বেলাল আহমেদ
জানুয়ারি ২৪, ২০২২
১২:৫৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ২৪, ২০২২
০৭:৪৩ পূর্বাহ্ন
উচ্চশিক্ষায় সিলেটে গর্বের ধন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক আন্দোলন সংগ্রমের ফসল এই বিদ্যাপিঠ। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানটি ভালো নেই। আমরণ অনশনে বসেছে শিক্ষার্থীরা। অনেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। তার আগে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হয়েছে নৃশসংস হামলা। এই গভীর সংকট নিয়ে কি ভাবছেন সিলেটের বিশিষ্টজনরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন সিলেট মিরর-এর নিজস্ব প্রতিবেদক বেলাল আহমেদ।
উপাচার্যের পদত্যাগ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই
ব্যরিস্টার আরশ আলী, সভাপতি, গণতন্ত্রী পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটি
মূলত উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতায় ছোট একটা ঘটনা বড় আকার ধারণ করেছে। এটা অনেক আগেই সমাধান করা সম্ভব ছিল। সবুজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের নির্যাতন, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ অমানবিক এবং অমার্জনীয় অপরাধ। শাহজালাল বিশ্বদ্যিালয়ের ইতিহাসে এ হামলা নজিরবিহীন। পুলিশ দিয়ে ছাত্রদের পেটানো খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।
এই বিশ্বদ্যিালয়েই উপাচার্য হাবিবুর রহমানও অবরুদ্ধ হয়েছিলেন। তিনিতো এভাবে সহিংস হয়ে উঠেননি। কৌশলে সমস্যাগুলোর সমাধান করেছিলেন। একানকার স্থানীয় রাজনৈতিক ও নাগরিক নেতাদের তিনি ডেকে নিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো বড় সমস্যার সমাধান করতেন। এখনতো এসবও দেখা যায় না।
এখন যেহেতু আন্দোলন এক দফায় রূপান্তরিত হয়েছে সেহেতু উপাচার্যের পদত্যাগ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। উপাচার্য কেন পদত্যাগ করছেন না? তারতো পদত্যাগ করা উচিৎ। এ ছাড়া আসলে আর কোনো সমাধান এ মুহুর্তে নেই। কারণ শিক্ষার্থীদেরকে চ‚ড়ান্তভাবে এ পথে তিনিই ঠেলে দিয়েছেন। এ ঘটনা এখানেই শেষ না হলে তা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
উপাচার্য অমানবিক ও অনৈতিক আচরণ করেছেন
বেদানন্দ ভট্টাচার্য, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, সিলেট
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অমানবিক এবং অনৈতিক আচরণ করেছেন। আর এর মাধ্যমেই একটি ছোট ঘটনা বড় হয়ে উঠেছে। এখন শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবিতে অনশন করে যাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীর অবস্থা এখন খুবই খারাপ। অনেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছে। আমি মনে করি, ফরিদ উদ্দিন সাহেবের অপসারণ ছাড়া অন্য কোনোভাবেই এ সমস্যার সমাধান হবে না বরং এটা নানাভাবে আরও জটিল হয়ে উঠবে।
এখন আমার মনে হয় তিনটি পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি। প্রথমত, উপাচার্যের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদের ওপর যে সমস্ত মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। তৃতীয়ত, ফরিদ উদ্দিন সাহেব কোন প্রেক্ষাপটে এবং কী কারণে শিক্ষার্থীদের বিরেুদ্ধে এমন মারমুখি হয়ে উঠলেন, কেন ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করালেন তা তদন্ত করে দোষীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এ তিনটি কাজ সংকট সমাধানের জন্য করা উচিৎ।
এ অবস্থা তৈরি করার জন্য আমি তীব্র নিন্দা জানাই এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি আামর সহানুভ‚তি জানাই। আমার সন্তানরা এই জানুয়ারি মাসের প্রচন্ড ঠান্ডায় রাস্তার মধ্যে পড়ে আছে। এ দৃশ্য যে কোনো সংবেদনশীল ও বিবেকবান মানুষের জন্য অস্বস্তিকর বিষয়। আজ শিক্ষার্থীরা কাফনের কাপড় পরে ফেলেছে। আমার সন্তান কাফন পরবে আমি এ দৃশ্য কিভাবে সহ্য করব। কোনো একজন ব্যাক্তির জন্য বা কারও ‘ইগো’র জন্য আমি আমার সন্তানের গায়ে কাফন দেখতে চাই না। নানা রাজনৈতিক ক্ষমতার হিসেব নিকেশের জন্য আমার সন্তান কাফন পরবে এটা আমার জন্য খুবই বিব্রতকর। আমি এ নিয়ে খুবই ক্ষুব্ধ, হতাশ। আমি অত্যন্ত, মর্মান্তিকভাবে দুঃখিত।
এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, অবিলম্বে সমাধান হোক
লোকমান আহমদ, সভাপতি, জাসদ, সিলেট জেলা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে তা নিয়ে খুব বেশি কিছু না, এক লাইনে বলব এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, অপ্রত্যাশিত। এটা উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের নেতৃত্বে সমস্যা-সংকট চিহ্নিত করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার স্বার্থে, শাবিপ্রবির সুনাম অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে বিষয়টির সমাধান দ্রæত হওয়া উচিত। শুধু সিলেট না বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা এই প্রথম। অনিশ্চয়তার পথে হাটছে বিশ্ববিদ্যালয়। একটি সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই দায়ী।
আন্দোলকনকারীদের নেতৃত্বে কারা কিংবা ভিসিই কিভাবে বা কার নেতৃত্বে এমন অভব্য আচরণ করছেন সেটা জানা যাচ্ছে না। যার ফলে এই আন্দোলনেরও লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না, এবং এই সংকটও তাই নিরসন হচ্ছে না।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিভাবকত্বের যে বিষয় এবং উপাচার্যের পরিচালনার দক্ষতার অভাব এক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে। সে বিষয়ে অবিলম্বে সিদ্ধান্তে আসা উচিত, সমাধান হোক। শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসুক, শাবিপ্রবির সুনাম অক্ষুন্ন থাকুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এখনই উপাচার্যের পদত্যাগ করা উচিত
ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সভাপতি, সুজন সিলেট
প্রথমত এটি একটি ছোট ঘটনা ছিল। প্রশাসনের ব্যর্থতায় সে ঘটনা আজ এত বড় আকার ধারন করেছে। প্রথম থেকে উপাচার্য ভুল করে গেছেন। তিনি যেহেতু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক, তার নখদর্পনে এ বিষয়গুলো থাকা উচিত ছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। আমার মনে হয়েছে তিনি এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। আর এটাই তাঁর ব্যর্থতা। যখন সিরাজুন্নেসা হলে সংকট দেখা দিয়েছিল তখন কিন্তু লিজা ম্যাডাম করোনাক্রান্ত ছিলেন। উপাচার্য চাইলেই তখন এ সংকটের সমাধান করতে পারতেন। পরে যখন সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন তখন অনেক দেরি করে ফেলেছেন।
আপনারা জানেন মোসলেহ উদ্দিন স্যার যখন শাবির উপাচার্য ছিলেন তাঁকে ছাত্ররা ২২ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন, তিনি কিন্তু ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকেননি। হাবিবুর রহমান স্যারের মতো ব্যাক্তির বেলাও এমন ঘটনা ঘটেছে। ১৯ ঘন্টা অবরুদ্ধ ছিলেন। কিন্তু তিনিও ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকেননি। সেটা করতে পারেননি ফরিদ উদ্দিন। যাদেরকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করার কথা ছিল সেই ছাত্রলীগের আক্রমণ এবং পুলিশের লাটিচার্জ ও সাউন্ড গ্র্যানেড ঞেছড়াটা ভুল ছিল। এটি জঘণ্য অন্যায়। সিদ্ধান্তগুলো তাঁর ভুল ছিল। তিনি সামাল দিতে পারেননি বলেই এ বিষয়টি এতো জটিল হয়ে উঠেছে।
আমর মনে হয় না, ফরিদ উদ্দিন সাহেব ছাত্র-শিক্ষকবান্ধব উপাচার্য। যদি তিনি তাই হতেন তবে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এটা সামলাতে পারতেন। এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটত না। এ ছাড়া শনিবার সন্ধ্যায় ছাত্রীদের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলার বিষয়েও আমরা নিন্দা জানাই।
আমার মনে হয় এখন আর বসে থেকে লাভ নেই। এখন যে সংকট তৈরি হয়েছে তা একদিনের নয়। আরও অনেক সংকট আছে শাবিতে। সবগুলো সমস্যা ও সংকট সমাধান করে নতুন একজন ছাত্র-শিক্ষক বান্ধব উপাচার্য নিয়োগ দিলে হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সাধানের পথ একটাই এখন ফরিদ উদ্দিননের এখন পদত্যাগ করা কিংবা ছুটিতে চলে যাওয়া উচিত এর বাইরে আর কোনো পথ খোলা নেই।
সমস্যার সমাধান করে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানো উচিত
এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি, আইনজীবী সমিতি, সিলেট
আমরা সবসময়ই মনে করি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি পূর্ণ স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এই স্বায়েত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ যে দাবি-দাওয়ার বিষয় তা প্রথমেই অভ্যন্তরীণভাবেই মিমাংসা হওয়া উচিত ছিল। সে ক্ষেত্রে সামান্য এবং তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনাগুলো ঘটছে এটি প্রশাসনের ব্যর্থতার সুযোগেই হচ্ছে।
আমরা মনেকরি প্রথমত এই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের আক্রমণ, দ্বিতীয়ত স্বায়েত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে পুলিশকে প্রবেশের অনুমতি প্রদান এবং পুলিশের বর্বর হামলা ইত্যাদি এই পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলেছে। এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে শিক্ষার্থীদের এই প্রচন্ড শীতের মধ্যে আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়া। এই যে অনশনের আজ (গতকাল শনিবার) চতুর্থ দিন পর্যন্ত চলছে অথচ এখনও পর্যন্ত তাদের অনশন ভাঙানো যায়নি। এটা আমরা মনেকরি খুবই উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার বিষয়। আমাদের এখন উচিত হলো এই অনশন ধর্মঘট ভাঙানো। যে কারণে তারা অনশন করছে সে সমস্যার সমাধান করেই বা সে দাবি মেনেই তাদের অনশন ভাঙাতে হবে। আর এর মধ্য দিয়ে পুরো সমস্যার সমাধানই সম্ভব বলে আমি মনে করি।
আরসি-১৬