আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে সিলেটের রাফিহাতের স্বর্ণ জয়

নিজস্ব প্রতিবেদক


ডিসেম্বর ২২, ২০২১
০৮:৩৪ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ২২, ২০২১
০৮:৪৭ অপরাহ্ন



আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে সিলেটের রাফিহাতের স্বর্ণ জয়

হাতের কাছে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস পেলে তা নিয়ে নাড়াচাড়া করার অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই। সপ্তম শ্রেণিতে থাকাকালে এসব ডিভাইস খুলে ভেতরের খুঁটিনাটি খুঁজে দেখতে থাকেন। সেবারই তিনি নিজেকে রোবট নিয়ে আগ্রহী একজন হিসেবে আবিষ্কার করেন। সেই আগ্রহ তাকে নিয়ে গেছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে। সুযোগ পান বিদেশের মাটিতে প্রতিভা প্রমাণের। আর এবার প্রতিভা প্রমাণ করে দেশের জন্য স্বর্ণ পদক জয় করে আনলেন সিলেটের ছেলে রাফিহাত সালেহ।

২৩তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরিতে স্বর্ণ পদক জয় করেছেন। পাশাপাশি রোবটিক মুভি ক্যাটাগরিতে তিনি পেয়েছেন ব্রোঞ্জ পদক। রাফিহাতসহ বাংলাদেশ এই অলিম্পিয়াডে জিতে নেয় মোট চারটি স্বর্ণ পদক। পাশাপাশি দুইটি রৌপ্য, পাঁচটি ব্রোঞ্জ এবং চারটি টেকনিক্যাল পদক জয় করে ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ রোবট অলিম্পয়াড দল।


ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরিতে রাফিহাতকে স্বর্ণ পদক এনে দেয় তার ‘স্যোশাল রোবট’ ভাবনাটি। এই স্যোশাল রোবট মূলত অটিস্টিক ও অন্ধ মানুষদের নিয়ে কাজ করবে। রাফিহাত জানান, অটিস্টিক শিশুদের গাইড হিসেবে কাজ করবে এ ধরনের রোবট। তাদের অনেক সাংকেতিক ভাষা আছে, যা আমরা সহজে বুঝতে পারি না। তবে রোবট তা সহজে বুঝে ফেলবে। এছাড়া তাদের খাবার এনে দেওয়া, তাদের সঙ্গে খেলাধুলা করাসহ সবকিছু করবে এই রোবট। একইসঙ্গে দৃষ্টিহীন মানুষদের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। রোবটটি মানুষের মতো হুইলচেয়ার টেনে নিয়ে যেতে পারবে।


অন্যদিকে রোবটিক মুভি ক্যাটাগরিতে ‘ফায়ার ফাইটিং’ ভাবনাটি রাফিহাতকে ব্রোঞ্জ পদক এনে দিয়েছে। এ ধরনের রোবট মূলত আগুন নেভাতে কাজ করে। এই ভাবনার রোবটকে তিনটি ফিচার দেওয়া হয়েছে। একটি হলো ফায়ার এক্সিট সিস্টেম। এই সিস্টেমে রোবটকে প্রতিটি ফ্লোরে রাখা হবে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে রোবট একটি বাইরে বের হওয়ার পথ তৈরি করে দেবে। যাতে সবাই নিরাপদে বের হতে পারেন। দ্বিতীয় ফিচারে রয়েছে থার্মাল ক্যামেরা। এই ক্যামেরা মূলত কোথায় কোথায় আগুন লেগেছে এবং কোথায় ত্রæটি আছে সেটা খুঁজে বের করে ফায়ার সার্ভিসকে দেবে। শেষ ফিচারটি হলো ফায়ার অ্যাক্সটিংগুইশার। যা সাময়িকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখবে।  

বছর তিনেক আগে প্রথমবার আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পয়াডে অংশ নিতে বিদেশে যান রাফিহাত সালেহ। তবে সেবার বিদেশ যাওয়ার রোমাঞ্চতেই থেমে থাকতে হয়। রোবট গ্যাদারিং নামের সেই ইভেন্টে অংশ নেওয়া রাফিহাত পদক জয় ছাড়াই দেশে ফিরেন। তবে থেমে থাকেননি। পরের বছর ২০১৯ সালে অলিম্পয়াডে ফের অংশ নিয়ে সিলেটের ছেলে রাফিহাত সালেহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক জয় করলেন। একটি ক্যাটাগরিতে রৌপ্য এবং অন্য ক্যাটাগরিতে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন। একই বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় অন্য ডঙ্গি ইভেন্টে অংশ নিয়ে পেয়েছিলেন স্বর্ণ পদক। আন্তর্জাতিক ইভেন্ট হলেও অলিম্পয়াডের সম মর্যাদার নয়। করোনাময় ২০২০ সালে অনলাইনে অংশ নিয়েও শুধু ব্রোঞ্জ পদক নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাঁকে।


তিন বছরে চারটি পদক জয় হলেও কাক্সিক্ষত স্বর্ণপদক স্পর্শ হয়নি তখনও। তবে রাফিহাত সেই চেষ্টায় ছিলেন অটল। জালালাবাদ ক্যান্টনম্যান্ট ইংলিশ স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিহাত ২৩তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে পেলেন সেই কাঙ্খিত স্বর্ণ পদকের দেখা।    

স্বর্ণ পদক পেয়ে উচ্ছসিত সিলেটের ছেলে রাফিহাত সালেহ সিলেট মিররকে বলেন, ‘স্বর্ণ পদক পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। আমি স্বপ্ন দেখি একদিন আমার নিজের একটি রোবটিক ইন্ডাস্ট্রি হবে। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি।’

ছেলের এমন সাফল্যে উচ্ছসিত রাফিহাতের বাবা এএসএম খায়রুল ইসলামও। ছেলে যেন তার কাঙ্খিত স্বপ্ন পৌঁছাতে পারে সে কামনাই করেন তিনি।  

করোনা পরিস্থিতিতে এ বছর অনলাইনে আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার দ্যেগু শহর থেকে এ অলিম্পিয়াড নিয়ন্ত্রিত হয়। গত ১৫ থেকে ১৮ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকার বিসিএস ইনোভেশন সেন্টার থেকে ২৩তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করে ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ দল। এ বছর আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের নির্ধারিত থিম ছিল ‘সোশ্যাল রোবটস’।

২৩তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে রোবট ইন মুভি ক্যাটাগরিতে জুনিয়র গ্রæপে রোবো স্পার্কার্স দলের মিসবাহ উদ্দিন ইনান ও জাইমা যাহিন ওয়ারা, একই ক্যাটাগরিতে চ্যালেঞ্জ গ্রæপে রোবোটাইগার্স দলের নাশীতাত যাইনাহ রহমান ও কাজী মোস্তাহিদ লাবিব এবং ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরিতে জুনিয়র গ্রæপে রোবাস্টাস দলের যারিয়া মুসাররাত ও চ্যালেঞ্জ গ্রæপে রোবো স্কোয়াড দলের রাফিহাত সালেহ, তাফসীর তাহরীম ও মাহির তাজওয়ার চৌধুরী স্বর্ণপদক অর্জন করেছে।

ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরিতে জুনিয়র গ্রæপে আউশ দলের মাহরুজ মোহাম্মাদ আয়মান এবং ফিজিকাল কম্পিউটিং ক্যাটাগরিতে চ্যালেঞ্জ গ্রæপে উই দলের মীর উমাইমা হক ও প্রপা হালদার রৌপ্যপদক জয় করেছেন।

রোবট ইন মুভি প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে চ্যালেঞ্জ গ্রæপে রোবো স্কোয়াড দলের রাফিহাত সালেহ ও তাফসীর তাহরীম এবং টিম-এক্স৫৬ দলের মাহির তাজওয়ার চৌধুরী ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে। পাশাপাশি ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরিতে জুনিয়র গ্রুপে রোবো স্পার্কার্স দলের মিসবাহ উদ্দিন ইনান ও জাইমা যাহিন ওয়ারা এবং চ্যালেঞ্জ গ্রুপে রোবোটাইগার্স দলের নাশীতাত যাইনাহ রহমান ও কাজী মোস্তাহিদ লাবিব এবং টাইগার-৭১ দলের রাগিব ইয়াসার রহমান ও আরেফিন আনোয়ার ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে।

রোবট ইন মুভি প্রতিযোগিতায় কারিগরি পদক অর্জন করেছে জুনিয়র গ্রæপে রোবাস্টাস দলের যারিয়া মুসাররাত এবং চ্যালেঞ্জ গ্রæপে মীর উমাইমা হক ও প্রপা হালদার এবং মেকারো দলের যাহরা মাহযারীন পূর্বালী ও জাইবা মাহজাবীন টেকনিক্যাল পদক পেয়েছে। ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরিতে চ্যালেঞ্জ গ্রুপে মেকারো দলের যাহরা মাহযারীন পূর্বালী ও জাইবা মাহজাবীন টেকনিকাল পদক পেয়েছে।

আরসি-০৪