পঞ্চাশ বছরেও অরক্ষিত শায়েস্তাগঞ্জের বধ্যভূমি

সৈয়দ হাবিবুর রহমান ডিউক, শায়েস্তাগঞ্জ


ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
০৯:২৯ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
০৯:৩১ অপরাহ্ন



পঞ্চাশ বছরেও অরক্ষিত শায়েস্তাগঞ্জের বধ্যভূমি

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও অরক্ষিত রয়েছে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার বধ্যভূমি। শায়েস্তাগঞ্জ রেল জংশনের পাশেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার দলিল এ বধ্যভূমি নির্মাণে এখনও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ এখানকার নাগরিক সমাজ, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার।

তারা মনে করছেন, ১৯৭১ সালের পাকবাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে বাঙালির শহীদ হওয়ার ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে। মুজিবশতবর্ষকে উপলক্ষ করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই বধ্যভূমি চিহ্নিত করে দ্রুত স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানান তারা।

জানা যায়, ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার শোকাবহ স্মৃতিচিহ্ন অঙ্কিত হয়ে আছে এই বধ্যভ‚মিতে। পাকবাহিনীর সদস্যরা লালচান্দ চা-বাগানসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাসহ ১১ জনকে হত্যা করে ওই স্থানে গণকবর দেয়। যাদের মধ্যে শহীদ  রাজকুমার গোয়ালা, লাল সাধু, কৃঞ্চ বাউরী মেম্বার, দিপক বাউরী, মহাদেব বাউরী, অনু মিয়া, সুনীল বাউরী, নেপু বাউরী, রাজেন্দ্র রায়, গৌর রায় ও ভুবন বাউরী রয়েছেন।

এই ১১ জন শহীদের মধ্যে শুধু অনু মিয়াই মুসলিম ধর্মের ছিলেন, উনারা সকলেই চুনারুঘাট উপজেলার  লাল চান্দ চাবাগানের বাসিন্দা ছিলেন। তাদেরকে যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া বাঙালি জাতির দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। সে বিবেচনায় শায়েস্তাগঞ্জের এই বধ্যভ‚মি উপযুক্ত মর্যাদা ও সম্মান পাওয়া থেকে অনেকাংশেই বঞ্চিত রয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, শায়েস্তাগঞ্জ বধ্যভূমি রেল লাইন সংলগ্ন হওয়ায় রেল লাইন অতিক্রম ব্যতীত সেখানে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ সড়ক  থেকে বধ্যভ‚মিতে যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি পাকা সড়ক নির্মাণ করা হলেও ওই সড়কটি এখন সিএনজি অটোরিকশার দখলে রয়েছে। এ সড়ক দিয়ে মানুষ চলাচলের কোনো পরিবেশ নেই।

বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা তার নিজস্ব অর্থায়নে ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। কিন্তু বধ্যভ‚মিতে গড়ে উঠেনি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। শুধুমাত্র একটি সাইনবোর্ড বসানো রয়েছে। আর কয়েকটা পাকা পিলার দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এখনও অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে বধ্যভূমিটি। বধ্যভূমি সংরক্ষিত করার জন্য তারকাটা দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছিল যার অধিকাংশই ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। ফলে এখনও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে এই বধ্যভূমি।

এই বধ্যভূমির পবিত্রতা রক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর রক্ষণাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ পাকা পিলার দিয়ে বধ্যভূমির সীমানা চিহ্নিত করে ঘিরে দিয়েছেন। এতে বধ্যভূমির সীমানা চিহ্নিত হলেও এর পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষা নিশ্চিত হয়নি এখনও।

এ ব্যাপারে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সহকারী কমান্ডার ও জেলা সাংগঠনিক ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে এ বধ্যভ‚মি স্বীকৃতি পেয়েছে এবং গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বধ্যভ‚মি একটি আবেগ, ইতিহাসের অংশ, এর রক্ষণাবেক্ষণের দ্বায়িত্ব আমাদের সবার। বর্তমানে পৌর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক ওই বধ্যভ‚মি রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। শায়েস্তাগঞ্জের বধ্যভ‚মি সংস্কারের জন্য টেন্ডার হয়েছে। অচিরেই উন্নয়ন কাজ শুরু হবে।’

এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে খুবই আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল। বধ্যভ‚মি সংরক্ষণে আমরা ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি। শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বধ্যভূমির ১১ জনের নাম সংবলিত একটি সাইনবোর্ড বানানো হয়েছে, যা আজ উন্মুক্ত করা হবে। আমি বধ্যভূমিটি সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করব। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের অন্যান্য উপজেলার মতো শায়েস্তাগঞ্জেও বধ্যভূমির উন্নয়ন হবে।’

এ ব্যাপারে জানতে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ফরিদ আহমেদ অলিকে একাধিক বার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আরসি-১৯