শহীদ আহমদ চৌধুরী, ফেঞ্চুগঞ্জ
নভেম্বর ২২, ২০২১
০৫:১৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ২২, ২০২১
০৫:১৫ পূর্বাহ্ন
ফেঞ্চুগঞ্জের পালবাড়ি-জেটিঘাট সড়কে দুই যুগ ধরে হয়নি কোনো উন্নয়ন কাজ। কোথাও গভীর আবার কোথাও অগভীর গর্ততো আছেই। মাঝে মধ্যে সূঁচালো রডের মাথা খাড়া হয়ে রয়েছে। বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে সড়কটি। সড়কটিতে যানবাহন চলাচল যেমন বিপদজনক, তেমনি রাতে জনসাধারণের চলাচলেও বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি (এনজিএফএফ) লি. (বর্তমান শাহজালালাল সারকারখানা) স্থাপনের পর স্বল্পমূল্যে সার পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃপক্ষ আরসিসি ঢালাই করে সড়কটি নির্মাণ করে। ফলে কোনো কাজ ছাড়াই অনেক দিন ঠিকঠাক ছিল সড়কটি। অনেক দিন বন্যার পানির নিচে থাকলেও সড়কটির তেমন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এক সময় নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় কার্গো আসা কমতে থাকে। বিসিআইসির সার পরিবহন নদী পথে কমে যাওয়ায় তারাও এ সড়কটি ব্যবহার কমিয়ে দেয় এবং রক্ষণাবেক্ষণের খেয়ালও ছেড়ে দেয়। তাছাড়া জেটিঘাটে সারকারখানার পানির পাম্পের পাশে ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র (সাবেক) ও বর্তমান ১৮০ মেগা ওয়াটের পাশাপাশি আরও দুটি বেসরকারি বিদুৎ কেন্দ্র রয়েছে। সব প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ও যন্ত্রপাতি এই সড়ক দিয়ে পরিবহন হলেও কেউই এ সড়ক সংস্কারের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে সড়কটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
গতকাল শনিবার সরেজমিন স্থানীয় পালবাড়ী-জেটিঘাট সড়ক ঘুরে দেখা যায়, পুরো সড়ক জুড়ে ছোটছোট পুকুরের মতো অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও এককটি গর্তের গভীরতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দেখে মনে হয় যেন কোনো এক পাহাড়ি কাঁচা সড়ক। আরসিসি ঢালাই ভাঙার ফলে অনেক স্থানেই রডের মাথা বেরিয়ে রয়েছে। যা মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কটি দিয়ে বর্তমানে বারহাল, ১৮০ মেগাওয়াট বিদুৎ কেন্দ্র হোসাফ, এনার্জি প্রিমা, বারাকা পাওয়ার প্লান্টের পরিবহনসহ গুচ্ছগ্রাম, ভরাউট, জেটিঘাটসহ বিভিন্ন গ্রামের জনসাধারণ চলাচল করেন। বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে চলাচল করে বিভিন্ন ধরনের মালবাহী গাড়ি। বিভিন্ন সময় বিপদের মুখে পড়তে হয় যানবাহনসহ নতুন পথচারীদের। বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। কবে এই সড়কটি শেষবারের মতো কাজ হয়েছে সেটিও কেউ বলতে পারেননি।
এ সড়কে চলাচলকারী পিকআ্যপ ভ্যান চালক সুজন মিয়া বলেন, ‘রাস্তাটির দিকে কারো নজর নেই। বর্ষায় নৌকা চলাচলের মতো অবস্থা হয়েছিল। এখন শীতকাল রাস্তাটি বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। তার পর রস্তার উপর ঢালাই সরে গিয়ে অনেক জায়গায় রড বের হয়ে খাড়া হয়ে রয়েছে। কোনো কোনো জায়গার রডও কেউ কেউ কেটে নিয়েছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা ডা. শৈলেন্দ্র কুমার দাশ বলেন, ‘এই সড়ক সংস্কার করা খুব জরুরি। নয়তো যে কোনো সময় বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে। কর্তৃপক্ষ কেনো যে গুরুত্ব দিচ্ছে না বোধগম্য হচ্ছে না।’
স্থানীয় বাসিন্দা জাবেদ মিয়া বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে সড়কটি ভাঙা দেখছি। এখনও ভাঙা অবস্থায় আছে। কবে যে এর কাজ হবে জানি না, সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালামাল এবং জরুরি যানবাহন চলাচল করলেও কাজ করানোর জন্য কারো কোনো খেয়াল নেই।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের পর থেকে এই সড়কটির আর কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। শেষবার কবে এই সড়কটিতে উন্নয়ন কাজ হয়েছে সে বিষয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি প্রকৌশল কার্যালয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী ইকবাল আহমদের সঙ্গে এ বিষয়ে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকের আলাপ হয়। তিনি জানান, বেশিদিন আগের ফাইল অফিসে থাকে না। তিনি এখানে কিছু দিন আগে যোগ দিয়েছেন, আগের সহকারী প্রকৌশলী থাকাকালীন চলতি বছর পালবাড়ি থেকে জেটিঘাট সড়ক টেন্ডারের জন্য ফান্ড নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষ। পরে শাহজালাল কর্তৃপক্ষ জানায় তারা এই সড়কের টেন্ডারের পক্রিয়া শুরু করেছে। যার ফলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ আর তা বাস্তবায়ন করেনি।
এই বিষয়ে জানতে শাহজালালাল সারকারখানার জিএম (প্রশাসন) এ টি এম বাকীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ হলে তিনি টেন্ডার হয়েছে বলে জানান। তবে কবে হয়েছে বা কোন অবস্থায় আছে জানতে চাইলে তিনি তার কাছে আর কোনো তথ্য নেই বলে জানান। তিনি জিএম (এমটিএস) মকদুমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এ বিষয়ে মকদুমও তার কাছে কোনো তথ্য নেই জানিয়ে প্রকৌশল অধিদপ্তরের ওয়াহিদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, গত মাসে এ সড়কের ই-টেন্ডার হয়েছে। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়া তিনি এর বেশি তথ্য দিতে পারবেন না বলে জানান।
আরসি-০১