শাবিপ্রবিতে পুলিশি হামলায় আহত সজল কুন্ডুর আর্তনাদ

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি


ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২
১২:৪৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২
১২:৪৩ পূর্বাহ্ন



শাবিপ্রবিতে পুলিশি হামলায় আহত সজল কুন্ডুর আর্তনাদ

‘আমার বাবা মৃত, মা অসুস্থ, অসচ্ছল পরিবার, সম্প্রতি কিছু ঋণ করে আমি সামান্য ব্যবসা শুরু করেছিলাম,পড়াশোনা শেষ করে হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই চাকরির চেষ্টা শুরু করতাম। স্বপ্ন ছিল আমার উপার্জনে পরিবারে সুদিন আসবে। একটি দিনের ব্যবধানে যে আমার স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে গেল।’

কথাগুলো বলেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আন্দোলনে পুলিশের হামলার আহত শিক্ষার্থী সজল কুন্ড। আজ শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ আর্তনাদ প্রকাশ করেছেন তিনি।

সজল কুন্ড বলেন, আমার সারা শরীরে অসংখ্য আঘাত ও স্প্রিন্টার নিয়ে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণায় সামনের বিপদসংকুল দিনগুলো কীভাবে কাটবে তা নিয়ে শঙ্কায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে, এর দায় কে নেবে?

গত ১৬ জানুয়ারি নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর যে  পুলিশী হামলায় আমার শরীরে শটগান ও সাউন্ড গ্রেনেডের অন্তত ৮৩ টি স্প্রিন্টার বিদ্ধ হয়। এছাড়া পুলিশের লাঠিচার্জে শরীরের বহু স্থানে মারাত্মকভাবে আঘাত পাই। আহত হওয়ার পর কিছুদিন সিলেটে এবং পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলাম। এরমধ্যে আমার হাতে একটি অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়, যাতে ডান হাতের গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুর আশপাশের স্পর্শকাতর অঞ্চল থেকে ৪টি স্প্রিন্টার অপসারণ করা হয়। 

প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এখনো আমার মাথা, ঘাড়, বুক, পেট-পীঠ, হাতপাসহ শরীরে বেশ কিছু স্থানে ৭৫টিরও বেশি স্প্রিন্টার রয়েছে। প্রাণঘাতী সংক্রমণের আশংকা থাকায় চিকিংসকেরা আরো অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি আপাতত নিচ্ছেন না।  তাদের ভাষ্য অনুযায়ী আমাকে হয়তো এসব স্প্রিন্টার শরীরে নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে। যা থেকে ভবিষ্যতে নতুন নতুন শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কাও অমূলক নয়। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে সম্মানিত চিকিৎসকগণ অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আমাকে যে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। 

হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, কিছুদিনের ঘটনাপ্রবাহ অামাকে অত্যন্ত মর্মাহত করেছে। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সাথে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন আমাদের সমস্ত দাবির ব্যাপারে অচিরেই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। 

তিনি বলেছিলেন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুটি মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের যে সমস্ত ব্যাংক ও অনলাইন লেনদেনের অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল তা অচিরেই খুলে দেয়া হবে। কিন্তু তাঁর আশ্বাসের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত মামলাসমূহ তোলার বা অ্যাকাউন্টগুলো খুলে দেয়া হয়নি। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর স্পষ্ট আশ্বাসের পরও এসব বিষয়ে এমন দীর্ঘসূত্রতা আমাকে প্রচণ্ড হতাশ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, উপাচার্য নির্লজ্জভাবে মিথ্যাচার করেছেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমাকেও ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি বলেছেন "সত্যের জয় হয়েছে, মিথ্যা পরাভূত হয়েছে"! ১৬ ই জানুয়ারি যে নারকীয় হামলা হয়েছে তার একজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বলতে চাই আমার কাছে সত্য হচ্ছে আমার শরীরে এখনো বিঁধে থাকা স্প্রিন্টারগুলো। আমি একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের মিথ্যাচার ও মনগড়া বক্তব্যের প্রতিবাদ করছি। 

পরিশেষে তিনি বলেন, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনায় উত্থাপিত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী আমাকে চাকরি প্রদান। আমার ভবিষ্যতের সমস্ত চিকিৎসা খরচ সরকারের পক্ষ থেকে বহন ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি ছিল। আমাকে চাকরি প্রদানের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী মৌখিক আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত আমার ভবিষ্যতের চিকিৎসা খরচ বহন ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট আশ্বাস পাইনি। শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকটি দাবি মেনে নিয়ে আমাদের জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে তা থেকে সবাইকে মুক্তি দেয়া হোক। পরিশেষে আমি আমার সতীর্থ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে সমস্বরে মহামান্য আচার্য এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই আবেদন জানাচ্ছি।

এইচএন/আরসি-১৯