নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২২
০৫:০৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২২
০৫:০৩ পূর্বাহ্ন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিলেটে হাসপাতালে বাড়ছে চাপ। বিশেষ করে চাপ বাড়ছে আইসিইউ শয্যার ওপর। শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের সব আইসিইউ শয্যা ইতোমধ্যে রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অনেকেরই আইসিইউ সাপোর্ট লাগছে। কিন্তু সিলেটের বেশিরভাগ হাসপাতালে এখনও নতুন করে করোনা ইউনিট চালু না হওয়ায় শামসুদ্দিন হাসপাতালই ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে রোগীদের কাছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট করোনা আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৪টি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সবগুলোই ছিল রোগীতে পরিপূর্ণ। এছাড়া সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ৮টি আইসিইউ রয়েছে। তবে এখনও সেখানে করোনার রোগীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়নি। এছাড়া সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮টি আইসিইউ থাকলেও সেগুলোও রোগীতে প্রায় পরিপূর্ণ।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে আইসিইউর চাহিদা বেড়েছে। বর্তমানে যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগের বয়স ষাটোর্ধ্ব। অনেকে জটিল রোগে আক্রান্ত। তাই তাদের অনেকের আইসিইউর প্রয়োজন হচ্ছে। আবার করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনকে হাল্কাভাবে নেওয়ায় সংক্রমিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন না রোগীরা। ফলে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার পর তাদেরকে হাসপাতালে আনা হচ্ছে। এ অবস্থায় তাদেরও প্রয়োজন হচ্ছে আইসিইউ সুবিধার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ জানুয়ারি সিলেটে ৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। ২৫ জানুয়ারি ছিলেন ৯ জন, ২৬ জানুয়ারি ১২ জন, ২৭ জানুয়ারি ১১ জন, ২৮ জানুয়ারি ৭ জন, ২৯ জানুয়ারি ১১ জন, ৩০ জানুয়ারি ১০ জন, ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ছিলেন ১২ জন, আর গতকাল বৃহস্পতিবার আটটা পর্যন্ত সিলেটে ১৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা আক্রান্ত ছাড়াও উপসর্গ নিয়ে অনেক রোগী আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। যারা আইসিইউতে ভর্তি হচ্ছেন তাদের সুস্থ হতে সময় লাগে অনেক। ফলে আইসিইউ শয্যা খালি হতেও সময় লাগে।
২০২০ সালের এপ্রিলে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সিলেটে মে-জুনে শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করে। তবে আগস্টের পর কমতে শুরু করে। ২০২১ সালের প্রথম দুই মাসে সংক্রমণ ছিল নিয়ন্ত্রণে। তবে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে আবারও সংক্রমণ বাড়তে থাকে। গত জুলাইয়ে সংক্রমণ ছিল চূড়ায়।
এ সময় সিলেটে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেই সাধারণ শয্যা, আইসিইউর সঙ্কট তৈরি হয়। আইসিইউ না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তবে আগস্টের পর সংক্রমণ কমতে থাকে। গেল নভেম্বর-ডিসেম্বরে সংক্রমণ নেমে আসে শূন্যের কোঠায়। এরপর সিলেটের প্রায় সব হাসপাতাল করোনা ইউনিটের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তবে মধ্য জানুয়ারি থেকে আবারও সিলেটে বাড়তে শুরু করেছে করোনার সংক্রমণ।
সিলেট করোনা আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মো. মিজানুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা কম হলেও আইসিইউ এর চাহিদা কমেনি। গত কয়েকদিনে তা বেড়েছে কয়েকগুণ। আমাদের হাসপাতালের সব আইসিইউ শয্যা এখন রোগীতে পরিপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে যারা হাসপাতালে আসছেন তারা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। ফলে তাদের আইসিইউর প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু আইসিইউ খালি না থাকলে তো দেওয়া সম্ভব হয় না। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলো অনেক সময় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই রোগীকে পাঠিয়ে দেন। এতে করে সঙ্কট আরও বেশি তৈরি হয়। তারা যোগাযোগ করলে আমরা বলতে পারতাম হাসপাতালের আইসিইউ খালি রয়েছে কি না।’
সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. ফেরদৌস হাসান সিলেট মিররকে বলেন, ‘হাসপাতালে আইসিইউর চাহিদা বেড়েছে। বর্তমানে ভর্তি রোগীদের বড় অংশকেই আইসিইউতে রাখতে হচ্ছে। আমরা এ সপ্তাহেই আরও ১০টি আইসিইউ শয্যা বাড়াব।’
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, ‘হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ৮টি আইসিইউ রয়েছে। শামসুদ্দিনে যেহেতু আইসিইউ শয্যা পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তাই এখন থেকে ওসমানীতে করোনা আক্রান্ত কেউ এলে প্রয়োজনে তাকে আইসিইউ প্রদান করা হবে।’
এনএইচ/আরসি-০১