লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক নির্মাণ বন্ধে প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক


ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২
০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২
০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন



লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক নির্মাণ বন্ধে প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা
নগরে গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা

বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্কের (বেন) প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘মৌলভীবাজারের লাঠিটিলায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সাফারি পার্ক নির্মাণের প্রকল্প বন্ধ করতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। বনবিধ্বংসী এ কার্যক্রম নিরুৎসাহিত করতে হবে। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে।’

তিনি বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সিলেটের একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট আয়োজিত ‘বিপন্ন লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চলসহ বৃহত্তর সিলেটের বন ও জীববৈচিত্র’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা করেন। 

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের উন্নয়নধারায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে প্রকৃতিসচেতনতার অভাব রয়েছে। তেমনি প্রকল্পবাজির প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি। মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সাফারি পার্ক করার উদ্ভট চিন্তা তারই প্রতিফলন। সাফারি পার্ক প্রকল্পের মাধ্যমে যারা সুবিধা পাবে, তারাই সরকারকে চাপ প্রয়োগ করছে। ‘

ড. নজরুল বলেন, ‘লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চলসহ দেশের বনাঞ্চল রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন ব্যক্তিদের রাজনৈতিকভাবে শক্ত হতে হবে; যাতে সরকার তাদের দাবি অবহেলা করতে না পারে। মধ্যমেয়াদে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার দাবিতে গণআন্দোলনে রূপ দিতে হবে।’

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পাথারিয়া হিল রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত লাঠিটিলায় দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে পরিবেশ আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ বক্তব্য দেন। বৈঠকে সরকারের এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানানো হয় এবং দ্রæত এ প্রকল্প থেকে সরে আসার আহবান জানানো হয়। 

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, ‘সম্পদ রক্ষায় আমাদের প্রাণ দেওয়ার ঐতিহ্য আছে। ভাষা সম্পদ রক্ষায় আমরা প্রাণ দিয়েছি ২১ ফেব্রæয়ারিতে। এবার যে কোনো সম্পদ রক্ষার প্রয়োজনে প্রাণপণ লড়াই করতে হবে। ‘

বাপা’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য শাস্তি না দিয়ে বনাঞ্চল রক্ষার নামে সাফারি পার্ক নির্মাণের প্রকল্প করা হচ্ছে। এ জন্য বনমন্ত্রীর লজ্জা পাওয়া উচিত। ‘

গোলটেবিল বৈঠকের শুরুতে সিলেট বিভাগের বনাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন, বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম। পরে লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র নিয়ে একটি গবেষণাধর্মী বক্তব্য উপস্থাপন করেন বন্যপ্রাণী গবেষক ফরহাদ আহসান পাভেল। 

তিনি জানান, পাথারিয়া হিল রিজার্ভ বিপন্ন এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রাণী যেমন বেঙ্গল টাইগার, ভোঁদড়, বনকুকুর, হনুমান, অজগর সাপ, হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ, হাতি এবং মদনটাক প্রাণীর বিচরণকেন্দ্র। এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক হলে এসব প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে। 

এসএইচ/আরসি-০৭