আবহমান সংস্কৃতির ধারায় জেগে ওঠার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক


জানুয়ারি ০৮, ২০২২
০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ০৮, ২০২২
০৫:১৪ পূর্বাহ্ন



আবহমান সংস্কৃতির ধারায় জেগে ওঠার আহ্বান
সিলেটে শ্রুতির পিঠা উৎসব

‘ঘর থেকে সাধারণত বাবা বের হতে দেন না। ছুটির দিনগুলোতে কড়াকড়ির মাত্রা বাড়ে। তবে আমার কলেজে পিঠা উৎসব হচ্ছে শুনে আর না করেননি। উৎসব তো শুধু পিঠা খাওয়া আর বন্ধুদের সঙ্গে ভালো মুহূর্ত কাটানোই নয়। আমার কাছে এমন উৎসব মুক্ত বিহঙ্গ হওয়ার দিন। কতদিন পর চার দেওয়ালের বাইরে আসা।’

কথাগুলো নগরের একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থী তাসনিম লাবনীর। শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে সিলেট অনুষ্ঠিত পিঠা উৎসবে আলাপকালে এ কথা জানান।  


করোনা শেষে আবহমান সংস্কৃতির ধারায় আবারও নতুনভাবে জেগে ওঠার আহ্বানে সিলেটের অনুষ্ঠিত হয়েছে পিঠা উৎসব। প্রতিবছরের মতো সুবিদবাজারস্থ ব্লু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতি সিলেট আয়োজিত হয় দিনব্যাপী পিঠা উৎসব। তবে তাসনিমদের মতো অনেকের কাছে এই পিঠা উৎসব পেয়েছে অন্য মাত্রা। 


যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সাদিয়া চৌধুরীর কাছে এই উৎসব একটি মিলনমেলা। তিনি বলেন, করোনার কারণে অনেকদিন কারো সঙ্গে দেখা হয়নি। এছাড়া কর্মব্যস্ত জীবনে এক শহরে থাকলেও দেখা সাক্ষাতের সুযোগ কমই পাওয়া যায়। পিঠা উৎসবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বেড়াতে এসেছিলাম। তবে এসে অনেক পরিচিতজনদের সঙ্গেও দেখা হয়েছে। যেন আমাদের একটি মিলনমেলা। 

দিনব্যাপী আয়োজন উদ্বোধন করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন শ্রুতির সদস্য সচিব সুকান্ত গুপ্ত।

আরও উপস্থিত ছিলেন, সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ, উপকমিশনার ফয়সাল মাহমুদ, ভারতীয় হাই কমিশনের সহকারী হাই কমিশনার নিরাজ কুমার জয়সওয়াল, বিশিষ্ট উপস্থাপক এবং আবৃতি শিল্পী শারমিন লাকী, নজরুল গবেষক এবং শিল্পী ড. প্রদীপ কুমার নন্দী, সংগীতশিল্পী ইরাবতী মন্ডল, বাংলাদেশ আবৃত্তিশিল্পী সংসদের যুগ্ম সদস্য সচিব আবু নাসের মানিক, মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন, সাধারণ সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী, সম্মিলিত নাট্যপরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমেদ মিশু, সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য শামসুল আলম সেলিম, রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী অনিমেষ বিজয় চৌধুরী, শ্রুতি সমন্বয়ক সুমন্ত গুপ্ত প্রমুখ।


বক্তারা বলেন, ‘শীত এলেই দিগন্তজোড়া প্রকৃতি হলুদ-সবুজ রঙে ছেয়ে যায়। পাকা ধানের পাশাপাশি প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দেয় গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম আর বকফুল। এই শোভা দেখে আনন্দে নেচে ওঠে কৃষকের মন। নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি করা হয় পিঠা, পায়েস, ক্ষীরসহ হরেক রকম খাবার।’

বক্তারা আরও বলেন, ‘করোনাকাল শেষে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের বারতায় শীত জেঁকে বসেছে। মানুষ আবারও জেগে উঠছে শুদ্ধ সংস্কৃতির শুভ বারতায়। করোনাকে জয় করে আবারও এগিয়ে যাবে সমাজ এবং সংস্কৃতি।’

দিনব্যাপী পিঠা উৎসবে মোট ৪০টি স্টল অংশ নেয়। এর মধ্যে ২৭টি স্টলেই বাহারি পিঠার পসরা সাজিয়ে তারা বসেন। অংশ নেওয়া পিঠা স্টলগুলো হলো ঘর গিন্নি, অপরাজিতাস কালেকশন, সামায়রা পিঠাঘর, মিস বাঙালি পিঠা ঘর, সিলেট হোম মেইড ফুড, কুঞ্জ পিঠা ঘর, হৃদপদ্ম, সুইট বোনানজা, এসবি ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, সুমনার পিঠা ঘর, ইয়াসমিন কিচেন, বাহারি পিঠা ঘর, সার্ক ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, সমৃদ্ধি ফুডস, হোম মেইড ফুড অ্যান্ড কেক কর্নার, ইটেরিয়া, ফারহানাস কিচেন, আসমানী হোম মেইড ফুডস, উড়ছে ঘুড়ি, পিঠাবাড়ী, মিঠাইবাড়ি, বি মেইড, সন্দেশ, রসুই বাগান, এইচ কিউ এন, লতিফা শফি চৌধুরী মহিলা ডিগ্রি কলেজ, মালিহাস কিচেন ও উমামাস ফুড কিচেন। বাকি ১৩টি স্টল ক্রাফট ও মেয়েদের বিভিন্ন অলংকার নিয়ে সাজানো হয়েছিল।


দিনব্যাপী আয়োজনে সমবেত পরিবেশনায় অংশ নেন রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, গীতবিতান বাংলাদেশ, দ্বৈতস্বর, পাঠশালা, ছন্দনৃত্যালয়, নৃত্যশৈলী, নৃত্যরথ, অন্বেষা, ভাবুক, মুক্তাক্ষর, ললিত মঞ্জরী, গীতসুধা, শ্রæতি আবৃত্তি বিভাগ, সুরসপ্তক, সংগীত নিকেতন, অনির্বাণ, সুরের ভূবন, থিয়েটার একদল ফিনিক্সের শিল্পীরা।

একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবু নাসের মানিক, মুহাম্মাদ মুজাহিদুল ইসলাম, দেবাশীষ চৌধুরী। সংগীত পরিবেশন করেন লোক সংগীতশিল্পী পান্ডব চন্দ কানু, বাউল হীরামোহন তালুকদার, গৌতম চক্রবর্তী, প্রদীপ মল্লিক, ইকবাল সাই, লিংকন দাশ প্রমুখ।


আয়োজকদের পক্ষে সুমন্ত গুপ্ত বলেন, মহামারি করোনায় পৃথিবীর সাধারণ দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। এতে মানুষের মাঝে নিসঙ্গতা ভর করছে। তবে মহামারি কাটিয়ে আবহমান বাঙ্গালি সংস্কৃতির ধারায় ফের জেগে উঠার আহ্বান জানাতেই আমাদের এই পিঠা উৎসবের আয়োজন। এই উৎসব একটা মিলন মেলা। এই মিলনমেলার জন্যই প্রতিবছর আমাদের এক হওয়া।  

দিনব্যাপী আয়োজিত উৎসবের পিঠা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ। দিনব্যাপী আয়োজন শেষ হয় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে।

আরসি-১৬