জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখাতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক


ডিসেম্বর ২১, ২০২১
০৭:১৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ২১, ২০২১
০৭:২২ পূর্বাহ্ন



জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখাতে হবে
সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা মহাসমাবেশ

‘মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান; যাদের জন্য আজ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। একাত্তরে তারা নিজেদের কথা চিন্তা করেননি; দেশ-জাতির কথা ভেবে জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করেছেন। তাই, সবসময় জাতির এই বীর সন্তানদের কাছে আমরা ঋণী। তাদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।’

সিলেটে আঞ্চলিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মহাসমাবেশে বক্তারা এ সব কথা বলেছেন। সোমবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসনের বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করা সহস্রাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। পরে, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।

সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মতিয়ার রহমান হাওলাদার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ, জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ।

স্মৃতিচারণ করেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মকসুদ ইবনে আজিজ লামা, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড সিলেট জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড সিলেট মহানগর ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ রায় ভর্মণ রানা। বক্তব্য দেন, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, সাংবাদিক আল আজাদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মতিয়ার রহমান হাওলাদার জাতির শ্রেষ্ট সন্তানদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা কোনোকিছু পাওয়ার আশায় মুক্তিযুদ্ধে যাননি। ফিরে এসেও তারা কিছু পাওয়ার আশা করেননি। আজ তাদের জন্যই আমরা স্বাধীন জাতি, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছি। এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমরা বীর সেনানীদের প্রতি সারাজীবন ঋণী থাকব।’

প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা আছেন তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যে কোনো সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা আপনাদের কাছে গেলে তাদের সর্বোচ্চ সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবেন। আমরা দেখতে চাইÑ মুক্তিযোদ্ধারা কোনো দল বা গোত্রের নয়; একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তারা যেনো এ সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকেন।’ 

বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসিত করার কাজ শুরু করেছিলেন। দীর্ঘদিন তারা বঞ্চিত থাকলেও বঙ্গবন্ধ কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নানাধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বেঁচে থাকতে মুক্তিযোদ্ধারা বঞ্চিত হবেন না।’

মুক্তিযোদ্ধারা যাতে সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারেন; সেদিকে সিলেটের প্রশাসনের বিশেষ নজর রাখার আহŸান জানান তিনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মকসুদ ইবনে আজিজ লামা বলেন, ‘আজকের নতুন প্রজন্ম জানে না অনেক ইতিহাস। দুবড়ির হাওরে সর্বশেষ যুদ্ধ হয়েছিল। ছয়দিনের যুদ্ধের পর ১৫ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় লাভ করি। কিন্তু পাকিস্তানিরা কোনোক্রমেই মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করতে রাজি হয়নি। জেনেভা কনভেনশনের ভিত্তিতে তারা ভারতীয় সেনা কর্মকর্তার কাছে আত্মসমর্পণ করে। সে জন্য আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে ওসমানী ছিলেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু না হলে বাংলাদেশ হতো না। আর ওসমানী না হলে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা হতো না। তারা দুজনকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করা যায় না।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এখন দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা স্বপ্ন দেখছি ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশ হবে। ভবিষ্যত প্রজন্ম সেই সোনার বাংলা বাস্তবায়নে মনোযোগী হলে আমরা হয়তো দেখে যেতে পারব।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ রায় বর্মন বলেন, ‘আমরা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছি। পঁচাত্তরের কালো অধ্যায় রচনার পর অনেকে হতাশ হয়েছিলেন। আমরা বলেছিলাম, সত্যের জয় একদিন হবেই। আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা যতদিন বেঁচে থাকবেন, এই বাংলাদেশ পথ হারাবে না।’

সন্ধ্যায় বীরাঙ্গনা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাকনবিবি বীর প্রতীকের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা নিয়ে নাট্য উপস্থাপন করে সম্মিলিন নাট্য পরিষদ, সিলেট। পরে, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চিরকুট ব্যান্ড, শিল্পী পিন্টু ঘোষ, সজল ও আখি আলমগীর নানা পরিবেশনার মাধ্যমে মাতিয়ে রাখেন জেলা স্টেডিয়াম প্রাঙ্গন। এ সময় উৎসুক দর্শকদের চাপে স্টেডিয়ামের ফটক খুলে দেওয়া হয় এবং লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় জেলা স্টেডিয়াম।

এসএইচ/আরসি-০১