সিলেটে টিকা গ্রহণে এগিয়ে নারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক


ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২২
০৪:২৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২২
০৪:২৭ পূর্বাহ্ন



সিলেটে টিকা গ্রহণে এগিয়ে নারীরা
# এখনও টিকার বাইরে প্রায় অর্ধেক মানুষ

সিলেটে করোনার টিকা কার্যক্রমের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি সিলেটে শুরু হয় এই কার্যক্রম। প্রথম দিকে ভয়-শঙ্কা থাকলেও পরে বাড়তে থাকে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা। পুরুষের তুলনায় নারীরাই টিকা গ্রহণে এগিয়ে। বর্তমানে ভাটা পড়েছে টিকা গ্রহণের আগ্রহে। এক বছর পরও টিকার বাইরে রয়ে গেছেন বিভাগের প্রায় অর্ধেক মানুষ। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা সংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত রবিবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে প্রথম ডোজ টিকা ৫৯ লাখ ৩১ হাজার ৫২১ জন। বিভাগে মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ১৭ লাখ ৯ হাজার ৪৬৪ জন। অর্থাৎ প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন বিভাগের ৫০ দশমিক ৬৫ শতাংশ মানুষ।

প্রথম ডোজ গ্রহণকারীদের মধ্যে ২৮ লাখ ৮৮ হাজার ৩৪০ জন পুরুষ এবং নারী ৩০ লাখ ৪৩ হাজার ১৮১ জন। বিভাগে দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন ৩৬ লাখ ৯৮ হাজার ৩৩১ জন। দুই ডোজ টিকার আওতায় এসেছেন ৩১ শতাংশ মানুষ। দুই ডোজ টিকার মধ্যে ১৮ লাখ ৪১ হাজার ৩৪৬ জন পুরুষ এবং ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮৫ জন নারী।

সিলেটে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান শুরু হয়। প্রথম দিকে ভয় এবং নানা অপপ্রচারের কারণে করোনা টিকা গ্রহীতার সংখ্যা ছিল কম। তবে পরে বাড়তে থাকে টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা। উপচেপড়া ভিড় ছিল টিকাকেন্দ্রগুলোতেও। গণটিকায়ও মানুষের সাড়া ছিল আশাব্যঞ্জক। 

বর্তমানে টিকা গ্রহণে আগ্রহ কমার অন্যমত প্রধান কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেটে বর্তমানে প্রথম ডোজ টিকার জন্য সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের টিকা দেওয়া হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে যেতে প্রয়োজন হয় ফাইজার, মডার্না, জনসন বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজ টিকা। আবার সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের দুই ডোজ টিকা নেওয়া থাকলেও প্রয়োজন হয় বুস্টার ডোজের।

আরও জানা গেছে, বুস্টার ডোজ টিকা নিতে হয় দুই ডোজ টিকাদানের ৬ মাস পর। বর্তমানে দেশে বুস্টার ডোজ গ্রহণের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ বছর। অর্থাৎ ৪০ বছরের কম বয়সী কেউ বুস্টার ডোজের টিকা গ্রহণ করতে পারবেন না। এ অবস্থায় সিলেট বিভাগে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রথম ডোজ টিকার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধও করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। 

জানা গেছে, সিলেটে প্রথমে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে টিকাদান শুরু হয়। তবে গত বছরের মে-জুনে টিকা সঙ্কটের কারণে বন্ধ হয়ে যায় টিকাদান কার্যক্রম। পরে আসে সিনোফার্ম ও মডার্নার টিকা। তখন সিলেট জেলায় মডার্নার টিকা ও বাকি জেলা ও উপজেলায় সিনোফার্মের টিকা দিয়েই চলে টিকাদান। এরপর সিলেট জেলায় আসে ফাইজারের টিকা। বর্তমানে বিভাগে প্রথম ডোজের জন্য চলছে সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের টিকা। আর শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে ফাইজারের টিকা। এছাড়া গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে সিলেটে শুরু হয় বুস্টার ডোজের টিকা। বুস্টার ডোজ হিসেবে বর্তমানে মডার্নার টিকা দেওয়া হচ্ছে। 

সিলেট বিভাগে প্রথম ডোজ হিসেবে এ পর্যন্ত সিনোভ্যাকের টিকা পেয়েছেন ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৮২৯ জন, সিনোফার্মের টিকা পেয়েছেন ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৮০৯ জন, মডার্নার টিকা পেয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ১২৩ জন, ফাইজার পেয়েছেন ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৯১১ ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা পেয়েছেন ৩ লাখ ২০ হাজার ৮৪৯ জন। তবে ফাইজারের টিকার বেশিরভাগই পেয়েছেন ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা। 

গত ৩ ফেব্রুয়ারি কোভিড-১৯ টিকাদানের সিলেট বিভাগীয় রিভিউ মিটিংয়ে এসে স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা উন্নয়ন) প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগে জাতীয় পর্যায়ের চেয়ে সিলেটের অবস্থান অনেক নিচে। এ অবস্থায় আগামী মার্চের মধ্যে সিলেটের ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার নির্দেশ দেন তিনি। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সিলেট জেলায় প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন ২১ লাখ ১৭ হাজার ৭৩ জন। দুই ডোজ পেয়েছেন ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৯০০ জন। সুনামগঞ্জে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৭০৫ জন। জেলায় দুই ডোজ পেয়েছেন ৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭০৫ জন। হবিগঞ্জে প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ১২ লাখ ৭২ হাজার ৯৯১ জন।

দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪৫ জন। মৌলভীবাজার জেলায় টিকা পেয়েছেন ১২ লাখ ৩ হাজার ৭৫২ জন। দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৩৮১ জন। এ পর্যন্ত বিভাগে বুস্টার ডোজের টিকা পেয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৭০২ জন। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেছেন, ‘আগামী মার্চের আগে সিলেটের ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে যারা এখনও টিকা নেননি তাদের তথ্য বের করে তাদের টিকার আওতায় আনা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত ফাইজার বা মডার্নার টিকার মজুত নেই। ফাইজার বা মডার্নার যে টিকা আছে তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার ডোজের টিকা দিতে হবে। ফলে প্রথম ডোজের জন্য বর্তমানে ফাইজার বা মডার্নার টিকা সরবরাহের কোনো সম্ভাবনা নেই।’

এনএইচ/আরসি-১৩