সিলেট মিরর ডেস্ক
জানুয়ারি ২৪, ২০২২
০৭:১৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ২৪, ২০২২
০৭:১৮ পূর্বাহ্ন
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের প্রায় সবার শরীরে জ্বর। নেতিয়ে পড়া শরীরে ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না তাঁরা। এমন শারীরিক অবস্থার মধ্যেও এ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে অনড় তাঁরা। ইতিমধ্যে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বেশ কয়েকজন অনশনকারী।
আবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আলোচনাতেও সংকট উত্তরণের আভাস পাওয়া যায়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রবিবার (২৩ জানুয়ারি) শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা চলার মধ্যেই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশের আমরণ অনশন পঞ্চম দিনে পড়েছে। অন্যান্য দিনের মতোই এদিনও এক দফা দাবিতে অনড় ছিলেন অনশনকারীরা। তাঁরা বলেছেন, শারীরিক অবস্থা যা-ই হোক, উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তাঁরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ১১ দিন ধরেই উত্তাল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। আন্দোলনের প্রথম ছয় দিনে দাবি পূরণ না হওয়ায় গত বুধবার বেলা তিনটা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন ২৪ শিক্ষার্থী। তাঁদের একজনের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাড়ি চলে গেছেন তিনি। অসুস্থ হয়ে ১৬ জন এখন হাসপাতালে ভর্তি। অপর ৭ জনের শরীরে স্যালাইন পুশ করেছেন চিকিৎসকেরা। এ ৭ জনের শারীরিক অবস্থাও দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে।
দাবি পূরণ হওয়ার লক্ষণ দেখা না যাওয়ায় গত শনিবার রাত আটটা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ শুরু করেছে গণ-অনশন। নতুন এই কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ রবিবার আরও বেড়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের বাসভবনের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মো. আজবাহার আলী শেখ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে শিক্ষার্থীরা এক সংবাদ সম্মেলন করে দ্রুত পদত্যাগ না করলে উপাচার্যের বাসভবনের জরুরি পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এরপর শিক্ষার্থীরা বাসভবনের সামনে মানবশৃঙ্খল তৈরি করেন। এখন থেকে পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া কাউকেই উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, পাঁচ দিন ধরে তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আমরণ অনশন করছেন। এই সময়ের মধ্যে বাসভবনে নির্বিঘ্নে লোকজন যাতায়াত করেছেন। তবে এখন থেকে তাঁরা এটা চলতে দেবেন না। মানবশৃঙ্খলের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা হবে।
এক শিক্ষার্থী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করে যাব, আর তিনি (উপাচার্য) ভেতরে বসে সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে যাবেন, তা হতে দেওয়া হবে না।’ তাঁদের আন্দোলন অহিংস। কিন্তু বাধ্য হয়েই জরুরি পরিষেবা বন্ধের বিষয়ে ঘোষণা দিতে হয়েছে। আমরণ অনশনে যাঁরা যোগ দিয়েছেন, তাঁরা ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে চলে যাচ্ছেন। তবু তাঁরা অনশনে আছেন।
শিক্ষার্থীরা এ সময় জানান, চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে শনিবার দিবাগত রাতে তাঁদের ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হয়েছে। তিনি উপাচার্যের পদত্যাগ প্রসঙ্গে স্পষ্ট কোনো কথা দেননি। বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী অনশন ভেঙে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে তাঁরা অনশন চালিয়ে রেখে আলোচনা করতে চান। মাঝরাতের ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রবিবার দুপুরে আরেক দফা বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।
এ বৈঠকে তাঁদের সুস্পষ্ট কিছু অভিযোগ ও দাবি লিখিতভাবে উপস্থাপন করতে বলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। সে অনুযায়ী তাঁরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। শিক্ষামন্ত্রী যখনই ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে বসতে চাইবেন, তখনই আলোচনা হবে।
তবে রবিবার রাত আটটা পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দফার বৈঠকটি হয়নি।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী শাবিপ্রবিতে এসে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংহতি জানিয়ে রবিবার দুপুরে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগ চেয়ে মানববন্ধন করেছেন।
ইতিমধ্যে শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একটা বিবৃতি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন শাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক একটি আন্দোলন। কেউ যদি নিজেদের স্বার্থ হাসিলে এটি ব্যবহার করতে চায় ও সহিংসতায় জড়ায়, তবে সেটির দায় তাঁরা নেবেন না।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে মশাল মিছিল করে উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন কয়েক শ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে থেকে এ মিছিল শুরু হয়ে উপাচার্যের বাসভবন, গোলচত্বর, প্রক্টর কার্যালয় ঘুরে মুক্তমঞ্চে গিয়ে তা শেষ হয়।
সূত্র: প্রথম আলো
আরসি-০৪