মনোনয়ন ভাগিয়ে নিতে প্রার্থীরা ব্যস্ত ঢাকায়

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


ডিসেম্বর ০৫, ২০২১
১১:১০ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ০৫, ২০২১
১১:১০ অপরাহ্ন



মনোনয়ন ভাগিয়ে নিতে প্রার্থীরা ব্যস্ত ঢাকায়
জামালগঞ্জ ইউপি নির্বাচন

জামালগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রায় সবাই ঢাকামুখী জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। নৌকার মনোনয়নে ভাগ বসাতে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ২০ জন প্রার্থী ঢাকাস্থ স্থানীয় সাংসদ, জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বলে জানা গেছে। ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রার্থীদের সবাই ঢাকা অবস্থান করায় এলাকার সমর্থক ও সাধারণ মানুষের মাঝে কুলুপআঁটা ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

সরকার দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাড়া বাকি প্রার্থীরা মাঠে থাকলেও বর্তমানে এলাকায় নির্বাচনী উত্তাপ তেমনটা নেই। তবে ‘কে পাবে নৌকা’ ভেতরে ভেতরে সেই টান টান উত্তেজনা ঠিকই বিরাজ করছে। ঢাকায় নৌকার পেছনে হণ্যে হয়ে ছুটা প্রার্থীদের দূরে রেখে নৌকা পাওয়া না পাওয়ার নীরব হিসাব-নিকাশে বসেছেন এলাকার সচেতন ভোটার ও প্রার্থী সমর্থকেরা। সবশেষে নৌকায় যোগ্যদের বসাতে না পারলে নির্বাচনে শেষ হাসি হাসবে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এমনটাই  জানিয়েছেন সচেতন মানুষে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তফশিল ঘোষিত ৪ ইউনিয়নে অন্তত ৩০ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এর মাঝে নৌকার মনোনয়ন ভাগিয়ে আনতে ঢাকায় বিরামহীন দৌড়ঝাঁপ করছেন প্রায় কুড়িজন প্রার্থী। বেহেলী ইউনিয়ন থেকে সুব্রত সামন্ত সরকার, ভজন তালুকদার, মো. সারোয়ার হোসেন, অজিত রায়, হাফিজা আক্তার দীপু, সাচনা বাজার ইউনিয়ন থেকে এহেছানুল করিম পারভেজ, নাছিরুল হক আফিন্দী, বদিউজ্জামান বদি, সায়েম পাঠান, মকবুল আফিন্দী, ফেনারবাঁক ইউনিয়ন থেকে কাজল তালুকদার, আব্দুল লতিফ নাজেল, জিতেন্দ্র তালুকদার পিন্টু, আসাদ আলী ও সাধন ভৌমিক এবং ভীমখালী ইউনিয়ন থেকে আক্তারুজ্জামান শাহ, ফরিদ আহমদ, আব্দুল খালেক ও নিজাম নুর ঢাকায় মনোনয়ন নিজের করে নেওয়ার তদবিরে সদা ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, নৌকা বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা এলাকায় থেকে নীরব প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনী তফশিল ঘোষণার পর এ তৎপরতায় গতি আসে। নৌকার মনোনয়ন নিশ্চিত হলে আবারও পুরোদস্তুর সরগরম হয়ে উঠবে নির্বাচনী মাঠ। তখন প্রার্থী-সমর্থকদের ফুরসত মিলার সুযোগ থাকবে না।

বেহেলী ইউনিয়নের নৌকা প্রত্যাশী সুব্রত সামন্ত সরকার জানিয়েছেন, তিনি আ.লীগের একজন কর্মী হিসেবে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। সে অনুযায়ী মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন এবং ঢাকায় এসে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দেন তাহলে বেহেলী ইউনিয়নের তৃণমূল আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে চান তিনি।

কমরেড বরুণ রায় স্মৃতি পরিষদের সহ সভাপতি আলী আমজাদ বলেন, কেন্দ্র যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করলে নৌকার ভরাডুবির সম্ভাবনা রয়েছে। দলের ত্যাগী ও যোগ্য এবং মাঠপর্যায়ে যাদের জনসম্পৃক্ততা আছে সে রকম প্রার্থীরাই যেন নৌকার মনোনয়ন পায় সে প্রত্যাশা করছি।

গত নির্বাচনে ভীমখালী ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা আক্তারুজ্জামান শাহ বলেন, তৃণমূলের সিদ্ধান্তকে যদি গুরুত্ব দেওয়া হয় তাহলে আমি নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার আশা রাখছি। আ.লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড সে প্রচেষ্টাই করছেন। আমাদের উপজেলা এবং জেলা কমিটি তৃণমূলের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন দিয়ে কেন্দ্রে নাম পাঠিয়েছেন। তার উপর ভর করে বলতে পারি- আমি নৌকা নিয়েই ইউনিয়নবাসীর সামনে হাজির হব।

ঢাকা থেকে জেলা আ.লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা জানিয়েছেন, বেহেলী ইউনিয়নে সুব্রত সামন্ত সরকার, সাচনা বাজার ইউনিয়নে এহেছানুল করিম পারভেজ, ভীমখালী ইউনিয়নে আক্তারুজ্জামান শাহ এবং ফেনারবাঁক ইউনিয়নে কাজল চন্দ্র তালুকদার নৌকার মনোনয়নে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত এ চারজনই নৌকা পেতে পারেন। যদি তাই হয় তাহলে নির্বাচনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠবে এবং নৌকার বিজয় অনেকটা সহজ হবে।

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন সিলেট মিররকে বলেন, উপজেলা থেকে যাদের নাম এসেছে সেগুলো সবই ঠিক আছে। শুধুমাত্র একটিতে নতুন নাম যুক্ত হয়েছে। আর আরেকটিতে সিরিয়াল একটু পরিবর্তন হয়েছে। সবকিছু ঠিকটাক করে আমরা কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে ঘোষণা আসবে এবং যোগ্যরাই নৌকার মনোনয়ন পাবেন।

গত ২৭ নভেম্বর জামালগঞ্জের ৪ ইউপিসহ দেশের ৭০৭ ইউপিতে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৭ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ৯ ডিসেম্বর এবং প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৫ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত সময়ে সাচনা বাজার, বেহেলী, ভীমখালী ও ফেনারবাঁক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য, ইউনিয়ন বিভক্তিকরণের ফলে জামালগঞ্জের ৬ ইউনিয়নের মধ্যে জামালগঞ্জ সদর ও জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নে নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক বছর পিছিয়ে ২০১৭ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যার কারণে আগামী ৫ জানুয়ারি সদর ও উত্তর ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না।

বিআর/বিএ-০১