নাবিল হোসেন
জানুয়ারি ০৪, ২০২২
০৫:১৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ০৪, ২০২২
০৫:১৭ পূর্বাহ্ন
দুই দিন আগেই বিদায় নিয়েছে ২০২১ সাল। এ বছরে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সবচেয়ে আতঙ্কের নাম ছিল করোনা ভাইরাস। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে করোনা শুরু পর এ বছর দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে সবচেয়ে বেশি। গেল বছরে সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯ হাজার ৫৯৩ জন মানুষ।
এ সময় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৯২০ জন ও সুস্থ হয়ে উঠেন ৩৫ হাজার ৩৫২ জন। আক্রান্ত, মৃত ও সুস্থদের বেশিরভাগই ছিলেন সিলেট জেলার বাসিন্দা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১ সালে সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৮৯ শতাংশই ছিল সিলেট জেলার রোগী। সিলেট জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ৮২৮ জন। এছাড়া সুনামগঞ্জে ৩ হাজার ৭৩৮ জন, হবিগঞ্জে ৪ হাজার ৭১৩ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৩১৪ জন। সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয় গেল জুলাই মাসে। ওই মাসে বিভাগে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার রোগী শনাক্ত হয়।
২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৯২০ জন। মৃতদের মধ্যে ৮৩ শতাংশই ছিলেন সিলেট জেলার বাসিন্দা। জেলায় মারা গেছেন ৭৮৯ জন। আর সুনামগঞ্জ জেলায় মারা গেছেন ৪৯ জন, হবিগঞ্জে ৩২ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় মারা যান ৫০ জন। গত আগস্টে একমাসে রেকর্ড ৩৭৩ জনের মৃত্যু হয়।
গেল বছরে বিভাগে আক্রান্তের সঙ্গে সঙ্গে সুস্থতার সংখ্যা ছিল বেশি। বিশেষ করে করোনা টিকার কার্যকারিতার কারণে সুস্থতার সংখ্যা বেশি ছিল বলে অভিমত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। ২০২১ সালে সিলেট বিভাগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠেন ৩৫ হাজার ৩৬২ জন। সুস্থদের মধ্যে সিলেট জেলায় ২৩ হাজার ২৪ জন, সুনামগঞ্জে ৩ হাজার ৬৮২ জন, হবিগঞ্জে ২ হাজার ৯২৯ জন এবং মৌলভীবাজারে ৫ হাজার ৭২৭ জন।
গত বছরের ৫ এপ্রিল সিলেটে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়। ওই বছরের মে থেকে জুনে শনাক্ত ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। তবে, আগস্টের পর থেকে তা ছিল নি¤œমুখি। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মার্চের শেষ দিকে আবারও বাড়তে থাকে। এপ্রিলের পর সরকারি বিধি-নিষেধে সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও গত ঈদুল ফিতরের পর আবারও সংক্রমণ বাড়তে শুরু হয়। জুলাইয়ে তা বাড়ে আশঙ্কাজনক হারে।
এদিকে, জুলাইয়ে সংক্রমণের হার চূড়ায় থাকায় সিলেটের সব আইসিইউ ও সাধারণ শয্যা রোগীতে পূর্ণ হয়ে যায়। বিশেষ করে সিলেট মহানগরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা পাওয়া দুরূহ হয়ে উঠে। রোগীর চাপে হাসপাতালগুলো শয্যা ও আইসিইউ বাড়িয়েও রোগী জায়গা দিতে পারছিল না। তবে মধ্য আগস্ট থেকে সিলেট কমতে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। সংক্রমণ কমায় হাসপাতালগুলোতে কমতে শুরু করে রোগী ভর্তি সংখ্যা। আর অক্টোবরের পর সংক্রমণ নামে প্রায় শূণ্য শতাংশে। ফলে হাসপাতালগুলোর শয্যাও এখন খালি।
তবে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রণ নতুন করে শঙ্কা জাগাচ্ছে। দেশে গত এক সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় করোনা রোগী শনাক্তের হার প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বোচ্চ সর্তক থাকতে হবে বলে অভিমত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিদিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বিভাগে করোনা শনাক্ত হয় ৫০৯ জনের, মৃত্যু হয় ১২ জনের। ফেব্রুয়ারিতে শনাক্ত হয় ৩০৩ জনের, মৃত্যু হয় ৩ জনের। মার্চে শনাক্ত হয় ১ হাজার ১৮৬ জনের আর মৃত্যু হয় ১২ জনের।
এপ্রিলে করোনা শনাক্ত হয় ৩ হাজার ২০১ জন আর মৃত্যু হয় ৬০ জনের। মে মাসে বিভাগে করোনা শনাক্ত হয় ২ হাজার ৪ জনের আর মৃত্যু হয় ৫৯ জনের।
জুনে ৩ হাজার ২৮৫ জনের করোনা শনাক্ত ও ৬৯ জনের মৃত্যু হয়। জুলাই শনাক্ত হয় সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৪৭১ জনের, মৃত্যু হয় ২২৪ জনের।
আগস্ট মাসে করোনা শনাক্ত হয় ১২ হাজার ৫৩১ জন, মারা যান ৩৭৩ জন। সেপ্টেম্বরে শনাক্ত হয় ১ হাজার ৬১১ জন, মারা যান ৮৮ জন। অক্টোবরে শনাক্ত হয় ২৮৭ জন, মারা যান ১২ জন। নভেম্বরে শনাক্ত হয় ৯৯ জন, মারা যান ৫ জন এবং ডিসেম্বরে শনাক্ত হয় ১০৬ জন ও মারা যান ৫ জন।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শুক দেব পাল সিলেট মিররকে বলেন, ‘গত বছর করোনা সংক্রমণ বাড়ার বড় কারণ ছিল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে মৃত্যু হারও ছিল বেশি। তবে টিকার কারণে দেশে মৃত্যুহার কমছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন করে ওমিক্রণ শঙ্কা জাগাচ্ছে। যদিও এর মৃত্যুহার কম। তবে ডায়বেটিস, হৃদরোগ ও কিডনী রোগে যারা আক্রান্ত তাদেরকে বেশি সর্তক থাকতে হবে। কারণ এ সব রোগী ওমিক্রণে আক্রান্ত হলে আশঙ্কাজনক অবস্থা হতে পারে। তাই আমাদের সবাইকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
আরসি-০১