নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ০৫, ২০২২
০৫:১৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ০৫, ২০২২
০৫:২৩ পূর্বাহ্ন
সিলেটে বাম্পার অফারের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে আঁখি সুপার শপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দুই গ্রাহক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছেন। আদালত মামলাগুলো তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
দুই মামলাতেই আসামি করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হাসনীপুর গ্রামের আসমা শারমিন আঁখি (২৬) ও পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পুন্ডুরিয়া গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমকে (৩১)। এ ছাড়া আরও চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আসমা ও জাহাঙ্গীরই সিলেটের শহরতলির বটেশ্বর গইলাপাড়া এলাকায় আঁখি সুপার শপ নামের এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। স¤প্রতি প্রতিষ্ঠানটি তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে।
মামলা দুটির বাদী সিলেট নগরের শাহপরাণ উপশহর এলাকার বাসিন্দা মো. জিয়াউর রহমান (৪০) ও মো. আশরাফ হোসেন (৪৭)। আশরাফ হোসেন ৯ লাখ ৬১ হাজার ৭২০ টাকা এবং জিয়াউর রহমান ৩ লাখ ৭ হাজার ২০০ টাকা প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন।
ভুক্তভোগী দুই গ্রাহকের করা মামলার আইনজীবী মো. ফয়সাল আহমেদ ও মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন। মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন সিলেট মিররকে বলেন, ‘আসামিরা অনলাইনে পেজ চালু করে একটি পণ্যের বিপরীতে আরেকটি পণ্য দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা তুলতেন। এমন অভিযোগে দুজন গ্রাহক সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে মামলা করেছেন। আদালতের বিচারক মো. সাইফুর রহমান মামলাগুলো তদন্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিআইবি) নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আঁখি সুপার শপ কর্তৃপক্ষ ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ‘একটি পণ্য কিনলে একই পণ্য আরেকটি ফ্রি তথা শতভাগ ক্যাশব্যাক’ বলে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। এ প্রচারণা দেখে দুজন বাদী আরও কয়েকজন সহযোগী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে যান। তারা গত বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দুটি মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস সামগ্রী এবং তেল-দুধ ক্রয়ের জন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, টাকা জমা দেওয়ার পর মামলার দুই বাদীকে প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় মেমোও দেয় এবং দ্রুতই পণ্য বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। সেসব পণ্য যথাসময়ে না পেয়ে প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করে বন্ধ পান গ্রাহকরা। এরপর প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে গিয়ে সেটি বন্ধ দেখতে পান। পরে বিভিন্ন গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তারা জানতে পারেন, তাদের মতো আরও গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে আসামিরা পালিয়ে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে আঁখি সুপার শপ নামের প্রতিষ্ঠানটি তালাবদ্ধ আছে। পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা গত শনিবার দুপুরে বটেশ্বর এলাকার সড়ক অবরোধ এবং টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এই গ্রাহকেরা অভিযোগ করেন, আঁখি সুপার শপ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা শুরু করে। এর বাইরে সুপার শপের মাধ্যমেও তারা বটেশ্বর এলাকায় ব্যবসা পরিচালনা করত। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে নানা সময়ে ৯০ দিন এবং ৩০ দিনের একাধিক প্যাকেজ অফার ফেসবুক পেজে জানানো হত। এসব প্যাকেজে একটি পণ্য কিনলে আরেকটি পণ্য ফ্রি দেওয়া হত। এ অফারের মধ্যে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ও গ্রোসারি পণ্য থাকত। এ অফারে অংশ নিয়ে কিছু গ্রাহক একটি ক্রয় করা পণ্যের সঙ্গে একই পণ্য আরেকটা বিনামূল্যে পেয়েছেন।
একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে আঁখি সুপার শপের পক্ষ থেকে এমন একটি অফার দিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। এ প্রচারণায় প্রলুব্ধ হয়ে অসংখ্য গ্রাহক মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্য কিনতে টাকা জমা দেন। এভাবে কয়েক কোটি টাকা জমা নিয়েছে। এই টাকা নিয়েই আসমা ও জাহাঙ্গীর পালিয়ে গেছেন বলে তাদের অভিযোগ।
এদিকে, সোমবার আঁখি সুপার শপ তাদের ফেসবুক পেজে জানায়, নিরাপত্তাহীনতার কারণে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সিলেট আসতে পারছেন না। তাদের কাছে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। চাঁদা না দিলে তাদের মেরে ফেলার হুমকিও প্রদান করা হয়। তবে মাসের শুরুতে তারা ১ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছিলেন। এভাবে গত এক বছরে তাদের কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে ফেসবুকে পেজে তারা জানান।
আঁখি সুপার শপের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, ‘আমরা চাই আপনাদের প্রাপ্য আপনাদেরকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিতে।’
এ বিষয়ে সিলেট মহানগরের শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘আঁখি সুপার শপের প্রতারণার বিষয়টি একাধিক ভুক্তভোগী গ্রাহক জানিয়েছেন। আমি তাদের তখন আদালতে গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। পরে কয়েকজন আদালতে মামলা করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগী কয়েকজন গ্রাহক গত শনিবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির সামনে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।’
আরসি-০১