শাবিপ্রবি প্রতিনিধি
জানুয়ারি ১৬, ২০২২
১০:৫৫ অপরাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ১৭, ২০২২
০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন
তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের উপর টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ছে পুলিশ প্রশাসন। পরিস্থিতি সামাল দিতে এ পদক্ষেপ বলছে পুলিশ। এর আগে শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিপুল সংখ্যক আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে বিশ্ববিদ্যালয় কাম্পাসে মোতায়ন করা হয়েছে। তারা সেখানে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ছে।
রবিবার (১৬ জানুয়ারি) বেলা তিনটার দিকে উপাচার্য কার্যালয় থেকে বের হয়ে নিজ বাসায় যাওয়ার সময় তাকে আটকানোর চেষ্টা করে শিক্ষার্থীরা। এসময় তিনি ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে ঢুকেন। সেখানে তাকে অবরোধ ধরেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ও উপাচার্যকে মুক্ত করতে সিলেট উপপুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ এর নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ডিনববৃন্দ, বিভাগীয় প্রধানগণ, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক, হল প্রভোস্টবৃন্দসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন মহলকে নিয়ে সকালেই প্রশাসনিক ভবনে আলোচনায় বসেন। সেখান থেকে প্রতিনিধিদল শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান। দাবি না মানায় একপর্যায়ে ‘প্রশাসন ধিক্কার, প্রশাসন ধিক্কার’ করতে করতে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রতিনিধি দলের পিছু নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, প্রক্টর, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালকসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে হলের গুণগত মান উন্নত এবং অব্যবস্থাপনার সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান। এজন্য শিক্ষার্থীদের কাছে এক সপ্তাহের সময় চান প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি না মানা পর্যন্ত সময় বাড়াতে অস্বীকৃতি জানান আন্দোলনকারীরা। পরে প্রশাসনের কথা শিক্ষার্থীরা না শুনলে প্রশাসনিক বডির সদস্যরা সেখান থেকে চলে যাওয়ায় সময় শিক্ষার্থীরা পেছনে পেছনে ‘প্রশাসন ধিক্কার, প্রশাসন ধিক্কার’ বলে স্লোগান দিতে দিতে সামনের দিকে আগাতে থাকেন।
এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের পিছু নেওয়ার পর অর্জুন তলা থেকে উপাচার্য কার্যালয়ের দিকে আসেন। এরপর উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদকে সামনে পান আন্দেলনকারীরা। তখন উপাচার্যকে ঘিরে ধরে তার পিছু নিয়ে ‘ধিক্কার ধিক্কার’ ‘প্রশাসন ধিক্কার’ বলে স্লোগান দিতে দিতে সামনে আগান তারা। তখন উপাচার্যকে নিয়ে উপস্থিত শিক্ষক, কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি দিকে এগুলে শিক্ষার্থীরা তার পেছন পেছন সেখানে যান। পরে আইআইসিটি ভবনে ঢুকলে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন শিক্ষার্থীরা।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ রবিবার রাত ১০টায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘পরিস্থিতি শান্ত করতে ৩১টি গুলি ও ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। পুলিশ ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছে।’
অধ্যাপক জহিরের গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে তিনি আহত হয়েছেন। এছাড়া আমাদের এক নারী পুলিশ সদস্যের পায়েও গুলি লেগেছে।’ সংঘর্ষের ঘটনায় তিনি নিজেসহ ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও দাবি তার।
এদিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় বেগম সিরাজজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজাসহ প্রভোস্ট বডির পদ ত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর প্রশাসনের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের নেতৃত্বাধীন গ্রুপের নেতাকর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ হামলায় ১০-১২ জন শিক্ষার্থী আহত এবং কয়েকজন ছাত্রী হেনস্তার শিকার হয়েছে বলে জানা যায় গেছে।
এছাড়া রবিবার প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগের দাবিসহ তিন দফা দাবি আদায়ে ছাত্রীদের চলমান আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগে সকাল থেকে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় ক্যাম্পাসে কোন ধরণের যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে দুপুর পৌঁনে তিনটার দিকে গোলচত্বরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডীন, প্রক্টর ড. আলমগীর কবীর, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহীর উদ্দীন আহমদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মহিবুল আলম। কিন্তু সেখানে কোন ধরণের ফলপ্রসূ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা।
এইচএন/বিএ-০১