সিলেটের বাজারে আগুন, টিসিবিতে ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক


ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২
০৫:২৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২
০৫:২৯ পূর্বাহ্ন



সিলেটের বাজারে আগুন, টিসিবিতে ভিড়
# নির্ধারিত সময়ের কয়েকঘন্টা পরে গাড়ি আসা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে # গাড়ি আসতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ

লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) পণ্য বিক্রির ট্রাক সেলের জন্য অপেক্ষা করছেন। গাড়ি আসতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তারা। ভঙ্গুর লাইনে নিজের কাঙ্খিত স্থানে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা। সময়ের যথাপোযুক্ত ব্যবহার করতে না পারলে ৩০ থেকে ৪০ জনের পেছনে গিয়ে আবারও লাইনে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু শত কষ্ট সহ্য করেও টিসিবির পণ্য নেওয়ার আকুতি যেন তাদের চোখে ভাসছে। 

বাজারে দ্রব্যমূল্যের আকাশচুম্বী দাম থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে টিসিবির পণ্যের জন্য সেই ভোর থেকে লাইনে দাঁড়ান নানা বয়সী মানুষ। এসময় তালতলা রেজিস্টারি মাঠ এলাকায় আসমা বানু এক পঞ্চাষোর্ধ্ব নারী বলেন, ‘সকাল থেকে এসে দাঁড়িয়ে আছি। বেলা ১২টা বাজলেও টিসিবির গাড়ির কোন দেখা নেই। 

বাজারে না গিয়ে টিসিবিতে কেন ভরসা করছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজারে গেলে তেলে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। ২ লিটার তেল ৩২০ টাকা। টিসিবির গাড়ি থেকে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া পেঁয়াজ, চিনি ও মসুর ডালও বাজারের চেয়ে কম মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। এতে কিছুটা কষ্ট হলেও কম দামে কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছি।’

খুচরা নিত্য পণ্যের বাজার ও টিসিবির পণ্য মূল্য তদারকি করে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে টিসিবি তা দিচ্ছে প্রতি লিটার ১১০ টাকায়। একইভাবে খুচরা বাজারে চিনি প্রতি কেজি ৭৫ টাকা, ট্রাক সেলে ৫৫ টাকা। ৬৫ টাকা দামে বিক্রিত মসুর ডাল খুচরা বাজারে বিক্রয় হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেয়াজ ৫০ টাকা। টিসিবিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি। টিসিবির প্রতিটি পণ্য ১ কেজি করে ও ২ লিটার তেল কিনতে খরচ হচ্ছে ৩৭০ টাকা। কিন্তু তা বাজার থেকে কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে ৫৪০ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা। মূলত ১৭০ টাকা সঞ্চয়ের জন্য দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। বাজারের চেয়ে কম দামে পণ্য কিনতে পারায় ট্রাক সেলে ভরসা করছেন তারা। 

নগরের বিভিন্ন টিসিবির ট্রাক সেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে অপেক্ষমাণ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দুপুর ১২টা বাজেও টিসিবির ট্রাক সেলের দেখা নেই। এসময় দেখা গেছে, সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকে হাঁপিয়ে গেছেন। অনেকে ফুটপাতে পাশে বসে বিশ্রাম করছেন। পাশের এক নারী অন্য এক নারীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন। তারা নিকট আত্মীয় নাকি? এমন প্রশ্নে সাহার বলেন, ‘আমি লাইনে আছি এটা জানান দিতে সামনে দাঁড়ানো আপার হাত ধরে রেখেছি।’

বেলা সোয়া ১২টায় ট্রাক সেল তালতলা এলাকায় পৌঁছালে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। পণ্য নেওয়ার উদ্যমে আবারও দাঁড়িয়ে গেছে লাইনে। 

ডিলারেরা বলছেন, ‘ক্রেতাদের চাহিদামত পণ্য দেওয়া হচ্ছে। কারণ বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি থাকায় ক্রেতারা সকল পণ্য নিজ প্রয়োজনেই ক্রয় করছেন। আগে কেউ চিনি নিতে চাইলে পেঁয়াজ নিতে চাইত না। আবার অনেকে শুধু তেলের জন্যই দাঁড়াতেন। কিন্তু এখন তা হচ্ছে না। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেশি হওয়াতে টিসিবির ট্রাক সেলে ভরসা করছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। 

এদিকে সিলেটে টিসিবির পণ্য কিনতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় ক্রেতাদের। নির্ধারিত সময়ের কয়েকঘন্টা পরে গাড়ি আসা যেন একটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। পণ্য কিনতে আসা ক্রেতাদের ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এসব ক্রেতাদের বেশিভাগই নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। এদিকে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য না আসায় ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য না পেয়ে শূন্য হাতে ফিরে যেতে হয় অনেককে। এতে করে কাজের সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপশি সীমাহীন দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে। 

আগে নগরের ৬টি স্থানে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হলেও বর্তমানে করা হচ্ছে তিনটি স্থানে। ফলে অনেক দূর থেকে ক্রেতারা টিসিবির পণ্য কিনতে আসেন। 

এ বিষয়ে টিসিবির কার্যক্রম মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা সিলেটের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর সিলেট মিররকে বলেন, ‘শেরপুর আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে পণ্য খালাস করে নিয়ে আসতে অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। টিসিবির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি জেলা সমন্বয় সভা হবে। সেখানে কিভাবে সমস্যা নিরসন করা যায় তা আলোচনা করা হবে।’ 

আর টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. ইসমাইল মজুমদার বলেন, ‘টিসিবির পণ্যের চাহিদা অনেক বেশি। তবে পর্যাপ্ত পণ্য আছে। ধারাবাহিকভাবেই আমাদের কার্যক্রম চলছে। এছাড়া খুব দ্রুতই টিসিবির পণ্যের দায়িত্ব জেলা প্রশাসকদের কাছে দেওয়া হবে। সেখান থেকে পণ্য সংগ্রহ করে ডিলাররা বাজারে বিক্রি করবেন।’

আরসি-০১