বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ
ডিসেম্বর ২৬, ২০২১
০৬:০৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ২৬, ২০২১
০৬:০৬ পূর্বাহ্ন
জামালগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সংক্রান্ত প্রচার-প্রচারণা ও আলোচনা-পর্যালোচনায় উত্তাল নির্বাচনি মাঠ। নির্বাচনি আলোচনায় মশগুল উপজেলার হাটবাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁ, গ্রাম্য দোকানপাট ও পাড়া মহল্লা। বিশেষ করে নৌকা মনোনীত প্রার্থী এবং তাদের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী কে হবেন সেটা নিয়েই জোর আলোচনা চলছে। একপক্ষ সরকার দলীয় প্রার্থীকে এগিয়ে রাখলেও অপরপক্ষ অন্য আরেকজনকে এগিয়ে রাখছেন। এর মধ্যে তৃতীয় পক্ষ নৌকা ও নৌকার প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বীর সঙ্গে আরেকজনের নাম জুড়ে দিয়ে আলোচনার আগুনে ঘি ঢালার চেষ্টা করছেন। আবার কোনো কোনো ইউপিতে নৌকার ভরাডুবির কথাও স্মরণ করিয়ে দিতে ভুল করছেন না কেউ কেউ।
নির্বাচনি মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নৌকা মনোনীতদের নাম ঘোষণার পর সবচেয়ে বেশি কথাবার্তা চাউর হয়েছে সাচনা বাজার ইউনিয়নের প্রার্থিতা নিয়ে। এর পরের আলোচনায় ছিল ফেনারবাঁক ইউনিয়ন। সাচনা বাজার ইউনিয়নে নৌকাবঞ্চিত হেভিওয়েট প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীমের অনুজ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এহছানুল করিম পারভেজকে টেক্কা দিয়ে সায়েম পাঠান নৌকা ভাগিয়ে আনায় শামীম বলয়ে কিছুটা তিক্ততা দানা বাঁধে। এ নিয়ে শুধু শামীম বলয়ই নয়, এলাকার অনেকে মনে করছেন সাচনা বাজার ইউনিয়নে পারভেজকে নৌকার মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জোর সম্ভাবনা ছিল। গত উপনির্বাচনে নৌকার পরাজিত প্রার্থী সায়েম পাঠানকে এবারও মনোনয়ন দেয়ায় বিএনপি ঘরানার শক্তিশালী প্রার্থী মো. মাসুক মিয়া, সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হক আফিন্দীর নিকটাত্মীয় ইকবাল হাছান এবং ইনসিওরেন্স কর্মকর্তা মিছবাহ উদ্দিনের সঙ্গে নৌকার কুলিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়বে। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আটঘাট বেঁধে মাঠে নামা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে।
এদিকে, ফেনারবাঁক ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু তালুকদারের পুত্র নৌকার প্রার্থী কাজল তালুকদারকে নিয়ে দ্বিধাদ্ব›দ্ব কাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে তিনি চাকরির সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে এলাকার বাইরে ছিলেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। সাতবারের চেয়ারম্যান পিতার বদৌলতে কাজল তালুকদার নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে রাজনীতিতে তৎপর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিতেন্দ্র তালুকদার পিন্টুর নৌকা পাওয়া উচিত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র বলছে, সবচেয়ে আশার কথা এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। তবে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে প্রচÐ ক্ষোভ ও হতাশা কাজ করছে। যদি এ ক্ষোভ প্রশমিত না হয় তাহলে বিএনপি ঘেঁষা প্রার্থী জুলফিকার চৌধুরী রানা কিংবা সাবেক চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মতিউর রহমানের কাছে পরাজয় বরণ করতে হবে নৌকার প্রার্থী কাজল তালুকদারকে।
অপরদিকে, বেহেলী ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থী সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পাদক সুব্রত সামন্ত সরকারকে নিয়ে সচেতন ভোটারদের মাঝে তেমন কানাঘুষা নেই। কারণ তিনি দলের একজন সক্রিয় কর্মী এবং বেশ সময় ধরে মাঠে-ময়দানে সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। সে হিসেবে যোগ্যজনকেই প্রার্থী করা হয়েছে এমন অভিমত অনেকের। তার বিপরীতে সুব্রত সিলেটের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় আওয়ামী বিদ্রোহীরা তার বিষোদগার করছেন। তবে নৌকা প্রার্থী সুব্রত ও বর্তমান চেয়ারম্যান অসীম তালুকদারের মধ্যে লড়াই জমে উঠার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া নৌকা বিদ্রোহী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সারোয়ার হোসেন ও অজিত রায়ের নামও আলোচনায় আছে।
অন্যদিকে, ভীমখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আক্তারুজ্জামান শাহকেই যোগ্য মনে করা হচ্ছে। কারণ তিনি একাধারে ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ও গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে সামান্য ভোটে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়ার সঙ্গে পরাজিত হয়েছিলেন। যদিও এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নেই তবু বর্তমান চেয়ারম্যান দুলাল মিয়া ও বিএনপিপন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী আক্তারুজ্জামান তালুকদারের সঙ্গে নৌকা প্রার্থীর মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। এ ইউনিয়নে চার প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই সমান জনপ্রিয় হওয়ায় নৌকা প্রার্থীর বিজয় লাভ করা সহজ হবে না বলে মনে করছেন ভোটাররা।
সাংবাদিক ও ফেনারবাঁক ইউনিয়নের বাসিন্দা অঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, ‘নৌকার ভিত্তি কোনোটিতেই মজবুত নয়। বিশেষ করে আমার ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা ৯ মৌজার মানুষ বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে নৌকায় ভোট দিলেও এবার তারা নৌকায় নারাজ। কারণ তারা আজ অব্দি কাক্সিক্ষত উন্নয়ন পায়নি। মিনি পাগনা পারে কয়েকটি গ্রাম আছে যাদের কেউ মরলে এখনও আরেক উপজেলায় নিয়ে সৎকার করতে হয়।
তিনি আরো বলেন, ফেনারবাঁক ইউনিয়নে যাকে প্রার্থী করা হয়েছে তিনি বাইরে থাকেন। যারা এলাকায় থাকেন এবং আওয়ামী লীগ করেন এমন কেউই নৌকা পাননি, এটা প্রশ্নবিদ্ধ। তাই আ.লীগের কর্মীরা নৌকা থেকে দূরে, অনেকেই নৌকার প্রকাশ্য বিরোধিতাও করছেন।’
ফেনারবাঁক ইউনিয়নের নৌকা প্রার্থী কাজল চন্দ্র তালুকদার বলেন, ‘দলের মানুষ এবং নৌকার সমর্থকেরা আমার পক্ষে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করছেন। তবে একটা স্বার্থান্বেষী মহল আছে যারা নামধারী আওয়ামী লীগ তাদের অবস্থান নৌকার বিরুদ্ধে। নৌকা প্রত্যাশীদের মধ্যে একজন আমার সঙ্গে আছেন এবং অপরজনের অবস্থান পরিষ্কার নয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাচনা বাজার ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ অঙ্গ সংগঠনের এক নেতা জানিয়েছেন, ‘নৌকার অবস্থান মোটামুটি। এখানে এগিয়ে আছে মাসুক মিয়ার ঘোড়া। এর মাঝে হাছান যদি একটু ভালো ভোট পায় তাহলে নৌকার অবস্থা সেই আগের মতোই হবে। এহছানুল করিম পারভেজ নৌকা পেলে অনেক ব্যবধানে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।’
উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা নৌকার প্রচারণায় আছি। আশা করি চার ইউনিয়ন থেকেই নৌকা বের হয়ে আসবে। যদিও সাচনা বাজার ইউনিয়ন নিয়ে একটু সন্দেহ আছে। তবে সবাই মাঠে আছি এবং চেষ্টা করছি ভালো কিছু করার।’
এহছানুল করিম পারভেজের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, ‘পারভেজ থাকলে তো কোনো কথাই ছিল না। বড় ব্যবধানে নৌকা বিজয়ী হতে পারত। যাই হোক, এখন সকলকে নৌকা নিয়েই ভাবতে হবে।’
প্রসঙ্গত, আগামী ৫ জানুয়ারি উপজেলার ৬ ইউনিয়নের ৪ টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। গত ৬ ডিসেম্বর আ.লীগের মনোনয়ন বোর্ড জামালগঞ্জের ইউপি নির্বাচনে ১ নম্বর বেহেলী ইউনিয়নে সুব্রত সামন্ত সরকার, ৩ নম্বর ফেনারবাঁক ইউনিয়নে কাজল চন্দ্র তালুকদার, ৪ নম্বর সাচনা বাজার ইউনিয়নে সায়েম পাঠান ও ৫ নম্বর ভীমখালী ইউনিয়নে আক্তারুজ্জামান শাহকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে।
আরসি-০১