নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
০৮:০৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
০৮:০৪ পূর্বাহ্ন
রোমানিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নামে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে আমিন রহমান ট্রাভেলসের মালিক আমিন রহমানের বিরুদ্ধে। গতকাল শনিবার দুপুরে জিন্দাবাজারে আমিন রহমান ট্রাভেলসে গিয়ে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, রোমানিয়ায় যেতে আগ্রহীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় আমিন রহমান ট্রাভেলস। ওই বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করেন অনেকে। তখন ট্রাভেলসের মালিক আমিন রহমান জানান, রোমানিয়ায় যেতে হলে সাড়ে ৫ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা লাগবে। প্রথমে বুকিং মানি হিসেবে ৫০ হাজার টাকা ও ওয়ার্কপারমিট আসার পর দিতে হবে আরও ৫০ হাজার টাকা। বাকি টাকা দিতে হবে ভিসা আসার পর। স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি করে টাকা নেওয়া হয়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রোমানিয়ায় ফ্লাইট শুরুর কথা ছিল।
সিলেট থেকে ১০ থেকে ১৫ জন এ দিন ঢাকায় যান। কিন্তু বিকেল ৪টা থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দেন আমিন রহমান। পরে অনেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাদের পাসপোর্টে লাগানো ভিসা ছিল নকল। ভিসা হয়েছে বললেও অনেককে পাসপোর্ট ফেরত দেননি আমিন।
এ ঘটনায় শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ট্রাভেলসে গিয়ে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীরা। এ সময় আমিন রহমানকে পাওয়া যায়নি। বিক্ষোভকারীরা জানান, শতাধিক মানুষের কাছ থেকে রোমানিয়া পাঠানোর কথা বলে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আমিন রহমান তাদেরকে জানিয়েছেন, তিনি দুবাইয়ে আছেন। তবে ভুক্তভোগীরা মনে করছেন অভিযুক্ত আমিন দেশেই আছেন। দুবাই যাওয়ার কথা বলে গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি।
নগরের শাহী ঈদগাহ এলাকার ইয়াছিন মোহাম্মদ আরাফাত সিলেট মিররকে বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী আমি সাড়ে ৫ লাখ টাকা আমিনের হাতে তুলে দেই। আমাকে ওয়ার্কপারমিটের কাগজ দেখিয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠায়। সেখান থেকে ট্রেনিং শেষে চলতি মাসের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে আমার ফ্লাইট বলে জানায় আমিন। তবে আমাকে পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি। ভিসার শুধু স্ক্যান কপি পাঠিয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিমানবন্দরে গিয়ে বেলা দুইটার দিকে আমিনের সঙ্গে কথা হয়। তখন সে বলেছিল আমাদের করোনা টেস্ট করানো হবে কিছুক্ষণ পর। কিন্তু বিকেল চারটা থেকে তার ফোন বন্ধ পাই। তারপর আর ফোন খুলেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকায় এভাবে এসে ফিরে গেছেন অনেকেই। আমার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে অন্তত ৮ জনের। যাদের আমিন রোমানিয়ার ফ্লাইটের কথা বলে ঢাকা বিমানবন্দরে এনেছিল। এছাড়া আমার মাধ্যমে আরও বেশ কয়েকজন আমিনের কাছে সাড়ে ৫ লাখ টাকা করে দিয়েছিল। কিন্তু এখন শুনছি ভিসাসহ সব কাগজপত্র নাকি জাল।’
আরাফাত বলেন, ‘আমার পুরো টাকাই ঋণে আনা। এছাড়া আমার মাধ্যমে যারা আমিনের কাছে টাকা দিয়েছে তাদের মধ্যে একজন তার বাবার পেনশনের টাকা ভেঙ্গে এনেছে। কেউ গ্রামে থাকা গরু বিক্রি করে টাকা এনে দিয়েছে। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।’
আরেক ভুক্তভোগী নগরের বালুচর এলাকার সানোয়ার হোসেন মাহি বলেন, ‘শনিবার সকালে রোমানিয়ার ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। আমি বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় যাই। ওইদিন বিকেলে আমিনের সঙ্গে আমার সর্বশেষ যোগাযোগ হয়। তারপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ। আমি বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা পাঠাই। এর আগে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। আমার সাড়ে ৫ লাখ টাকা শেষ হয়ে গেল। আমার ভাই লোন তুলে এই টাকা দিয়েছিলেন।’
ভুক্তভোগী মাহি বলেন, ‘আমিন আমাদের যেসব কাগজ দিয়েছে সেগুলো জাল না সঠিক তা প্রথমে বুঝার সুযোগ ছিল না। কারণ এসব কাগজ তো অনলাইনে দেখা যায় না। আমি এখন কী করব বুঝতে পারছি না। তবে, সিলেটে এসে মামলা করব বলে ঠিক করেছি।’
এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে আমিন রহমান ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী আমিন রহমানের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে মারওয়া বেগম চৌধুরী নামের ট্রাভেলসে কর্মরত এক কর্মকর্তা সিলেট মিররকে বলেন, ‘আজ অনেকেই আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। তাদের অনেকের সঙ্গে আমিন রহমানের কথা হয়েছে। এ ছাড়া আমার সঙ্গেও কথা হয়েছে। আমাকে আমিন রহমান বলেছেন, একটা সমস্যা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যা নিরসন করে ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে দেবেন অথবা টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’
আমিন রহমান কোথায় আছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তিনি কোথায় আছেন তা আমার জানা নেই। হোয়াটস অ্যাপ নাম্বারে উনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।’
কোতোয়ালি থানার পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ সিলেট মিররকে বলেন, ‘এ বিষয়ে শনিবার ৪ থেকে ৫ জন থানায় এসেছিলেন। তারা আমাকে জানান অভিযুক্ত আমিন রহমান একটি বাসায় লুকিয়ে আছেন। সেই বাসা তল্লাশি করতে হবে। আমি বলেছি বাড়ি তল্লাশি করতে আদালতের অনুমতি লাগবে। তবে তারা যদি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এনএইচ/আরসি-০৭