের কেজি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, নলা মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি আর চিংড়ির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে। এছাড়া শিং ও টাকি মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, শোল মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, তেলাপিয়া ও পাঙাস ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
আরসি-১১