বড়লেখায় ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে নৌকায় সিল, ১৩৪ ব্যালট উদ্ধার

বড়লেখা প্রতিনিধি


নভেম্বর ২৮, ২০২১
০৫:৩৫ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ২৮, ২০২১
০৫:৩৫ অপরাহ্ন



বড়লেখায় ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে নৌকায় সিল, ১৩৪ ব্যালট উদ্ধার

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছোটলেখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী নাহিদ আহমদ বাবলুর সমর্থকরা জোরপূর্বক প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে  ২০০ ব্যালট পেপার ছিনিয়ে ১৩৪টি ব্যালটে সিল মেরেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

রবিবার (২৮ নভেম্বর) বেলা আড়াইটায় এই ঘটনা ঘটে। এসময় নৌকায় সিল মারা ১৩৪টি ব্যালট উদ্ধার করা হয়। এর আগে একই ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীর এজেন্টদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ভোটাদের কাছ থেকে ব্যালট কেড়ে নিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারার অভিযোগ ওঠে। 

ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা কয়েকজন ভোটার সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেলা আড়াইটায় দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছোটলেখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মাসুদ আহম্মদের কক্ষে ঢুকে নৌকার প্রার্থীর ৪ জন সমর্থক জোরপূর্বক ২০০ ব্যালট ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে ১৩৪টি ব্যালটে সিল মারে। খবর পেয়ে অন্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। 

ছোটলেখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মাসুদ আহম্মদ রবিবার বিকেলে বলেন, হঠাৎ আমার কক্ষে ঢুকে নৌকার প্রার্থীর সমর্থক পরিচয়ে দিয়ে চারজন ২০০ ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে ১৩৪টি ব্যালটে নৌকা প্রতীকে সিল মারে। ভয়ে আমি কাউকে বলতে পারিনি। পরে সবাই দ্রæত এগিয়ে এলে তারা ব্যালট রেখে পালিয়ে যায়। তবে তাদের চিনতে পারিনি।  এসময় নৌকায় সিল মারা ১৩৪টি ব্যালট উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো বাতিল করা হয়েছে।  

অন্যদিকে  মোহাম্মদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে  ভোট দিতে আসা মনারা বেগম নামে এক নারী ভোটার বলেন, নৌকার এজেন্টরা আমার কাছ থেকে ব্যালট কেড়ে নিয়ে নৌকা প্রতিকে সিল মেরেছেন। আমি আমার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারিনি। এসময় হালিমা বেগম নামে আরেক ভোটার এরকম অভিযোগ করেন। বেলা ১২টায় ওই কেন্দ্রে খায়রুন নেছা ও রেহানা বেগম নামের দুই নারী ভোটার অভিযোগ করে বলেন, তাদের কাছ থেকে ব্যালেট নিয়ে নৌকায় সিল মারার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তাদের প্রতিবাদের কারণে তারা (নৌকার এজেন্টরা) ব্যালট ফিরিয়ে দিয়েছে। তারা জানান, ওই কেন্দ্র নারীদের কাছ থেকে ব্যালট নিয়ে নৌকায় সিল মারা হচ্ছে। কেউ ভয়ে কিচ্ছু বলছে না। 

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর আব্দুল কুদ্দুস স্বপনের (আনারস) প্রধান এজেন্ট আব্দুল বাছিত শামীম বলেন, কেন্দ্রের ভেতরে কয়েকজন ভোটারের কাছ থেকে ব্যালট নিয়ে নৌকায় সিল মারা হচ্ছে। আমরা অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পাইনি।

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (ঘোড়া) শাহাব উদ্দিন অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, আমার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। জোরে নারী ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট কেড়ে নৌকায় সিল মারা হয়েছে। আমি কারো কাছে কোনো সহায়তা পাইনি। 

মোহাম্মদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা শ্রীবাস রঞ্জন দাস রোববার বেলা ১২টায় বলেন, এখানে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। কোনো সমস্যা হয়নি। নৌকার এজেন্টরা জোরপূর্বক ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট নিয়ে সিল মারার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সত্য নয়। কেউ হয়তো গুজব ছড়িয়েছে।

প্রসঙ্গত, তৃতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ১০ ইউপিতে রবিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৯২টি কেন্দ্রে ভোগ্রহণ হয়। নির্বাচনে উপজেলার ১০ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৪ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৯০ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৬১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। 

এ. জে/বি এন-০৯