নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ০৬, ২০২১
০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ০৬, ২০২১
০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও লেগুনাসহ নানা ধরনের অযান্ত্রিক যান চলাচল করছে। এসব যানের চলাচল মহাসড়কে নিষিদ্ধ হলেও সরবে চলছে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
এই যানগুলোর মহাসড়কে বেপরোয়া চলাচল, যেখানে-সেখানে ইউটার্ন নেওয়া এবং যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণে প্রাণহানির ঘটনা নিয়মিতই ঘটছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
গতকাল শনিবার ঢাকা-সিলেট এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও ভ্যানসহ অন্যান্য হালকা যান চলাচল করছে। চালকেরা যাত্রী নিয়ে এসব যান চালাচ্ছেন। কখনো কখনো এসব চালক একে অপরকে ওভারটেকও করছেন। এতে মহাসড়ক দিয়ে চলাচলরত যাত্রীবাহী বড় বাসের চালকেরা সাবধানে গাড়ি চালাচ্ছেন।
মহাসড়কের আশপাশের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কম গতির হালকা যান চলাচল মহাসড়কে নিষিদ্ধ হলেও তা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ তাঁদের চোখে পড়েনি। মাঝেমধ্যে সড়কের এমন অব্যবস্থাপনা দূর করতে হাইওয়ে পুলিশ উদ্যোগী হলেও সেটা নিয়মিত নয়। ফলে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং এলাকার বাসিন্দা মুজিবুর রহমান জানান, এমনিতেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এসব যান মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে। এর মধ্যে এসব যান সড়কে চলতে গিয়ে চালকেরা প্রতিযোগিতা করেন। মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালানো অবৈধ হলেও চালকেরা সেটা মানছেন না। এ ছাড়া ইজিবাইকগুলোর কারণে মহাসড়ক-সংলগ্ন বাজারগুলোর আশপাশে তীব্র যানজটেরও তৈরি হয়। এসব যানের চালকদের অধিকাংশই আবার অদক্ষ। ফলে বেপরোয়া চলাচলের কারণে অন্য যানবাহনের ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে। কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সড়কগুলোতে ইজিবাইক রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অধিকাংশ ইজিবাইকের চালক নিয়মের কোনো ধার ধারেন না।
মহাসড়কের আশপাশের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঝুঁকি নিয়ে হালকা যান মহাসড়কে চলাচল করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো বাধা দেয় না।
বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিন্দা আখতারুল ইসলাম বলেন, অনেক সময় দ্রুতগতির বাস মহাসড়কে চলাচলরত সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা কিংবা ইজিবাইকে ধাক্কা দেয়। এতে যান থেকে ছিটকে পড়ে এসব যানের অধিকাংশ যাত্রী আহত-নিহত হন। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে এমন অহরহ ঘটনা ঘটছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে নিষিদ্ধঘোষিত যান যেন চলাচল করতে না পারে, সেজন্য তৎপরতা শুরু করেছে। এ ছাড়া মহাসড়ক-সংলগ্ন ফুটপাতে যেন কোনো ধরনের অবৈধ স্থাপনা না থাকে, সেজন্যও হাইওয়ে পুলিশের উদ্যোগে এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করছে। হাইওয়ে পুলিশের এমন তৎপরতা নিয়মিত থাকলে মহাসড়কে সুশৃঙ্খলা ফিরে আসার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনাও অনেকেই রোধ পাবে বলে সচেতন বাসিন্দারা মনে করছেন।
সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের জৈন্তাপুরের হরিপুর বাজার এলাকার পথচারী মো. কফিল উদ্দিন বলেন, ‘মহাসড়কে বড় বড় যানবাহনের সঙ্গে ছোট ছোট তিনচাকার যানবাহন চলাচল করায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। ছোট ছোট যানবাহন চলাচলের কারণে প্রায়ই বিশেষ করে মহাসড়কের বাজার-সংলগ্ন এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে ওই মহাসড়কে সবাইকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
তিনি আরও বলেন, দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসের একাধিক চালক জানিয়েছেন, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও তা মানা হচ্ছে না। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে হঠাৎ এসব যান ঢুকে পড়লে দূরপাল্লার যানবাহনের চালকেরা অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।
সিলেটের একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশ সিলেট অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. শহিদ উল্লাহ এক মতবিনিময়ের সংবাদ প্রকাশিত হয় গত ১৬ নভেম্বর। এ মতবিনিময়ে পুলিশ সুপার মো. শহিদ উল্লাহ বলেন, সিলেট অঞ্চলের মহাসড়কগুলোকে নিরাপদ ও অবৈধ দখলদারমুক্ত করতে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, শেরপুর থেকে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য ১৮টি বাঁক অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৯টি ব্ল্যাক স্পট রয়েছে। এসব বাঁক ও স্পট চিহ্নিত করে হাইওয়ে পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
আরসি-০২