নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২
০২:০৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২
০২:০৪ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশে মঞ্চনাটকের চর্চা এখনও ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো একটি বিষয়। এর মধ্যেও করোনাকাল কাটিয়ে জ্বলছে মঞ্চের আলো। ছোট-বড় দলগুলোও ফের ফিরেছে মহড়ায়। আর তার মধ্য দিয়ে প্রাণ ফিরছে সিলেটের নাটক পাড়ায়। আজ থেকে শুরু হচ্ছে পক্ষকালব্যাপী সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের ‘একুশের আলোকে নাট্য প্রদর্শনী’।
আগামীকাল শুক্রবার প্রদর্শীত হবে চে’র সাইকেল নাটকটি। নাটকটি লিখেছেন প্রখ্যাত নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ, নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্য নির্দেশক ও মঞ্চ পরিকল্পক ফয়েজ জহির। ফয়েজ জহির প্রায় এক যুগ আগে ‘বাঙলা থিয়েটার’ এ নির্দেশনা দিয়েছিলেন চে’র সাইকেল। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ফের চে’র সাইকেল নিয়ে সিলেটে এসেছেন তিনি।
ফয়েজ জহির বলছেন, ২০০৯ সালে ‘বাঙলা থিয়েটার’ এ আমার দ্বিতীয় নির্দেশনা ছিল চে’র সাইকেল। সময় গড়িয়েছে অনেক। প্রায় এক যুগ পর কথাকলি সিলেট’র আমন্ত্রণে চে’র সাইকেল নির্দেশনায় নতুন ভাবনা ও প্রশ্ন তাড়িত করে। এরই মধ্যে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী কত না পট পরিবর্তন হয়েছে। হয়েছে আমাদের দেশেও। তারই নিরিখে আবার নতুন করে ভাবতে হয়। সময় বদলে যায় কিন্তু পৃথিবীতে সা¤্রাজ্যবাদ আর পুঁজিবাদের আগ্রাসন থেমে নেই- বরং উপর্যুপরি বেড়েছে। তার সঙ্গে নতুন মাত্রায় যুক্ত হয়েছে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ। পৃথিবীতে সত্যকে অনুধাবন করা ও ধরে রাখার মানুষ খুব বেশি নেই- একথা সমানভাবে আজও প্রযোজ্য। তাই নাটকটি প্রাসঙ্গিক ও সময় উপযোগী হয়ে উঠে।’
নাটকটি প্রসঙ্গে ফয়েজ জহির বলেন, ‘রাষ্ট্রের শাসকচক্র যে বিধিনিষেধের বেড়াজাল তৈরি করেছে তাতে বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ হয়েছে। তৈরি হয়েছে এক ভয়ের সংস্কৃতি। তবুও তার বিপরীতে জীবনকে তুচ্ছ করে কিছু মানুষ এগিয়ে আসে। এই নাটকের চরিত্রগুলো যেন সেই ভয়ের সংস্কৃতি থেকে পরিত্রাণের জন্য পথের অনুসন্ধান করছে।
২৫ শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চে উঠবে ফয়েজ জহির নির্দেশিত চে’র সাইকেল নাটকটি। এতে অভিনয় করেছেন, নীলাঞ্জন দাশ টুকু, লিপি রানী মোদক, প্রশান্ত দে প্রলয়, হাবিবা ফেরদৌস বিন্তু, আমিরুল ইসলাম সুমন, সুজন আচার্য্য শ্রাবণ, আব্দুল মালিক, অরিন্দম দত্ত চন্দন, শামসুল বাসিত শেরো।
ফয়েজ জহির বলেন, ‘সত্যকে লালন করা মানুষের খুব অভাব রয়েছে। আজকে যে আমরা বলছি সাম্রাজ্যবাদ আর পুজিঁবাদের দৌরাত্ম বাড়ছে, মৌলবাদী সন্ত্রাস বাড়ছে, যাই বলি না কেন সবকিছুর জন্যেই দরকার সত্যের পক্ষে লড়াই করা মানুষের। এই মানুষগুলো হতাশ নয়। তারা স্বপ্ন দেখে সত্যিকারভাবেই একটা পরিবর্তন আনতে পারব।’
বাইশ দিনের মহড়া শেষে মঞ্চে নাটকটি উঠার আগে প্রত্যাশার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা এক ধরনের থিয়েটার করে করে অভ্যস্ত। এখন এ নাটকের তিনটি স্তরে অভিনেতাদের বিচরণ ও বদলে যাওয়া, এটা বেশ কঠিন কাজ। এর জন্য শারীরিক ও মানুষিকভাবে তৈরি হতে হয়। সে বিষয়গুলোতে আমাদের কিছু কমতি রয়ে গেছে।
এখনকার নাটকগুলো চমকপ্রদ, অভিনয় সমৃদ্ধ নয়, মঞ্চ নাটক নিয়ে এমন অভিযোগ মেনে নিলেন ফয়েজ জহির। তিনি বলেন, এখনকার নাটকগুলোতে চটুল বিষয়গুলো চলে এসেছে। খুব তাড়াতাড়ি আমরা বাহবা পেতে চাই। পরিশ্রম করে একটা জায়গায় দাঁড়ানো, একটি বিষয়কে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া, সেই জায়গাটার কমতি আছে। শুধু তাই না বিষয় বা নাটক নির্ধারণেও কিছু কাজ করতে হয়, আমরা তা না করে সহজ পথে হাঁটতে চাই। এই জায়গা থেকে আমাদের মঞ্চ নাটককে বের করে নিয়ে আসতে হবে। কারণ আমাদের দর্শক কিন্তু অভিনয় সমৃদ্ধ নাটক দেখতে চায়।
বিএ/আরসি-১৬