বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ২৪, ২০২১
০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ২৪, ২০২১
০৩:৪০ পূর্বাহ্ন
সিলেটের বিয়ানীবাজারের ১০ ইউনিয়নে নির্বাচনের বাকি আর মাত্র তিনদিন। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণা। চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শেষ মুহূর্তের প্রচারণায়। ভোটারদের মন জয় করতে কর্মী-সমর্থকরা নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটাররাও ব্যস্ত চুলচেরা বিশ্লেষণে। আগামী ২৬ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হবে। এখানকার সবকটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৪৭ জন প্রার্থী।
তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। দু’টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা নৌকাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেও অন্যগুলোতে বিরোধী মতের প্রার্থীদের কাছে রীতিমতো অসহায় সরকারদলীয় প্রার্থী।
ভোটারদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, প্রতিটি ইউনিয়নে মূল লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে। নৌকার প্রার্থীরা ২-৩টি ইউনিয়ন ছাড়া কোনো ইউনিয়নেই সুবিধাজনক স্থানে নেই। ফলে বিয়ানীবাজারে নৌকার ভরাডুবির আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের নেতারা। এর জন্য দলের নীতিনির্ধারকদের যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়াকে দায়ী করছেন অনেকে। আলীনগর ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আহবাবুর রহমান খান শিশু। এখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বি দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ। তিনি সব সমীকরণে এগিয়ে রয়েছেন। এলাকায় তার বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে বলে জানা গেছে।
চারখাই ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মাহমদ আলী। তাকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হতে পারে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের উপজেলা পর্যায়ের নেতা হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ চৌধুরীর কাছে।
শেওলায় নৌকার প্রার্থী জহুর উদ্দিনের সাথে মূল লড়াইয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতার হোসেন খান জাহেদ (বিএনপি)। এই ইউনিয়নে জেতার পরিসংখ্যানে কেউ এগিয়ে নেই। সমানে-সমানে টক্কর হবে জহুর-আখতারের মধ্যে বলে জানা যায়।
দুবাগে নৌকার প্রার্থী ও টানা দুই বারের চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের সঙ্গে ভোটের লড়াই করছেন স্বতন্ত্র মোস্তাক আহমদ (জমিয়ত) ও কমর উদ্দিন চৌধুরী (আল ইসলাহ)।
কুড়ারবাজারে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক বিএনপি নেতা বাহার উদ্দিন। তাকে নিয়ে প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতাদের ক্ষোভ থাকলেও শেষ সময়ে নেতারা মাঠে নেমেছেন। এখানে বর্তমানে চেয়ারম্যান সতন্ত্র প্রার্থী আবু তাহেরের সাথে লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী নজমুল ইসলামের। এই দুই প্রার্থী এখন ভোটারের আলোচনায় রয়েছেন।
মাথিউরায় নৌকার প্রার্থী আমান উদ্দিনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন কছির আলী আব্দুর রব (স্বতন্ত্র)। তাদের মধ্যে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া নিয়ে কঠিন হিসাব চলছে। ভোটাররাও দুজনকে নিয়ে মুখ খুলছেন না।
তিলপাড়ায় নৌকার প্রার্থী এমাদ উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। এই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান (বিএনপি) বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছেন।
মুড়িয়ায় নৌকার প্রার্থী হুমায়ুন কবিরের জন্য চ্যালেঞ্জ স্বতন্ত্র প্রার্থী রুহুল ইসলাম ও ফরিদ আল মামুন (জামায়াত)।
মুল্লাপুরে নৌকার প্রার্থী শামীম আহমদের সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মন্নান (স্বতন্ত্র) ও আব্দুল করিম। তিন প্রার্থীই ভোটারদের বিবেচনায় চূড়ান্ত পর্যায়ে।
লাউতায় নৌকার প্রার্থী এম এ জলিল। তিনিও দুশ্চিন্তায় আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান গৌছ উদ্দিন (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দেলোওয়ার হোসেনকে (জামায়াত) নিয়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রার্থীদের প্রচারণার মাইকিংয়ে মুখর ১০ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগে ব্যস্ত প্রার্থীরা। কেউ কুশল বিনিময় করছেন, কেউ দিচ্ছেন প্রতিশ্রæতি।
মাথিউরা ইউনিয়নের ভোটার রনি আহমদ বলেন, ‘প্রার্থীরা তো ভোটের আগে অনেক প্রতিশ্রæতি দেন। কিন্তু ভোটের পর আর খবর থাকে না। তাই বুঝেশুনে ভোট দেব, যাকে ভোটের পরেও পাব।’
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ কামাল হোসেন বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে প্রশাসনের পক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভোটের দিন কেন্দ্রে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ, আনসার ও কোস্টগার্ড সদস্যের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হবে।’
এসএ/বিএ-০১