সিলেটে ৪৫০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু হচ্ছে শিগগির

নাবিল হোসেন


ডিসেম্বর ০৫, ২০২১
০৫:১০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ০৫, ২০২১
০৫:১০ পূর্বাহ্ন



সিলেটে ৪৫০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু হচ্ছে শিগগির
# সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনের কাজ সম্পন্ন # প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ শেষ হবে ৯০ দিনে

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনে ৪৫০ শয্যার জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজও দ্রæত শুরু হচ্ছে বলে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন আগামী ৯০ দিনের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। এটি চালু হলে একসঙ্গে সাড়ে চারশ রোগী সেবা পাবেন।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের নতুন আউটডোর ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার ৪৫০ শয্যার ওয়ার্ডকে করোনা ইউনিট হিসেবে তৈরি করার প্রস্তাব দেওয়া হয় চলতি বছরের মাঝামাঝিতে। এ সময় সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশন। অক্সিজেন লাইনের কাজ দেওয়া হয় গণপূর্ত বিভাগকে। সম্পূর্ণ কাজের ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনের জন্য গণপূর্তকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। এরপর গত ২৩ আগস্ট দরপত্র আহŸান করে গণপূর্ত বিভাগ। ইতোমধ্যে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপনের কাজ শেষ করেছে গণপূর্ত বিভাগ। এখন তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

এদিকে ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় হাসপাতালে তৈরি হচ্ছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট। চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর সিসিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়। প্রথমে ছাদে প্ল্যান্টটি স্থাপন করার পরিকল্পনা থাকলেও বর্তমানে হাসপাতালের নতুন আউটডোর ভবনের উত্তর দিকে প্ল্যান্ট তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার সিসিক ও হাসপাতালের কর্মকর্তারা নির্ধারিত স্থানটি পরিদর্শন করেছেন।

জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাইয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে সিলেটে করোনার সংক্রমণ ছিল চ‚ড়ায়। এ অবস্থায় চাপ বাড়ে সিলেট মহানগরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলে। রোগীর চাপে সিলেটের সব হাসপাতালের শয্যা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে একটি সাধারণ শয্যাও পাচ্ছিলেন না স্বজনরা। হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। ঠিক সেই সময়ে ওসমানী হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ৪৫০ শয্যা প্রস্তুত থাকলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা না থাকায় সেটি চালু করা যায়নি। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কয়েক মাসের ব্যবধানে মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি দিলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

এ অবস্থায় গত জুলাইয়ে ওসমানীর করোনা ইউনিট চালুর প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। পরে গত ৩ আগস্ট নগর ভবনে সিলেটের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী নেতাদের নিয়ে সভা করেন তিনি।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান। আর মেয়র জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমতি দিলে সিসিকের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থার কাজ করা হবে।

আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের প্রচেষ্ঠায় ওসমানী হাসপাতালের কেন্দ্রীয় অক্সিজেন কার্যক্রম বাস্তবায়নে সিলেট সিটি করপোরেশনকে ২ কোটি টাকা প্রদান করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বাকি ৭৯ লাখ টাকা সিটি করপোরেশন যোগান দিচ্ছে।

এ সব বিষয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক (প্রশাসন) মাহবুবুল আলম সিলেট মিররকে বলেন, ‘হাসপাতালের নতুন আউটডোর ভবনের ৪৫০ শয্যার সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপনের কাজ শেষ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখন আমাদের কাছে তা হ্যান্ডওভার করবে। এ বিষয়ে হাসপাতালের একটি কমিটি হয়েছে। কমিটি যদি মনে করে অক্সিজেন লাইন স্থাপনটি সম্পূর্ণ হয়েছে তখন আমাদের কাছে তা হস্তান্তর করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য সিসিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছে। এখন সিভিল ওয়ার্ক বাকি রয়েছে। বৃহস্পতিবার নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘২ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় ওসমানীতে অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরি করছে সিসিক। প্ল্যান্ট স্থাপনে কতটুক জায়গা লাগবে তা জানিয়ে গত ১৮ নভেম্বর ওসমানী কর্তৃপক্ষকে আমরা একটি পরিকল্পনা দিয়েছিলাম। গত ১ ডিসেম্বর তারা তাদের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটি আমাদের কাছে পাঠিছেন। প্রস্তাবিত জায়গায় কিছু গাছ রয়েছে। অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য ওই গাছগুলো কেটে ফেলতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গাছ কাটার বিষয়ে আমরা ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিব। গাছ কাটার পর কাজ শুরু করা যাবে। কাজ শুরু হলে ৯০ দিনের মধ্যে প্ল্যান্টটি স্থাপন করতে পারবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে অক্সিজেন প্ল্যান্টও সিলেটে আসার পথে রয়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘ওমিক্রন নিয়ে এখনও আমাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। তবু আমরা প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছি। সীমান্ত ও বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে যাত্রী প্রবেশ করানোসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতেও সক্ষমতা আরও বাড়ানো হচ্ছে। ওসমানীর ৪৫০ শয্যার করোনা ইউনিটের সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনের কাজও শেষ হয়েছে। তবে মানুষের সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি। মাস্ক পরার পাশাপাশি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে চলতে হবে।’ 

আরসি-০১