নাবিল হোসেন
জানুয়ারি ১৩, ২০২২
১১:৪১ অপরাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ১৩, ২০২২
১১:৪১ অপরাহ্ন
প্রায় এক বছর ধরে চলছে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম। এই সময়ের মধ্যে সিলেট জেলায় টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১৫ লক্ষাধিক মানুষ। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১১ লাখ লক্ষাধিক মানুষ। যা সিলেটের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৮ শতাংশ। টিকা গ্রহণকারীরে মধ্যে এগিয়ে আছেন সিলেট নগরের বাসিন্দারা। আর সবচেয়ে পিছিয়ে বালাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা।
সিলেট জেলা সিভিল সার্জন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলায় মোট জনসংখ্যা ৪০ লাখ ৫৬ হাজার ৪৫৩ জন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১৫ লাখ ৮১ হাজার ৪২৭ জন। যা মোট জনসংখ্যার ৩৯ শতাংশ। দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন ১১ লাখ ৪৮ হাজার ১৫৪ জন। যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
এদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার মোট জনসংখ্যা ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৩৬৯ জন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৩ লাখ ৭১ হাজার ১০৮ জন। যা মোট জনসংখ্যার ৫৭ দশমিক ২ শতাংশ। আর সিটি করপোরেশন এলাকায় দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন ৩ লাখ ১৮ হাজার ৫১০ জন। মোট জনসংখ্যার ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন।
সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকা গ্রহণের সংখ্যা সন্তোষজনক। আশা করছি খুব কম সময়ের মধ্যে আমরা সিটি করপোরেশনের ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পারব।’
এদিকে, সিলেট জেলায় উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন বালাগঞ্জের বাসিন্দারা। এখানে মোট জনসংখ্যা ৩ লাখ ৭৮ হাজার ২৫১ জন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৫৩ জন। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ প্রথম ডোজ নিয়েছেন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন মাত্র ৫৯ হাজার ৩৩১ জন। মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন।
সিলেট সদরের ৪ লাখ ১২ হাজার ৫৫২ জন মানুষের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৭৪ জন। আর দুই ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৫২ জন। প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৪৫ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ২ লাখ ১৭ হাজার ৭১৪ জনের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৯৬ হাজার ৯৪২ জন আর দুই ডোজ নিয়েছেন ৫৭ হাজার ২৯৮ জন। অর্থাৎ প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ আর দুই ডোজ নিয়েছেন ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
বিশ্বনাথে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৭১৫ জনের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৯৫ হাজার ২৭৬ জন আর দুই ডোজ নিয়েছেন ৮৪ হাজার ৭৬৪ জন। প্রথম ডোজ নিয়েছেন মোট জনসংখ্যার ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ আর দুই ডোজ নিয়েছেন ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ।
ফেঞ্চুগঞ্জে ১ লাখ ২৩ হাজার ৭২০ জনের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৪১ হাজার ৯১৩ জন এবং ৩৬ হাজার ১৮১ জন দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। উপজেলার মোট জনসংখ্যার ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ প্রথম ডোজ আর ২৯ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন।
গোলাপগঞ্জে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৪৩৪ জনের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৫৪৭ জন। আর দুই ডোজ গ্রহণ করেছেন ৮৫ হাজার ৯০৮ জন। মোট জনসংখ্যার ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রথম ডোজ আর ২৩ শতাংশ দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন।
বিয়ানীবাজার উপজেলার ২ লাখ ৯৯ হাজার ৫৭০ জনের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৯১১ জন আর দুই ডোজ নিয়েছেন ৮১ হাজার ৮৮৮ জন। প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ প্রথম ডোজ আর ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ দুই ডোজ নিয়েছেন।
জকিগঞ্জের ২ লাখ ৮০ হাজার ১০৬ জনের মধ্যে ১ লাখ ২ হাজার ৯৫২ জন প্রথম ডোজ আর ৮৩ হাজার ৮৩৬ জন দুই ডোজ নিয়েছেন। মোট জনসংখ্যার ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রথম ডোজ আর ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন।
কানাইঘাট উপজেলায় ৩ লাখ ১১ হাজার ৭৯৯ জনের মধ্যে ৭৩ হাজার ৮০৭ জন প্রথম ডোজ এবং ৫৩ হাজার ৪৫৬ জন দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। শতাংশের হিসেবে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ আর দুই ডোজ পেয়েছেন ১৭ দশমিক ১ শতাংশ।
গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৬০৮ জনের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৪২ জন আর দুই ডোজ নিয়েছেন ৬৮ হাজার ৯২৪ জন। মোট জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ প্রথম ডোজ আর ২০ দশমিক ৩ শতাংশ দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন।
জৈন্তাপুরের ১ লাখ ৯১ হাজার ৫২ জনের মধ্যে ৬০ হাজার ৭২৩ জন প্রথম ডোজ এবং দুই ডোজ নিয়েছেন ৪৩ হাজার ২৫ জন নিয়েছেন। মোট সংখ্যার ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ প্রথম ডোজ আর ২২ দশমিক ৫ শতাংশ দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ২ লাখ ৫ হাজার ৫৬৩ জনের মধ্যে ৬০ হাজার ৭৭৯ জন প্রথম ডোজ আর ৩৩ হাজার ৮১ জন দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। উপজেলার মোট জনসংখ্যার মধ্যে ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ প্রথম ডোজ আর দ্বিতীয় ডোজ ১৬ দশমিক ১ শতাংশ।
সিলেটে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদানের মাধ্যমে সিলেটে শুরু হয় টিকাদান কার্যক্রম। ওই বছরের ৮ এপ্রিল থেকে সিলেটে শুরু হয় অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ প্রদান। তবে টিকা সঙ্কটের কারণে জুনে বন্ধ হয় টিকাদান কার্যক্রম। পরে ১৯ জুন থেকে মেডিকেল-নার্সিং শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার মাধ্যমে আবারও টিকাদান শুরু হয়।
আর গত ১৩ জুলাই থেকে আবারও শুরু হয় গণটিকা কার্যক্রম। এ সময় সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় দেওয়া হয় মডার্নার টিকা এবং উপজেলায় দেওয়া হয় সিনোফার্মের টিকা। সিলেটে এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম, মডার্না, ফাইজারের টিকা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গতকাল সোমবার ওমিক্রন প্রতিরোধী ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এতে বলা হয়েছে, আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে রেঁস্তোরায় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনার টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে। ১২ বছরের বেশি বয়সী সব ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। সব প্রকার যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে এবং সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত সিলেট মিররকে বলেন, ‘সিলেটে টিকার শতাংশের হিসেব কম দেখানোর অন্যতম কারণ আমাদের কাছে মোট জনসংখ্যার পর্যাপ্ত তথ্য নেই। এছাড়া মোট জনসংখ্যায় এক বছর বয়সী শিশুও রয়েছে। তাই শতাংশের হিসেবে আমরা হয়ত পিছিয়ে আছি। তবে টিকাদানের ক্ষেত্রে আমরা অনেক এগিয়ে।’
বর্তমানে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা কম জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন মানুষের মধ্যে টিকা গ্রহণের আগ্রহ কম। প্রথম দিকে মানুষের মধ্যে যে আগ্রহ ছিল তা এখন দেখা যাচ্ছে না। তাই সরকার এখন বিভিন্ন কার্যক্রমে টিকা বাধ্যতামূলক করছে। আমরাও উপজেলাগুলোতে দরজায় দরজায় গিয়ে টিকা গ্রহণের জন্য প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছি।’
আরসি-১৫