সুনামগঞ্জে মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষায় একবেঞ্চে চার পরীক্ষার্থী

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি


নভেম্বর ২৫, ২০২১
০৫:৪৬ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ২৫, ২০২১
০৫:৫৬ অপরাহ্ন



সুনামগঞ্জে মাধ্যমিকের বার্ষিক পরীক্ষায় একবেঞ্চে চার পরীক্ষার্থী

মহামারি করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধির জটিলতার কারণে প্রায় দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা। 

তবে এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার কড়াকড়ি বিধি নিষেধ থাকলেও সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, এইচ এমপি উচ্চ বিদ্যালয় ও সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের আসন বিন্যাসে মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব। 

পরীক্ষার প্রথমদিনেই প্রতিবেঞ্চে তিন থেকে চারজন করে শিক্ষার্থী বসানো হয়েছে। এতে অভিভাবকরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।

দীর্ঘ বিরতির পর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে সুনামগঞ্জে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা হচ্ছে। এসব নির্দেশনা মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলাকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষাসংক্রান্ত নিয়মাবলি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ সরকারের। 

এজন্য মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, প্রতিদিন তাপমাত্রা মাপা ও ৩ ফুট দূরত্ব রেখে আসন বিন্যাস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শহরের এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যালয়ে পাঠদান কালে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও বার্ষিক পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিনে এসব বিধি-নিষেধের বালাই ছিলো না। বৃহস্পতিবার পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বিদ্যালয়গুলোতে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে। 

এরকম আসন বিন্যাস করার জন্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ক্ষোভ জানিয়ে বলছেন, সরকার করোনাকালে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় শ্রেণিকক্ষে স্বাস্থ্যবিধি বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। এজন্য প্রতিদিন পাঠদান না দিয়ে সপ্তাহে সর্বোচ্চ দুই দিন ক্লাস রুটিন করে দিয়েছে। এবছর বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও অনলাইনে করবে সরকার। এতো শৃঙ্খলার পরেও কেনো প্রতি বেঞ্চে চার জন করে বসানো হচ্ছে প্রশ্ন তাদের।

অভিভাবক লিটন সরকার বললেন, আমার মেয়ে সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আজ তাদের বার্ষিক পরীক্ষা ছিলো। পরীক্ষার রুমে দেখি প্রতি বেঞ্চ ৪ জন করে বসানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবেঞ্চে দুইজন করে বসানোর কথা। কিন্তু পরীক্ষা হচ্ছে প্রতি বেঞ্চে চার থেকে পাঁচ জনকে নিয়ে। 

তিনি বলেন, দুই বছর পর উৎসবমূখর পরিবেশে পরীক্ষা হচ্ছে। সেখানে প্রধান শিক্ষককে এসে আমরা পাইনি।

রাকেস পাল বললেন, সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আমার মেয়ে। আজ তার বার্ষিক পরীক্ষা। এসে দেখি পরীক্ষার রুমে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। প্রতিবেঞ্চে চারজন করে বসানো হয়েছে। এরকম সকল শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে পরীক্ষা না দিয়ে প্রয়োজনে কম করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার দাবি এই অভিভাবকের।

এদিকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, শিক্ষার্থীরা আনন্দঘন পরিবেশে পরীক্ষা দিচ্ছে। এজন্য সবাইকে মাস্ক ও স্যানিটাইজার দেয়া হচ্ছে। তবে জায়গা সংকুলান ও শিক্ষক স্বল্পতার কারণে স্বাস্থ্যবিধির মানার ক্ষেত্রে কিছুটা সমন্বয় করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র (এসসি) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক অসিম চন্দ্র বর্মণ বললেন, বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শিক্ষার্থীরা আনন্দঘন পরিবেশে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বসানোর ক্ষেত্রে কিছুটা সরকারি বিধি-নিষেধের আলোকে আসন বিন্যাস সাজিয়েছি। তবে জায়গা সংকুলান ও শিক্ষক স্বল্পতার কারণে কিছুটা সমন্বয় করেছি। 

সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন বললেন, অনেকদিন পর বিদ্যালয়ে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা খুব উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। এক বেঞ্চে চারজনের আসন বিন্যাস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালে ছাত্রীরা সিট না পেয়ে হঠাৎ করে বসে যায়। পরে আমরা ব্যবস্থা করে ২ জন করে দিয়েছি।।

জেলা শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বললেন, পরাজয়ে ডরে না বীর। আমরা বীরের জাতি। এই করোনা মহামারিকে আমরা জয় করেছি। এই আঠারো মাসের যে ক্ষতি হয়েছে তা আমরা আগামী ছয় মাসে পুষিয়ে নেবো। 

প্রতিবেঞ্চে চার জন করে বসানোর ব্যপারে জানতে চাইলে বলেন, তিন ফুট দূরত্ব রেখে শিক্ষার্থীদের আসন বিন্যাস করা হয়েছে জানিয়ে বলেন, কেউ স্বাস্থ্যবিধির ব্যতয় করলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।

এস আর/বি এন-১২