নাবিল হোসেন
জানুয়ারি ০৮, ২০২২
০৩:১৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ০৮, ২০২২
০৩:১৭ পূর্বাহ্ন
সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী করোনার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে। আগামীকাল শনিবার (৮ জানুয়ারি) থেকে সিলেটের ১৩ উপজেলার ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারির আগেই সিলেট জেলার শিক্ষার্থীদের টিকাদান নিশ্চিত করার কথা।
সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে মাউশি জানিয়েছে, যেসব শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন হয়নি এবং যাদের ১৬ ডিজিটের নিবন্ধন নম্বর রয়েছে, ৬ জানুয়ারির মধ্যে তাদের পুনরায় নিবন্ধন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের জানাতে হবে। করোনার টিকার জন্য যোগ্য সব শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠানভিত্তিক তালিকা ৭ জানুয়ারির মধ্যে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠাবেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ৮ থেকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে টিকা দেওয়ার দিনে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা নিশ্চিত করবেন।
এদিকে, জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শুরু হয়। তখন থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকাতেই স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম চলছে। প্রথমে চারটি স্কুলের কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হলেও বর্তমানে ৫টি কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে টিকা। গত সোমবার পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার ২৪ হাজার ৮৯৯ জন শিক্ষার্থী প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে। তাদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৯ হাজার ১৩০ জন। অর্থাৎ মোট শিক্ষার্থীর ৮৫ শতাংশই করোনা টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছে। এছাড়া জেলায় গত ১৭ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়। জেলার এইচএসসি, আলিম ও কারিগরি শিক্ষার্থী মিলিয়ে মোট পরিক্ষার্থী ছিলেন ৩২ হাজার ৯৫৩ জন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ২১ হাজার ৯৩৫ জন।
নগর এলাকায় স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম চললেও উপজেলাগুলোতে এখনও টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ফাইজারের টিকা দিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের প্রয়োজন। উপজেলাগুলোতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় এতদিন টিকা কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। আগামী শনিবার থেকে সিলেটের ১৩ উপজেলায় ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হবে। এ লক্ষ্যে স্কুল ও মাদরাসা শিক্ষার্থী মিলিয়ে ২ লাখ ১৩ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থীর তথ্য পাঠানো হয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে।
উপজেলাগুলোর মধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় স্কুল ও মাদরাসা শিক্ষার্থী মিলিয়ে মোট শিক্ষার্থী ২৯ হাজার ৭০৭ জন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় রয়েছেন ১৮ হাজার ৭১ জন, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ১৮ হাজার ৬৮৬ জন, বিয়ানীবাজার উপজেলায় ১৭ হাজার ৮৮৮ জন, বিশ্বনাথ উপজেলায় ১৮ হাজার ২৪৫ জন, জৈন্তাপুর উপজেলায় ১৪ হাজার ২৩৬ জন, কানাইঘাট উপজেলায় ১৮ হাজার ২৪২ জন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৯ হাজার ৭৩৩ জন, জকিগঞ্জ উপজেলায় ২১ হাজার ২৫২ জন, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার ৮০৯ জন, গোয়াইনঘাট উপজেলায় ১৯ হাজার ১৪৩ জন, বালাগঞ্জ উপজেলায় ৬ হাজার ১০৯ জন এবং ওসমানীনগর উপজেলায় ১৬ হাজার ৪৮১ জন। এসব উপজেলার ৩০টি টিকাদান কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে।
সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এএসএম আব্দুল ওয়াদুদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘প্রথমে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা প্রয়োগের উদ্যোগ নিতে বলা হয়। এ আলোকে আমরা সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকেই প্রথম ডোজ টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। তবে নতুন করে ১৮ বছর বযসী শিক্ষার্থীদেরও টিকা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন তাদেরও টিকা দেওয়া হচ্ছে।’
শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ টিকা দিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের প্রয়োজন হয়। তাই এতদিন উপজেলায় টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। এখন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা উপজেলা শিক্ষার্থীদের তালিকা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন আগামী শনিবার থেকেই সিলেটের উপজেলাগুলোতে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হবে। আশা করছি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সিলেট জেলার সব শিক্ষার্থীকেই ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রথম ডোজ টিকার আওতায় আনতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীর যাদের জন্মনিবন্ধন হয়নি বা যাদের ১৬ ডিজিটের নিবন্ধন নম্বর রয়েছে তাদের আবার নিবন্ধন করার নির্দেশ রয়েছে। তবে আমরা সিলেটে জন্মনিবন্ধন ছাড়াই সব শিক্ষার্থীকে টিকা দিচ্ছি। পরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জন্মনিবন্ধন কার্ড গ্রহণ করবে।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা শিক্ষা অফিস সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য ১৩টি কেন্দ্র নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমরা প্রতিদিন পাঁচটি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের টিকা দিচ্ছি। প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া শেষ হলে শিক্ষা কর্মকর্তাদের শিডিউল অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান শুরু হবে।’
আরসি-১৪