বড়লেখা প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
১০:০০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
১০:০০ পূর্বাহ্ন
মৌলভীবাজারের বড়লেখার একমাত্র ঐতিহ্যবাহী গণগ্রন্থাগার ‘উজালা গ্রন্থাগার’ ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।
সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে গ্রন্থাগার ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী। মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের অর্থায়নে উজালা গ্রন্থাগারের ভবনটি নির্মিত হচ্ছে।
ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনকালে জেলা পরিষদ সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আবু আহমদ হামিদুর রহমান শিপলু উপস্থিত ছিলেন। গণগ্রন্থাগারটি চালু হলে আবারও বইপ্রেমী মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সালের ১২ ডিসেম্বর উজালা গ্রন্থাগার নামে একমাত্র গণগ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বড়লেখা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রমাপদ চন্দের বাসার একটি অংশকে গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহার করে এর কার্যক্রম চালু হয়।
উপজেলা সদরের মহবন্দ গ্রামের বাসিন্দা ফুটবলার সামছুল আলম চৌধুরী আমান ও মরহুম একরাম আলীর যৌথ উদ্যোগে এটি চালু হয়। এখানে ছিল শত শত মূল্যবান বই। প্রতিদিনই এই গ্রন্থাগারে নানা শ্রেণি-পেশার পাঠকদের জমজমাট আসর বসত। ১৯৬৭ সালে বারইগ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ২ শতাংশ ভূমি গ্রন্থাগারের নামে দান করেন। এই ভূমিতে ১৯৮৫ সালে গ্রন্থাগার স্থানান্তরিত হয়। সেখানে এর কার্যক্রম শুরু হয়। আশির দশকে এই গ্রন্থাগারের সাথে সম্পৃক্ত হন বর্তমান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপি, সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম, সমাজসেবক ফৈয়াজ আলী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম মন্তজির আলী, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মিসবাউজ্জামান মাখন, সাবেক ইউপি সদস্য ভূমিদাতা আব্দুল জলিল, বড়লেখা প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক গোপাল দত্ত, গণমাধ্যমকর্মী আবদুল কাদের তাপাদার, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল হাফিজ চৌধুরী আবু, সমাজসেবক আব্দুস শহীদ প্রমুখ।
এদিকে অবকাঠামো, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে ‘৯০ দশকের পর কার্যক্রম অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়ে। বইপত্র সংগ্রহ ও আসবাবপত্র সংস্কার করে এটি পরিচালনা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ২০০৫ সালে গ্রন্থাগারটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। গ্রন্থাগারের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পরিত্যক্ত ঘরে একজন চায়ের দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। পৌরসভার আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১৫ বছর ঐতিহ্যবাহী এ গ্রন্থাগার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে লক্ষ্যে গ্রন্থাগার কমিটির এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় পৌরসভাকে এর দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার। এরপর ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে বড়লেখা পৌর পরিষদের কাছে ভূমি, লাইব্রেরির বইসহ অন্যান্য আসবাবপত্র এবং কাগজাদি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
গ্রন্থাগার কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল হাফিজ চৌধুরী আবু বলেন, অবকাঠামোগত সমস্যাসহ নানা কারণে এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আর্থিক সংকটের কারণে আর চালু করা সম্ভব হয়নি। পৌরসভার মেয়রের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আনুষ্ঠানিকভাবে পৌরসভাকে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি।
বড়লেখা পৌরমেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী বলেন, উজালা গ্রন্থাগার স্বাধীনতাত্তোর বড়লেখার একটি ঐহিত্যবাহী গ্রন্থাগার। এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। সুশীল সমাজের সবাই উজালা গ্রন্থাগারকেন্দ্রিক ছিলেন। আশির দশকের পরে এর জৌলুশ হারিয়ে যায়। ২০০৫ সালে কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে। আমরা আগ্রহ দেখালে গ্রস্থাগার কমিটি পৌরসভাকে হস্তান্তর করেছে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিলেও করোনার কারণে তা বিলম্বিত হয়। জেলা পরিষদের অর্থায়নে ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন।
এ জে/বি এন-১৪