নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ৩০, ২০২১
০২:৩৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ৩০, ২০২১
০৪:০৯ পূর্বাহ্ন
সার্ভিসিংয়ের কথা বলে আইপিএস থেকে ব্যাটারি খুলে নিয়েছিলেন রিপন মিয়া। এক ঘণ্টার মধ্যে সেটি ঠিক করে দেওয়ার কথা থাকলেও এক বছরেও তার দেখা মেলেনি। এভাবে নগরের একাধিক আইপিএস গ্রাহকের ব্যাটারি চুরি করেন তিনি। অবশেষে সিলেট মিররের প্রিন্ট এডিশন দেখে চোরকে ধরা হয়েছে সিলেট নগরের আগপাড়া এলাকা থেকে।
এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, আজ বুধবার দুপুরে আগপাড়া এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা তোরণ মিয়ার বাসায় ঢুকেন রিপন মিয়া। সার্ভিসিংয়ের কথা বলে আইপিএস খুলছিলেন। এমন সময় পত্রিকায় ছাপা ছবিটি তাকে দেখিয়ে তিনি জানতে চান সে কি না। রিপনে হ্যা সূচক উত্তরের পর তাকে আটকে রাখা হয়। এলাকাবাসিকে ডাকা হয়। পরে রাত ৮টার দিকে পুলিশ এসে তাকে আটক করে নিয়ে যায়।
চুরির ঘটনাটি নগরের শাহী ঈদগাহ এলাকার চলতি বছরের জানুয়ারির। আব্দুল্লাহ চৌধুরীর বাসা থেকে আইপিএস’র ব্যাটারি খুলে নেওয়ার পর ফোন করে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে ফোন খোলা পাওয়া গেলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন না। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়রি করেছিলেন আব্দুল্লাহ। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো প্রতিকার পাননি তিনি।
শুধু আব্দুল্লাহ চৌধুরীই নন, এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে নগরের আরও কয়েকজনের সঙ্গে। ঘটনার হোতা ঘুরেফিরে একজনই। যার নাম রিপন মিয়া। কাজ করতেন সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকার এল.আর.ব্যাটারি হাউস নামের একটি ইলেক্ট্রনিক পণ্যের দোকানে। দোকানের গ্রাহকদের বাসায় আইপিএস সেট-আপ করে আসার কাজটা তিনিই করতেন। করোনা মহামারিতে মালিক ব্যবসা গুটিয়ে নিলে সবার মতো রিপনের চাকরি চলে যায়। চাকরি হারিয়ে বেকার রিপন এখন দোকানটির পুরোনো গ্রাহকদের বাসায় গিয়ে আইপিএস সার্ভিসের নাম করে ব্যাটারি চুরি করে নিয়ে আসছেন। এমন অভিযোগ তুলে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অনেকে।
সিলেট মিরর-এর সঙ্গে আলাপকালে আব্দুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আইপিএসের দোকানটি আব্বুর পরিচিত। রিপন মিয়াই আইপিএস সেটআপ করে দিয়েছিলেন। কিছুদিন পর তিনি বাসায় এসে বলেন আইপিএস’র ব্যাটারিতে সমস্যা। সেটি ঠিক করতে হবে। ব্যাটারি খুলে নেওয়ার এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও রিপন না আসায় ফোন দিলাম। কিন্তু ধরেনি। কখনও ধরে কখনও আবার বন্ধ পাওয়া যায়। এই বিশ্বাসের পরিণতি যে ব্যাটারি চুরি হবে সেটা তো বুঝিনি। এ ঘটনার একমাস পর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম।’
রিপনের প্রতারণা থেকে রেহাই পাননি সাবেক সাংসদ ইয়াহইয়া চৌধুরীও। নগরের ঝরনারপাড় এলাকায় ইয়াইইয়া চৌধুরীর বাসায় তার ছোটভাই সহল আল চৌধুরী রাজী মা ও পরিবারকে নিয়ে থাকেন। সিলেট জেলা পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সহল আল চৌধুরী রাজী সিলেট মিররকে বলেন, ‘ভাইয়া ঢাকায় যাবেন। তাকে সঙ্গে নিয়ে আমি বেরিয়েছিলাম। ঠিক তখনই রিপন বাসায় ঢুকে। গাড়ি বেশ কিছু দূরে যাওয়ার পর ভাইয়া মানিব্যাগ আনেননি জানালে ফের বাসায় আসি। এসে দেখি আমার আম্মাসহ ঘরের বাকিরা আইপিএস ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের তাড়া থাকায় বিশেষ পাত্তা দেইনি। ঘরে ঢুকে সে জানায় ব্যাটারিতে সমস্যা, এটা ঠিক করে এনে দিতে হবে। একঘণ্টা পর সে ঠিক করে এনে দেবে। কিন্তু ১৮ হাজার টাকা দামের ব্যাটারি নিয়ে সে আর ফিরে আসেনি। ফোন দিলেও সে ধরে না।’ সহল আল চৌধুরী বলেন, ‘ব্যাটারি নিয়ে না আসায় আমরা সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়রি করি।’
একই ঘটনার শিকার হয়েছেন নগরের মিরাবাজারের আগপাড়া এলাকার সাঈদ রনি। সিলেট মিররকে তিনি বলেন, ‘রিপনের আরেকজন সঙ্গী আছে। তারা দুজন মিলে সঙ্গবদ্ধ হয়ে এই প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। রিপন আগের দোকানের বেশিরভাগ ক্রেতাদের বাসা চেনে। তাই বাছাই করে করে সে তাদের বাসাতেই যাচ্ছে। সবাই যেহেতু চেনেন তাকে, তাই সরল মনে ব্যাটারি খুলে নিয়ে যেতে দিচ্ছেন। আমি নিজেও একই কাজ করেছি। কিন্তু কি ভুলটা করেছি সেটা তো এখন বুঝতে পারছি।’
রিপন মিয়াকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য সহল আল চৌধুরী রাজী। তিনি বলেন, পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে গেছে। আমি থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ সিলেট মিরর অনলাইনকে বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে এখনও অবগত নই। থানায় এখনও এই নামের কেউ আসেনি। আসলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরসি-০৬