নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২
০৫:১৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২
০৫:১৭ পূর্বাহ্ন
দেশে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারির পর বন্ধ হচ্ছে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ প্রদান কার্যক্রম। এর আগেই মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। সেই হিসেবে সিলেটে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ দিনে ১০ লাখ মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগে মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ১৭ লাখ ৯ হাজার ৪৬৪ জন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি টিকা দেওয়ার পর সিলেট বিভাগে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৬১ লাখ ৩ হাজার ১৩১ জন। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫২ শতাংশ মানুষ প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। তবে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। ৮১ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৪ জনকে টিকা দিতে পারলেই সিলেট বিভাগের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ টিকার আওতায় আসবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এখনও টিকার আওতায় না আসা ২০ লাখ মানুষের মধ্যে ১০ লাখই প্রবাসে বা সিলেটের বাইরে অবস্থান করছেন। তাই আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারির আগে প্রথম ডোজের বাকি থাকা ১০ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে।
টিকার আওতায় আনতে সিলেট বিভাগের চার জেলার প্রতিটি এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মীরা। প্রত্যেক বাসার লোকসংখ্যা কত, কতজন টিকা নিয়েছেন, কতজন টিকার বাইরে রয়েছেন, কতজন প্রবাসে আছেন এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি গ্রামে গ্রামে অস্থায়ী কেন্দ্র স্থাপন করে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিভাগে ৬২ লাখের বেশি মানুষকে প্রথম ডোজ টিকার আওতায় আনা হয়েছে। আমাদের হিসাবে আরও ২০ লাখ মানুষকে টিকা দিতে হবে। কারণ মোট জনসংখ্যার সবাইকে তো টিকা দেওয়া হচ্ছে না। ১২ বছরর উর্ধ্বের জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে এর মধ্যে ১০ লক্ষাধিক আছেন প্রবাসে বা সিলেটের বাইরে। তাই বাকি ১০ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারির পর দেশে প্রথম ডোজ বন্ধ হয়ে যাবে তাই বাকি থাকা ১০ লাখ মানুষকে আগামী ১০ দিনের মধ্যেই টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। আশাকরি আমরা তা পারব।’
ডা. হিমাংশু বলেন, ‘টিকার তথ্য সংগ্রহে ডোর টু ডোর কাজ চলছে। কয়েকটা বাড়ির তথ্য নিয়ে তাৎক্ষণিক সেখানেই টিকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একদিনে এক কোটি টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ দিন সিলেট বিভাগে কত মানুষকে টিকা দেওয়া হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের টিকাদান কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি কত মানুষ টিকার বাইরে রয়েছেন তাদের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য পাওয়ার পর বুঝতে পারব ওইদিন কতজনকে টিকা দেওয়া হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সিলেট জেলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ২১ লাখ ৯১ হাজার ১৯৫ জন। দুই ডোজ নিয়েছেন ১৪ লাখ ৬০ হাজার ১৭০ জন। মোট জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশ প্রথম ডোজ আর ৩৫ শতাংশ দুই ডোজ পেয়েছেন। সুনামগঞ্জে ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৬ জন প্রথম ডোজ ও ১০ লাখ ১ হাজার ৩৬৫ জন দুই ডোজ নিয়েছেন। মোটর জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশ প্রথম ডোজ ও ৩৪ শতাংশ দুই ডোজ গ্রহণ করেছেন।
হবিগঞ্জে ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪১৭ জন প্রথম ডোজ এবং ৯ লাখ ৬ হাজার ৩৯১ জন দুই ডোজ নিয়েছেন। শতাংশের হিসাবে প্রথম ডোজ ৫২ শতাংশ ও দুই ডোজ নিয়েছেন ৩৬ শতাংশ মানুষ। হবিগঞ্জে ১২ লাখ ৪২ হাজার ৭২৩ জন প্রথম ডোজ ও ৮ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬৪ জন দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। জেলায় মোট জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশ প্রথম ডোজ এবং ৩৯ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ টিকার।
সিলেটে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান শুরু হলে প্রথম দিকে ভয় এবং নানা অপপ্রচারের কারণে করোনার টিকা গ্রহীতার সংখ্যা ছিল কম। পরে বাড়তে থাকে টিকা গ্রহণকারী সংখ্যা।
এদিকে, ৮ এপ্রিল থেকে বিভাগে শুরু হয় দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রদান। তবে টিকা সঙ্কটের কারণে গত বছরের মে-জুনে বন্ধ হয়ে যায় টিকা কার্যক্রম। পরে আগস্ট থেকে আবারও টিকাদান শুরু হয়।
আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারির পর করোনার টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র নেই এমন ব্যক্তিরাও ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরাসরি কেন্দ্রে গিয়ে টিকার প্রথম ডোজ নিতে পারবেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এনএইচ/আরসি-০১